শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ দিলো আইপিডিসি ফাইন্যান্স
Published: 7th, July 2025 GMT
পুঁজিবাজারের আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের ঘোষিত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের পাঠানো হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে কোম্পানিটি।
সোমবার (৭ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসির ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) সিস্টেমসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়েছে। আর বোনাস লভ্যাংশ বিও হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে।
কোম্পানির ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভাংশ। সেহিসেবে কোম্পানিটি প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ০.
কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে তা অনুমোদন করা হয়।
ঢাকা/এনটি/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ য় রহ ল ড র
এছাড়াও পড়ুন:
২৬ মাসে কাটা হয়েছে ১৩ লাখ গাছ, সবচে বেশি কোথায়, ঢাকায় কত
রাজধানীর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত সাত মসজিদ সড়কের বিভাজকে ছিল বড় গাছ। গাছগুলো ছায়া দিত। ২০২৩ সালের মে মাসে সেগুলো কেটে ফেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরে লাগানো হয় ছোট শোভাবর্ধনকারী গাছ।
ধানমন্ডিতে গত ২৭ জুন গিয়ে দেখা যায়, সড়ক বিভাজকে নানা জাতের ফুলগাছ। এতে সৌন্দর্য বেড়েছে। তবে পথচারীরা আর ছায়া পান না। হারিয়ে গেছে বড় গাছের প্রশান্তির ছায়া।
কথা হয় রিকশাচালক মো. রমিজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে গাছ আছিল এহানে। ছায়া পাইতাম। রিকশা চালাইতে কষ্ট হইত না। এহন যাত্রী আর রিকশাচালক সবাই রইদে (রোদে) কষ্ট পায়। বড় গাছগুলা কাইটা লাগাইছে কী সব চারা গাছ!’
আগে গাছ আছিল এহানে। ছায়া পাইতাম। রিকশা চালাইতে কষ্ট হইত না। এহন যাত্রী আর রিকশাচালক সবাই রইদে (রোদে) কষ্ট পায়। রমিজ মিয়া, রিকশাচালক, ধানমন্ডিএভাবে সরকারি প্রকল্পে নিয়মিত গাছ কাটা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে গাছ লাগানো হয় না। রাজধানীতে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা যেমন কমছে, তেমনি সারা দেশে কমছে বনভূমি।
বেসরকারি সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) হিসাব বলছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সরকারি প্রকল্পে প্রায় ১৩ লাখ গাছ কাটা পড়েছে। সংস্থাটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য সংকলন করে এ হিসাব করেছে।
আরডিআরসির ‘লগিং অব প্ল্যান্টস ইন বাংলাদেশ (২০২৪-২০২৫)’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সরকারি প্রকল্পে প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যদিকে আগের বছরে একই গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কাটা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ গাছ।
সর্বশেষ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ মাসে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে খুলনা জেলায়—৮৫ হাজার। এরপর রয়েছে লক্ষ্মীপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও যশোর। কম গাছ কাটা পড়েছে শেরপুর, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা জেলায়। ঢাকায় কাটা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৯৬টি গাছ।
ঢাকায় যেসব জায়গায় গাছ কাটা হয়েছে, তার একটি পান্থকুঞ্জ পার্ক। গত বছর দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) সম্প্রসারণের কাজ করতে এ পার্কের গাছ কাটা হয়। একই পরিণতি হয়েছে ফার্মগেট এলাকার শহীদ আনোয়ারা পার্কের। একসময় সেখানে কয়েক শ গাছ থাকলেও মেট্রোরেলের কার্যালয় ও স্থাপনা নির্মাণ করতে সেগুলো কাটা হয়েছে।
মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ আনোয়ারা পার্কের কোনোটাই স্থায়ী স্থাপনা নয়। তাঁরা শিগগিরই জায়গায়টি পার্ক পুনঃস্থাপনের জন্য গণপূর্তকে বুঝিয়ে দেবেন।
খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে গত বছর কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদীর পাড়ের ৫০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। পরে সমালোচনার মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আবার গাছ রোপণের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে গত এক বছরে কোনো গাছ লাগায়নি পাউবো।
পাউবোর খুলনা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধের কাজ শেষ না করে গাছ লাগালে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজ শেষ হলেই আমরা গাছ লাগাব।’
আরডিসির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে গাছ কাটায় ১২টি সরকারি সংস্থার নাম উঠে এসেছে। সংস্থাগুলো হলো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয়, রাজশাহী জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, যশোর জেলা পরিষদ, মেহেরপুর জেলা পরিষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের প্রকল্পের প্রয়োজনে গাছ কাটা যেতে পারে। কিন্তু ততসংখ্যক গাছ কি লাগানো হয়? গাছ রক্ষা করে প্রকল্পের নকশা করা যায় কি না, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের অনুমোদনসংক্রান্ত সভাগুলোতে সিদ্ধান্ত থাকে যে গাছ কাটা যাবে না। একেক প্রকল্প একেক মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে যে গাছ কাটা পড়বে, তা পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয় না। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে গাছ রেখে কীভাবে প্রকল্প ডিজাইন (নকশা) করা যায়, সেটা তারা প্রস্তাব করে না। বিভিন্ন প্রকল্পে গাছ কাটা বন্ধে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
আরডিআরসির গবেষণায় আসা হিসাবের চেয়ে ঢাকায় অনেক বেশি গাছ কাটা পড়ে বলে মনে করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার জনসংখ্যার তুলনায় গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রকল্পে গাছ যেন কাটা না যায়, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।