টানা চার দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে কক্সবাজার শহরসহ ৬ উপজেলার অন্তত ১২৪ গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদ-নদীর পানি উপচে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভোগ পড়েছে বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি উপচে চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার অন্তত দুই হাজার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

টেকনাফে ৫০টি গ্রামে পানিবন্দী আছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। উখিয়ার ২০টি গ্রাম ও তিনটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পানিবন্দী অন্তত ১৩ হাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও ৭ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া কুতুবদিয়ায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, আজ সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ৩০ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ২২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানান তিনি। এতে ভূমিধসের ঝুঁকিও রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনে। টেকনাফের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত ২৫০ পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের জন্য টেকনাফে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উখিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদরে আরও দেড় হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

টেকনাফ পৌর এলাকায় একটি বসতঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। আজ দুপুরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ন বন দ এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

কারাবন্দী সাংবাদিকদের জামিন চেয়ে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের বিবৃতি

কারাবন্দী সাংবাদিকদের জামিন চেয়েছেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত অর্ধশতাধিক সাংবাদিক। তাঁরা বিভিন্ন গণমাধ্যমকে হুমকি ও সাংবাদিকদের হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

আজ সোমবার ৫১ জন সাংবাদিকের সই–সংবলিত একটি বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক তৈমুর ফারুক তুষার।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি। গণমাধ্যমও এই জিম্মি দশার বাইরে নয়। সাংবাদিকদের নামে হত্যা মামলা, চাকরিচ্যুতি, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলোর কারণে সাংবাদিক সমাজ এক ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। দেশের একাধিক শীর্ষ সংবাদপত্রের কার্যালয়ের সামনে মব সন্ত্রাসীরা গরু জবাই করে জিয়াফতের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে চিহ্নিত মব সন্ত্রাসীরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। এটি ধারণা করা অমূলক নয়, ক্ষমতাধর কোনো মহল এসবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।’

সাংবাদিকদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশি–বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং অধিকারকর্মীদের দাবি অনুসারে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গত ১১ মাসে সারা দেশে ঢালাও হত্যা মামলাসহ নানা হয়রানিমূলক মামলার আসামি করা হয়েছে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে, গ্রেপ্তার করা হয় ৩৯ জনকে। ১৬৮ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারা দেশের প্রেসক্লাবগুলো থেকে ১০১ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছেন তিন শতাধিক সাংবাদিক। শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। গত ১১ মাসে সহস্রাধিক সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। ‘মব সন্ত্রাসের’ মাধ্যমে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো দখল করা হয়েছে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) কার্যালয় ১১ মাস ধরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আইনি প্রতিকার বা জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, অজ্ঞাত কারণে কারাগারে বন্দী সাংবাদিকেরা সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিনা বিচারে মাসের পর মাস কারাবন্দী আছেন সাংবাদিকেরা। এগুলো মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার, সাংবাদিক হয়রানির নিন্দা এবং কারাবন্দী সাংবাদিকদের জামিনের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করুন। গণমাধ্যমকে যারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা পরিহার করুন।’

বিবৃতিতে সই করেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, বাংলা ইনসাইডারের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবির, জাতীয় অর্থনীতির সম্পাদক কিবরিয়া চৌধুরী, ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি শামীমা আক্তার, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ সোহেলী চৌধুরী, ডিআরইউর সাবেক নারীবিষয়ক সম্পাদক ঝর্ণা মনি, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন, স্বাধীনতা সাংবাদিক পরিষদের সদস্যসচিব হামিদ মোহাম্মদ জসিম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাঈদুজ্জামান সম্রাট, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ