ইরানে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসীকে দেশ ছাড়তে সময় বেঁধে দিয়েছিল তেহরান সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইরান ছাড়তে ব্যর্থ হলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছিল। তেহরানের বেঁধে দেওয়া সেই সময় গতকাল রোববার শেষ হয়েছে।

গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরানে জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আর এমন এক অনিশ্চয়তার মধ্যেই আফগানদের ইরান ছেড়ে চলে যাওয়ার সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলো।

২০২৩ সালে ইরান সরকার সে দেশে ‘অবৈধভাবে’ বসবাসরত বিদেশিদের দেশ থেকে বের করে দিতে অভিযান শুরু করে। এ বছরের মার্চে ইরানি সরকার নির্দেশ দেয়, আফগানিস্তানের যেসব নাগরিকের ইরানে থাকার বৈধতা নেই, তাঁরা যেন ৬ জুলাইয়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় ইরান ছাড়েন, নইলে তাঁদের বিতাড়িত করা হবে।

সরকারের ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাত লাখের বেশি আফগান ইরান ছেড়েছেন। আরও লাখো মানুষ বিতাড়নের মুখে রয়েছেন। শুধু জুনেই ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি আফগান ইরান ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরানে জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আর এমন এক অনিশ্চয়তার মধ্যেই আফগানদের ইরান ছেড়ে চলে যাওয়ার সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলো।

তেহরানের একটি রেস্তোরাঁর মালিক বাতুল আকবরি আল–জাজিরাকে বলেন, তেহরানে বসবাসরত আফগানরা ‘আফগানবিরোধী মনোভাবের’ কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। লোকজনকে এমন একটি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেটিকে তাঁরা চিরকাল নিজের বলে জেনেছেন। এটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

বাতুলের মা–বাবা আফগানিস্তান থেকে এসেছেন, কিন্তু তাঁর জন্ম ইরানে। এ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইরানে জন্ম নেওয়ার ফলে আমাদের মনে হয়, আমাদের দুটি দেশ। আমাদের মা–বাবা আফগানিস্তান থেকে এসেছেন, কিন্তু আমরা এ দেশকেই আমাদের বাড়ি বলে জেনে এসেছি।’

মোহাম্মদ নাসিম মেজাহেরি একজন শিক্ষার্থী। তাঁর পরিবারকেও ইরান ছাড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, বিতাড়নের এই প্রক্রিয়া বহু পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সময় থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারের বেশি আফগান ইরান ছাড়ছেন। যেখানে আগের হার ছিল দৈনিক গড়ে দুই হাজার।

লোকজনকে এমন একটি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেটিকে তাঁরা চিরকাল নিজের বলে জেনেছেন। এটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।.

.বাতুল আকবরি, তেহরানের একটি রেস্তোরাঁর মালিক

ইরান থেকে এত ব্যাপক হারে আফগানদের দেশে ফেরত যাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছে নানা মানবাধিকার সংগঠন। তাদের আশঙ্কা, এতে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফগানিস্তান আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে।

ইরানে প্রায় ৪০ লাখ আফগান অভিবাসী ও শরণার্থী বসবাস করেন, যাঁদের অনেকেই দশকের পর দশক ধরে সেখানে বসবাস করে আসছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সময় থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি আফগান ইরান ছাড়ছেন। যেখানে আগের হার ছিল দৈনিক গড়ে দুই হাজার।

আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের বিতাড়িত করা নিয়ে ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি গত মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা সব সময় ভালো আতিথেয়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবকিছুর আগে জাতীয় নিরাপত্তার। তাই স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাঁদের ফিরে যেতে হবে।’

আফগানিস্তানে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি আরাফাত জামাল ইরান-আফগান সীমান্ত পারাপারের একটি দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তাঁরা বাসে করে আসছেন। কখনো কখনো একসঙ্গে পাঁচটি বাস আসছে, সেগুলোতে পরিবারসহ অনেক মানুষ থাকেন। বাস থেকে নামার পর তাঁরা সম্পূর্ণ হতবুদ্ধ, দিশাহারা, ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকেন।

আমরা সব সময় ভালো আতিথেয়তা প্রদানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবকিছুর আগে জাতীয় নিরাপত্তার। তাই স্বাভাবিকভাবেই, যাঁরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাঁদের ফিরে যেতে হবে।....ফাতেমেহ মোহাজেরানি, ইরান সরকারের মুখপাত্র

ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ সংঘাতের কারণে এই পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে, কিন্তু এর শুরু হয়েছিল আগেই।

আরাফাত জামাল বলেন, ‘যুদ্ধের ফলে এই পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে। তবে বলতেই হবে, এটা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা প্রবণতার একটি অংশ। আমরা অনেক দিন ধরে ইরান থেকে আফগান নাগরিকদের ফিরে আসতে দেখে আসছি। এর কিছু অংশ স্বেচ্ছায় ফিরে এলেও বড় একটি অংশকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

তেহরান থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক রাসুল সেরদার বলেন, ইরানে অর্থনৈতিক সংকট, পণ্যের ঘাটতি ও সামাজিক সমস্যার জন্য আফগানদের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।আরও পড়ুনগুপ্তচর সন্দেহে বিপুলসংখ্যক আফগানকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ইরান০৩ জুলাই ২০২৫

তেহরান থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক রাসুল সেরদার বলেন, ইরানে অর্থনৈতিক সংকট, পণ্যের ঘাটতি ও সামাজিক সমস্যার জন্য আফগানদের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।

সেরদার বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের পর রাজনৈতিক বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালানো প্রচারের কারণে এসব অভিযোগ আরও বেড়েছে। ওই সব প্রচারে দাবি করা হচ্ছে, ইসরায়েল আফগান নাগরিকদের গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ন সরক র সরক র র শরণ র থ র বল ন ব স কর আম দ র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় মাসে ৫২৯ ‘রাজনৈতিক সহিংসতায়’ ৭৯ জন নিহত

গত ছয় মাসে কমপক্ষে ৫২৯টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় অন্তত ৭৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪ হাজার ১২৪ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) ষাণ্মাসিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারি-জুন ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এইচআরএসএস।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতার ৫২৯টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ৩০২টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ হাজার ৮৩৪ জন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) মধ্যে ১০১টি সংঘর্ষে আহত হন ৫০২ জন এবং নিহত হন ১৬ জন। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ২৬টি সংঘর্ষে আহত হন ২১৬ জন এবং নিহত হন ২ জন। বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ১১টি সংঘর্ষে আহত হন ৭৯ জন। আওয়ামী লীগ-এনসিপির মধ্যে ১৮টি সংঘর্ষে আহত হন ৫৪ জন এবং নিহত হন ১ জন। আওয়ামী লীগ-জামায়াতের মধ্যে ৭টি সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন ৯ জন এবং নিহত হন ১ জন।

গত ছয় মাসে আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলের ১৩টি ঘটনায় ১৫৩ জন আহত এবং ৭ জন নিহত হন বলে মানবাধিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এনসিপির অন্তঃকোন্দলের ১২টি ঘটনায় আহত হন ৩৭ জন এবং ৪২টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট নিহত ৭৯ জনের মধ্যে বিএনপির ৫৪ জন, আওয়ামী লীগের ১৭ জন, জামায়াতের ২ জন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ১ জন এবং ইউপিডিএফের আছেন ৩ জন। অপর ২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে ১ জন নারী রয়েছেন।

৫২৯টি সহিংসতার ঘটনার ৪৪৫টিই বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ও বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বলে এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার কমপক্ষে ৭৬টি ঘটনায় অন্তত ৫৭ জন নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন। এসব হামলায় আওয়ামী লীগের ২০ জন, বিএনপির ২৯ জন, জামায়াতের ১ জন নারী সদস্যসহ ২ জন এবং চরমপন্থী দলের ৪ জনসহ ৫৭ ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া গত ছয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, ছয় শতাধিক বাড়িঘর, রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

সাংবাদিক নির্যাতন ও গণপিটুনি

জানুয়ারি থেকে জুন—এ ছয় মাসে ১৫২টি হামলার ঘটনায় ২৫৭ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হন অন্তত ১১১ জন, লাঞ্ছনার শিকার হন ২০ জন, হুমকির সম্মুখীন হন ৩৪ জন ও গ্রেপ্তার হন ১০ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া ২২টি মামলায় ৯২ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত ছয় মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীনে দায়ের করা অন্তত ১৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ১২ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ২৩ জনকে।

এ সময় গণপিটুনির কমপক্ষে ১৪১টি ঘটনায় নিহত হন অন্তত ৬৭ জন এবং আহত হন অন্তত ১১৯ জন। সারা দেশে কারাগারে কমপক্ষে ৪০ জন আসামি মারা যান। এ সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ১০টি হামলার ঘটনায় ৪ জন আহত, ১টি মন্দির, ১১টি প্রতিমা ও ১৮টি বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের  ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া জমি দখলের মতো দুটি ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে ৪০টির বেশি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

গত ছয় মাসে ১১২টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হন ৫৯ জন এবং আহত হন কমপক্ষে ৭২০ জন। মার্চ মাসে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভরত বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ৭৫ জন শ্রমিক আহত হন।

সীমান্তে নিহত ১৪, পুশ ইন চলছে

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৪০টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ১৪ জন বাংলাদেশি নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। বিএসএফের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৭ বাংলাদেশি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কমপক্ষে ২ হাজার ৩৩৮ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে বিএসএফ।

অপর দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির গুলিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে  গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ আহত হন। জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে পড়ায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক আনসার সদস্যসহ ৯ জন বাংলাদেশি আহত হন।

নারী ও শিশু নির্যাতন

গত ছয় মাসে কমপক্ষে ১ হাজার ৪২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন কমপক্ষে ৪৭৬ জন, যাঁদের মধ্যে ২৯২ (৬০ ভাগ) জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে ১১০ (২২ শতাংশ) জন নারী ও কন্যাশিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১৪ জনকে। এ সময়ে আত্মহত্যা করেন ৭ জন নারী। যে ২৫৩ জন নারী ও কন্যাশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শিশু ১৪৩টি।

ছয় মাসে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন ও আহত হয়েছেন ১৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হন ১৬৬ জন, আহত হন ২৭ জন এবং আত্মহত্যা করেন ৭২ জন নারী। অন্যদিকে গত ছয় মাসে কমপক্ষে ৬৭৩টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩২ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৫৪১টি শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও যা আছে

মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি-জুন মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংষর্ষে, হেফাজতে ও নির্যাতনে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৩ জন বন্দুকযুদ্ধের নামে, ৪ জন নির্যাতনে, ৫ জন পুলিশ হেফাজতে এবং ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ছাড়া পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত ছয় মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী এবং অন্যান্য দলের নেতা–কর্মীদের নামে কমপক্ষে ১১৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮ হাজার ৫৬৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫ হাজার ৯৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গত ছয় মাসে বিভিন্ন মামলায় কমপক্ষে ২৩ হাজার ১২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী অন্তত ২২ হাজার ৯৯৫ জন।

পুলিশ গত ছয় মাসে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের অন্তত ৪৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ১৫–১৬ শিক্ষার্থী গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হন। এরপরই দেশব্যাপী যৌথ বাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্টে এবং পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ হাজারের অধিক ব্যক্তিকে। তাঁদের অধিকাংশই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নেতা-কর্মী।

এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলামের পাঠানো ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, ও নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ