দুদক চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চেয়েছি, কোনো নির্দেশ দিইনি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
Published: 7th, July 2025 GMT
ক্রয়প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্তাধীন একটি প্রকল্প চালু রাখার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাঁরা দুদক চেয়ারম্যানের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। এর বাইরে কোনো নির্দেশ দেননি। আর এটি না হলে ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে।
তিনি ও তাঁর মন্ত্রণালয়ে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত নন বলেও দাবি করেছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এসব কথা বলেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সম্প্রতি দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ সালে নেওয়া ‘৫ জি’র উপযোগীকরণে বিটিসিএলের ‘অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে ক্রয়প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা, ফাইভ–জির রেডিনেস পিছিয়ে পড়া রোধ, প্রযুক্তিগতভাবে বিটিসিএল পিছিয়ে পড়া রোধ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার নিশ্চিত এবং এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিটিসিএলের অপর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যে স্থাপিত যন্ত্রপাতি চালু করার লক্ষ্যে বিটিসিএলের ওই প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা চিঠিতে তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, কিছু বিশেষ কোম্পানি বিটিসিএলকে এই মার্কেট থেকে বের করে দিতে চায়। তাঁরা এই বক্তব্য যখন তুলে ধরেছেন, তখন বলা হয়েছে, বিস্তারিত জানানো হোক। সেই রেফারেন্সে দুদক চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে তিনি মূলত তাঁর যুক্তিগুলো তুলে ধরেন। যেহেতু টাকাটা চলে গেছে, যেহেতু বিটিসিএলের সক্ষমতা (ক্যাপাসিটি) সম্প্রসারণ দরকার। বর্তমানে যে সক্ষমতা আছে, সেটি জেলা পর্যায়ে মাত্র এক জিবিপিএস, এটা দিয়ে ভালো মানের ইন্টারনেট–সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এ মুহূর্তে বিটিসিএল যদি এই নেটওয়ার্ক যুগোপযোগী না করে, তাহলে দ্রুতই সে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এখন যেহেতু তার প্রতিদ্বন্দ্বীগুলো নেটওয়ার্ক যুগোপযোগী করছে এবং বিটিসিএল বিভিন্ন ঝামেলার কারণে এই কাজ বন্ধ হয়ে আছে, সে জন্য বিটিসিএলের ফাইবার নেটওয়ার্ক বর্ধিত করা যাচ্ছে না। উপরন্তু তাঁরা বলেছেন, বিটিসিএলের মূল প্রকল্পের মধ্যে দুটি বিষয় আছে, একটি আইপি নেটওয়ার্ক, আরেকটি হচ্ছে ফাইবার ডিডব্লিউভিএম নেটওয়ার্ক। আইপি নেটওয়ার্কের কাজ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। কিন্তু সেই ৩০০ কোটি টাকা আজ কোনো কাজে আসছে না। কারণ, সেই নেটওয়ার্কের যে সার্ভারগুলো বসানো হয়েছে, সেগুলো সংযোগ করার জন্য ডিডব্লিউভিএম নেটওয়ার্কটি দরকার। সে জন্য তাঁরা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। যেহেতু টাকাগুলো চলে গেছে, কাজটা করতে দেওয়া হোক। যেহেতু ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত যন্ত্রপাতি আনা দরকার, তাঁরা একটি কমিটি করে দেবেন, সেই কমিটি নিশ্চিত করবে, প্রতিশ্রুত যন্ত্রপাতি আসবে।
বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এটিকে অপব্যাখ্যা করে আমাদের, আমাকে ব্যক্তিগতভাবে, আমার মন্ত্রণালয় ও আমাদের সরকারকে চরিত্রহননের একটা চেষ্টা আপনারা মিডিয়ায় দেখেছেন। আমি এর নিন্দা জানাই। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি এবং আমার মন্ত্রণালয়ে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত যাঁরা আছি, তাঁরা কোনো ধরনের কোনো দুর্নীতিতে জড়িত নই। এখানে যত ধরনের কাজ হয়েছে, প্রতিটি কাজ আগের সরকারের আমলে হয়েছে। আমরা শুধু কিছু চিঠি আদান-প্রদান করে আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি এবং মতামত ব্যক্ত করে চিঠির শেষ লাইনে দুদক চেয়ারম্যানের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। এর বাইরে আমরা কোনো নির্দেশ দিইনি।’
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী আরও বলেন, এখানে এ প্রকল্পের বিপরীতে দুদকের পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোনো ধরনের মামলা নেই। সুতরাং যে বিষয়টি করা হচ্ছে তাঁরা বলছেন যদি এই কাজটি না করা হয় এবং এলসি না খোলা হয়, তাহলে দুটি ঘটনা ঘটবে। ৩০০ ও ৩০০ মিলিয়ে মোট ৬০০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে। একই সঙ্গে বিটিসিএল দুর্বল হয়ে এই বাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
সংবাদ সম্মেলনে টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি, ২০২৫ নিয়ে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ট স এল র ন টওয় র ক প রকল প র সহয গ ত ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে এখন রাজনৈতিক দলের অভাব নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “দেশে এখন রাজনৈতিক দলের অভাব নেই। নতুন করে অনেক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হয়েছে। তারা কেউ কেউ নির্বাচন চায়, আবার কেউ বলে হাসিনার বিচার হওয়ার আগ পযন্ত নির্বাচন হতে দেবে না। এমনও কথা মাঝে মাঝে শুনি।”
শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে চুনকুটিয়া গালস স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে সংস্কার ও দ্রুত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “নির্বাচন নিয়ে জনগণের সঙ্গে কোনো প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না। রাজনীতি করেন, রাজীনীতি করার অধিকার সবার আছে। কারণ দেশটা সবাই মিলে স্বাধীন করেছে। এই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সবার। সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
আরো পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে তৈরি হচ্ছে রাজকীয় চেয়ার
দুই বছর ধরে নেতৃত্বহীন বরগুনা জেলা বিএনপি
তিনি বলেন, “দুই একটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষ ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি। দ্রুত সব সংস্কার শেষ করে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “দেশের মানুষ স্বৈরাচার হাসিনা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে, তাদের গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার ফিরে পায়নি। জনগণ চায় তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে।”
তিনি বলেন, “গত ১৬ বছর হামলা, মামলা দিয়ে বিএনপির লোকজনকে হয়রানি করে বাসায় ঘুমাতে দেওয়া হয়নি। শত হামলা, মামলা মাথায় নিয়ে রাজপথে ছিলাম জনগণের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য। এখন সময় এসেছে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার।”
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামা ওবায়েদ, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক, আজিজুল বারি হেলাল, বিএনপির প্রবীণ নেতা নাজিম উদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপি সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান নাসের।
ঢাকা/শিপন/মাসুদ