গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গটি কিছুদিন ধরে আবারও জোরালোভাবে সামনে এসেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি হয়েছে এবং আলোচকেরা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের পথ বের করতে আলোচনায় বসতে পারেন।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। আর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের কিছু দাবি ‘অগ্রহণযোগ্য’। তবে এরপরও তিনি কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছেন।

আজ সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সাক্ষাৎ করার কথা আছে। বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প চাইছেন যেন একটি চুক্তি হয়।

গত শনিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আগামী সপ্তাহেই গাজার ব্যাপারে একটি চুক্তি হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, হামাস পাল্টা কী প্রস্তাব দিয়েছে, সে ব্যাপারে এখনো পুরোপুরি জানেন না। তবে তাদের সাড়া দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।

হামাস কী চাইছে?

বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হামাসের মূল দাবি তিনটি। এর একটি হলো, গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) কার্যক্রম বন্ধ করা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে কমপক্ষে ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জুনের শেষ দিকে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানোর জন্য ইসরায়েলি সেনাদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। মানবিক সহায়তাকর্মীরা বারবার বলছেন, তাঁরা গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণে সক্ষম। তাঁরা জিএইচএফের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, জিএইচএফ ইসরায়েলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত প্রস্তাবে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসের হাতে আটক থাকা ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি ও ১৮ জন জিম্মির মরদেহ ধাপে ধাপে হস্তান্তর করা হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

গত মে মাসে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, ‘এটি (জিএইচএফ) ত্রাণকে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য পূরণের শর্তে পরিণত করেছে। এটি অনাহারকে দর-কষাকষির অস্ত্রে পরিণত করে। এটি একধরনের ঠগবাজি…সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতি আড়াল করার পর্দামাত্র।’

হামাসের মূল তিন দাবির আরেকটি হলো, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা। হামাস চায়, গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে অবস্থানে ছিল, সেখানেই যেন তারা ফিরে যায়।

গত মে মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় নতুন করে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করে। তারা শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে এবং গাজা উপত্যকার বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

ইতিমধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী নেতজারিম করিডর তৈরি করেছে, যা গাজা উপত্যকাকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করেছে। এরপর গত এপ্রিল মাসে নেতানিয়াহু দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজায় মোরাগ করিডর তৈরির ঘোষণা দেন।

তৃতীয় দাবিটি হলো, আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চ মাসে ইসরায়েল একতরফাভাবে সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। অথচ ফিলিস্তিনি পক্ষ যুদ্ধবিরতির সব শর্ত মেনে চলছিল। এ কারণে এবার হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চাইছে যে ভবিষ্যতে এমনটা আর ঘটবে না।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাস চায়, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করুক, যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে গেলেও যদি স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ না-ও হয়, তবু ইসরায়েল যেন আর বোমা হামলা বা স্থল অভিযান চালাতে না পারে। এসব হামলায় ইতিমধ্যে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

হামাস চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়তা দিক যে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া ছাড়াই যদি যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তবু যেন ইসরায়েল আবার বিমান হামলা বা স্থল অভিযান শুরু না করে।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মূল প্রস্তাবে কী আছে

যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত প্রস্তাবে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসের হাতে আটক থাকা ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি ও ১৮ জন জিম্মির মরদেহ ধাপে ধাপে হস্তান্তর করা হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

এখনো ৫০ জন জিম্মি গাজায় আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ত্রাণ বিতরণ নিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহের কাজে সহায়তা করবে।

সবশেষ প্রস্তাবে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে গাজার কিছু অংশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ইসরায়েল কী বলছে

বিভিন্ন সংবাদসূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মূল প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। তবে হামাস যে সংশোধনী দিয়েছে, তাকে তিনি ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

নেতানিয়াহু বলেন, সব জিম্মি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং হামাস পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করার লক্ষ্য বাস্তবে অসম্ভব এবং এটি নেতানিয়াহুর একটি রাজনৈতিক কৌশল, যাতে তিনি নিজের স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে পারেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য ইসরায়েলিদের অনেকে তাঁকেই দায়ী করে থাকেন। ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সুবিধার আওতায় মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া এবং ইসরায়েলের ক্ষমতায় টেকার মতো জনসমর্থন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান।

নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির প্রতি তাঁর কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীদের, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের জোরালো সমর্থন আছে। তাঁরা চান, ইসরায়েলি সেনা অভিযান আরও জোরদার হোক, আরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হোক এবং গাজায় অবরুদ্ধ ও ক্ষুধার্ত মানুষকে কোনো ত্রাণ না দেওয়া হোক।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য ইসরায়েলিদের অনেকে তাঁকেই দায়ী করে থাকেন। ওই হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।

ফিলিস্তিনিদের হত্যা, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া চলছেই

ইসরায়েল এখনো গাজায় প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

পশ্চিম তীরের মানুষেরা বারবার ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁদের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে এবং জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে কঠিন বাধা তৈরি করা হচ্ছে।

চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা

ট্রাম্পকে চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। আর গাজার ফিলিস্তিনিরা মরিয়াভাবে চাইছেন, যেন ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়। তবে এখনো একটি বড় বাধা থেকে গেছে।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আদনান হায়াজনে আল–জাজিরাকে বলেন ‘যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েল এবং নেতানিয়াহুর আগ্রহ নেই।’

আদনানের মতে, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা খুবই কম।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের উদ্দেশ্য স্পষ্ট.

..তারা চায়, জনমানবহীন একটি ভূখণ্ড। তাই ফিলিস্তিনিদের সামনে তিনটি পথ খোলা রাখা হয়েছে—অনাহারে মারা যাওয়া, নিহত হওয়া, কিংবা এই ভূমি ছেড়ে চলে যাওয়া। তবে ফিলিস্তিনিরা এখন পর্যন্ত প্রমাণ করেছেন, যা কিছুই হোক না কেন, তাঁরা এই ভূমি ছাড়বেন না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল দ র য দ ধ বন ধ র ইসর য় ল ইসর য় ল র জ এইচএফ প রস ত ব র জন ত ক আটক থ ক অন য য় ন হত হ মন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

২৬ মাসে কাটা হয়েছে ১৩ লাখ গাছ, সবচে বেশি কোথায়, ঢাকায় কত

রাজধানীর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত সাত মসজিদ সড়কের বিভাজকে ছিল বড় গাছ। গাছগুলো ছায়া দিত। ২০২৩ সালের মে মাসে সেগুলো কেটে ফেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরে লাগানো হয় ছোট শোভাবর্ধনকারী গাছ।

ধানমন্ডিতে গত ২৭ জুন গিয়ে দেখা যায়, সড়ক বিভাজকে নানা জাতের ফুলগাছ। এতে সৌন্দর্য বেড়েছে। তবে পথচারীরা আর ছায়া পান না। হারিয়ে গেছে বড় গাছের প্রশান্তির ছায়া।

কথা হয় রিকশাচালক মো. রমিজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে গাছ আছিল এহানে। ছায়া পাইতাম। রিকশা চালাইতে কষ্ট হইত না। এহন যাত্রী আর রিকশাচালক সবাই রইদে (রোদে) কষ্ট পায়। বড় গাছগুলা কাইটা লাগাইছে কী সব চারা গাছ!’

আগে গাছ আছিল এহানে। ছায়া পাইতাম। রিকশা চালাইতে কষ্ট হইত না। এহন যাত্রী আর রিকশাচালক সবাই রইদে (রোদে) কষ্ট পায়। রমিজ মিয়া, রিকশাচালক, ধানমন্ডি

এভাবে সরকারি প্রকল্পে নিয়মিত গাছ কাটা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে গাছ লাগানো হয় না। রাজধানীতে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা যেমন কমছে, তেমনি সারা দেশে কমছে বনভূমি।

বেসরকারি সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) হিসাব বলছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সরকারি প্রকল্পে প্রায় ১৩ লাখ গাছ কাটা পড়েছে। সংস্থাটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য সংকলন করে এ হিসাব করেছে।

আরডিআরসির ‘লগিং অব প্ল্যান্টস ইন বাংলাদেশ (২০২৪-২০২৫)’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সরকারি প্রকল্পে প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যদিকে আগের বছরে একই গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কাটা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ গাছ।

সর্বশেষ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ মাসে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে খুলনা জেলায়—৮৫ হাজার। এরপর রয়েছে লক্ষ্মীপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও যশোর। কম গাছ কাটা পড়েছে শেরপুর, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা জেলায়। ঢাকায় কাটা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৯৬টি গাছ।

ঢাকায় যেসব জায়গায় গাছ কাটা হয়েছে, তার একটি পান্থকুঞ্জ পার্ক। গত বছর দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) সম্প্রসারণের কাজ করতে এ পার্কের গাছ কাটা হয়। একই পরিণতি হয়েছে ফার্মগেট এলাকার শহীদ আনোয়ারা পার্কের। একসময় সেখানে কয়েক শ গাছ থাকলেও মেট্রোরেলের কার্যালয় ও স্থাপনা নির্মাণ করতে সেগুলো কাটা হয়েছে।

মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ আনোয়ারা পার্কের কোনোটাই স্থায়ী স্থাপনা নয়। তাঁরা শিগগিরই জায়গায়টি পার্ক পুনঃস্থাপনের জন্য গণপূর্তকে বুঝিয়ে দেবেন।

খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে গত বছর কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদীর পাড়ের ৫০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। পরে সমালোচনার মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আবার গাছ রোপণের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে গত এক বছরে কোনো গাছ লাগায়নি পাউবো।

পাউবোর খুলনা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধের কাজ শেষ না করে গাছ লাগালে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজ শেষ হলেই আমরা গাছ লাগাব।’

আরডিসির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে গাছ কাটায় ১২টি সরকারি সংস্থার নাম উঠে এসেছে। সংস্থাগুলো হলো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয়, রাজশাহী জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, যশোর জেলা পরিষদ, মেহেরপুর জেলা পরিষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের প্রকল্পের প্রয়োজনে গাছ কাটা যেতে পারে। কিন্তু ততসংখ্যক গাছ কি লাগানো হয়? গাছ রক্ষা করে প্রকল্পের নকশা করা যায় কি না, সেদিকেও নজর দিতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের অনুমোদনসংক্রান্ত সভাগুলোতে সিদ্ধান্ত থাকে যে গাছ কাটা যাবে না। একেক প্রকল্প একেক মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে যে গাছ কাটা পড়বে, তা পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয় না। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে গাছ রেখে কীভাবে প্রকল্প ডিজাইন (নকশা) করা যায়, সেটা তারা প্রস্তাব করে না। বিভিন্ন প্রকল্পে গাছ কাটা বন্ধে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

আরডিআরসির গবেষণায় আসা হিসাবের চেয়ে ঢাকায় অনেক বেশি গাছ কাটা পড়ে বলে মনে করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার জনসংখ্যার তুলনায় গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রকল্পে গাছ যেন কাটা না যায়, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি হলেন আলমগীর হোসেন
  • অনিয়ম করে শ্রমিক থেকে প্রকৌশলী হওয়ার সত্যতা পেল দুদক
  • ইয়েমেনের ৩ বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • দ্বন্দ্বের অবসান, শুটিংয়ে গড়াচ্ছে শুভ-সোহিনীর ‘লহু’
  • মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে নিহত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি
  • মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে প্রাণ গেছে ৭৪৩ ফিলিস্তিনির
  • ২৬ মাসে কাটা হয়েছে ১৩ লাখ গাছ, সবচে বেশি কোথায়, ঢাকায় কত
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত