টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সকে ঘিরে স্বার্থান্বেষীদের রোষানলে পড়েছি: তৈয়্
Published: 7th, July 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব অভিযোগ করেছেন যে, টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছেন তিনি।
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, বিটিআরসি এবং ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ বর্তমানে একটি নতুন প্রজন্মের টেলিকম লাইসেন্স পলিসি নিয়ে কাজ করছে, যা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) এবং জিএসএমএসহ প্রত্যেক আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার প্রধানতম নির্দেশনা। এখানে বিশ্বে অপ্রচলিত, এরকম লাইসেন্সসমূহকে ডিসকন্টিনিউ করার এবং বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার একটা চেষ্টা হচ্ছে। এর পর থেকেই কতিপয় মিডিয়া এবং স্বার্থান্বেষী কমিউনিকেশন মাফিয়াদের রোষানলে পড়েছি।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক লং ডিসট্যান্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসেস (আইএলডিটিএস) নীতি চালু করে। এ নীতি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) কার্যক্রমের সুযোগকে ব্যাপকভাবে সীমিত করে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার মূলত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে একের পর এক লাইসেন্স প্রদান করে, যারা এখরো সক্রিয় আছে।”
টেলকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসির খসড়া সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, সম্প্রতি ‘টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫’ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয়েছে। নতুন খসড়ায় সেগুলোর সুস্পষ্ট উত্তর রয়েছে, যেমন: এসএমইদের (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা) প্রটেকশন করা, আইএসপিদের যথাসম্ভব ডিরেগুলেট (নিয়ন্ত্রণমুক্ত) করে লাইট টাচ লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা তাদেরকে (আইএসপি) পুরোপুরি ডিরেগুলেট (নিয়ন্ত্রণমুক্ত) চেয়েছিলাম, কিন্তু তারাই (আইএসপি) আবার এটা চাচ্ছে না। কারণ, তারা (আইএসপি) লাইসেন্সের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধাটা পেতে চায়। সেজন্য তারা পুরোপুরি ডিরেগুলেট হতে চায় না। তাদের অনুরোধেই আমরা একটা লাইট টাচ লাইসেন্সের আওতায় তাদের এনেছি। এছাড়া, ডেটা সেন্টার, ক্লাউড পলিসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে আমরা ডিরেগুলেশনে গিয়েছি।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ডেটা স্ট্রাকচারের অনেকগুলো স্তরে সামান্য বিনিয়োগ করে, সামান্য ভ্যালু অ্যাডিশন করে যারা অনেক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল, তাদেরকে আমরা বাদ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছি। অর্থাৎ সামান্য কিছু টাকার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেপ্লয় করে যারা অনেক টাকা সরিয়ে নিচ্ছিল এই খাত থেকে, আমরা সেই লাইসেন্সগুলো যৌক্তিকভাবে রিমুভ করার চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশে যে পলিসি আছে, এ ধরনের পলিসি বিশ্বের কোথাও নেই, দাবি করে তিনি বলেন, আইসিএক্স নামে যে লাইসেন্সগুলো আছে বা নিক্স নামে একটা লাইসেন্স আছে, এই ধরনের লাইসেন্স বিশ্বের কোথাও নেই। এগুলো হয়েছে ২০০৭-২০০৮ সময়ে বিটিআরসির মনিটরিংয়ের অক্ষমতা ছিল, সেই কারণে কোম্পানিগুলো চুরি-জালিয়াতি করেছে। সেগুলোকে অজুহাত করে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সে ধরনের স্তরগুলো যারা কোনো ভ্যালু অ্যাড করে না, তাদের সরিয়ে দিয়ে আমরা লাইসেন্সিং স্ট্রাকচারটা আধুনিক করছি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আইসিএক্স স্তর থাকার জন্য গ্রাহকের প্রতি কলে প্রতি মিনিটে ৫ পয়সা করে খরচ বেড়ে যায়। আমরা এমএনওদের অনুরোধ জানাব, যেন তারা গ্রাহকের কলের রেট অ্যাডজাস্ট করেন। কারণ, সাপ্লাই ডিমান্ড কার্ভ ইকোনমিকসের একটি বেসিক ল। এভাবে আমরা টেলিকম পলিসি ২০২৫ এর মাধ্যমে প্রতিটি স্তরের সুবিধা গ্রাহকদের কাছে দৃশ্যমান করতে চাই।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আইটিইউ (আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন) এবং জিএসএমএ (মোবাইল অপারেটরদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম) একটা সহজ লাইসেন্সিং ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের সরকারকে ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করেনি। যেহেতু, আমাদের সংস্কারের মন-মানসিকতা আছে, সেজন্য আমরা বিষয়টাতে গুরুত্ব দিচ্ছি।
বিগত সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর ‘আইওএফ’ (IGW Operators Forum) নামে একটি কার্টেল গঠন করে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তৎকালীন সময়ে বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আইওএফ-কে বৈধতা দিতে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু রাখে। তা প্রায় ১২ বছরব্যাপী পরীক্ষামূলকই ছিল। মোবাইল অপারেটরদেরকে সরাসরি আন্তর্জাতিক কল আনতে নিষিদ্ধ করা হয়, যেখানে আইওএফগুলো প্রতি মিনিটে ০.
দুদকে হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ বলেন, ডিও লেটার দিয়ে দুদকের তদন্ত থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অতিসম্প্রতি একটি পত্রিকায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। বিষয়টি আদৌ সত্য নয়। মূলত, সেই ডিও লেটার দিয়ে দুদকের আন্তরিক সহোযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আমরা পরিবর্তন আনছি। তা যারা এতদিন অনিয়ম দুর্নীতি করেছে, তাদের স্বার্থে আঘাত এনেছে৷
বিটিসিএলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ২৯০ কোটি টাকার এলসি করা হয়। কিছু বিশেষ কোম্পানি বিটিসিএলকে এই মার্কেট থেকে সরিয়ে দিতে চায়। তাই, আমি দুদককে অনুরোধ করে একটি চিঠি লিখেছিলাম। এটাকে অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ আহমদ ত ব ট আরস ট ল কম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক গ্রেপ্তার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা শাখার সদস্যসচিব আহমদ রেজা হাসান মাহদীসহ চার জন নেতাকর্মীর ওপর হামলার মামলায় প্রধান আসামি সংগঠনের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। রোববার (৬ জুলাই) রাত ৯টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের কিবরিয়া ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
জানা যায়, গত ৯ মে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুরাতন হাসপাতাল সংলগ্ন নার্সিং ইনস্টিটিউটের সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একদল সন্ত্রাসী মাহদী ও তার সঙ্গীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে মাহদীসহ চারজন গুরুতর আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় এনামুল হক সাকিবকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন আহমদ রেজা হাসান মাহদী। এরপর থেকেই সাকিব পলাতক ছিলেন। মামলার ভিত্তিতে সাকিবের অন্যতম দুই সহযোগী এবং একই মামলার আসামি নুর আলম চৌধুরী এবং রেজাউল হাসান রাজু নামে দুই জনকে আটক করে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি এনামুল হক সাকিবকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে, গত ৬ মে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড, সহিংসতা ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ এনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সাকিবকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন হবিগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আরিফ তালুকদার ও সদস্যসচিব মাহদীর যৌথ নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ তথ্য জেলা মুখপাত্র রাশেদা বেগম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
আটকের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ,কে,এম সাহাবুদ্দিন শাহীন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত এনামুল হক সাকিব বর্তমানে থানায় রয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে।