বোরখা পরে এসে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা: সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল
Published: 7th, July 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে যুবদল নেতা সেলিমকে (৪২) গুলি করে হত্যার কিলিং মিশনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সোমবার সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় পাঁচজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে তিনজন ছিলেন বোরখা পরিহিত ও দুই জনের মুখে রুমাল মোড়ানো। সবার হাতে ছিল অস্ত্র। পাুলিশ জানিয়েছে, উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ঈষাণ ভট্টের হাট এলাকায় হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ এটি।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুইজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। দুইজনই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এদের একজনের নাম রায়হান ও অপরজন ধামা ইলিয়াস। বোরখা পরা তিনজনকে শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, ঈষাণ ভট্টের হাট এলাকায় সেলিমকে গুলি করে হত্যার পর খুনিরা যে অটোরিকশা ব্যবহার করেছিল সেটা অর্ধ কিলোমিটার অদূরে হযরত আশরাফ শাহ (র:) এর মাজার গেট সংলগ্ন এলাকায় তাদের ছেড়ে দেয়। গেট সংলগ্ন এলাকায় এসে অপর একটি অটোরিকশায় উঠে কমলার টিলা নামক স্থান দিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যায় খুনিরা। রাউজানের কমলার টিলা হয়ে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাউখালি উপজেলা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গহীন অরণ্য পাহাড় অবস্থিত। তিন উপজেলা সীমান্তবর্তীর এই নির্জন পাহাড়ে যাওয়ার কোনো সড়কপথ নেই। পায়ে হেঁটে প্রায় ৫/৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায় খুনিরা। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা দৃশ্যটি মূলত হযরত আশরাফ শাহ মাজারের স্থাপন করা ক্যামেরায় ধারণ করা।
গতকাল রোববার দুপুরে কদলপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা সেলিমকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। সেলিম কদলপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শমসেরপাড়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে এবং কদলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার গ্রুপের অনুসারী ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বদল ন ত এল ক য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আশুরা: শোক, শিক্ষা ও আত্মত্যাগের চিরন্তন প্রতীক
স্মৃতি যখন রক্তাক্ত হয়, ইতিহাস তখন থমকে দাঁড়ায়। তেমনি এক গভীর শোক, শিক্ষা ও আত্মত্যাগের নাম আশুরা। হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম, আর এই মাসের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। এটি মুসলিম উম্মাহর কাছে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও হৃদয়বিদারক দিন।
আশুরার স্মৃতি শুধু শোকের নয়, এটি আদর্শ, আত্মত্যাগ এবং ন্যায়ের প্রতীক। এদিন মুসলমানদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়, সত্যের জন্য জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করা যাবে না।
আশুরার তাৎপর্য বহুমাত্রিক। এটি যেমন নবীদের নানা বিজয় ও রহমতের দিন, তেমনি ইমাম হুসাইন (রা.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত কারবালার হৃদয় বিদারক আত্মত্যাগের স্মৃতি বহন করে। আশুরা আমাদের শেখায়, কীভাবে ধৈর্য, সাহস ও ঈমানের শক্তিকে ধারণ করে কঠিন সময়েও সত্যের পথে অটল থাকা যায়। এই দিনে রক্ত ঝরেছে, কিন্তু মাথা নোয়ানো হয়নি।
আরো পড়ুন:
সিকৃবির প্রধান ফটকের নাম ‘জুলাই ৩৬’
পাবিপ্রবিতে মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজমবিষয়ক কর্মশালা
হাদিস ও ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী, আশুরার দিনে বহু ঐশী ঘটনা ঘটেছে। মহান আল্লাহ এই দিনে বহু নবী ও উম্মতের প্রতি অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষণ করেছেন। এই দিনে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- হযরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হয়, ৪০ দিনের মহাপ্লাবনের পর হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পাহাড়ে থেমে যায়, হযরত ইদ্রিস (আ.) আসমানে জীবন্তভাবে উত্তীর্ণ হন, হযরত ইব্রাহিম (আ.)–কে আগুনে ফেলার পর এই দিনে আগুন ঠান্ডা হয়ে যায়, হযরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ রোগভোগের পর এই দিনে সুস্থ হন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান, হযরত দাউদ (আ.)–এর তওবা কবুল হয়, হযরত ইউসুফ (আ.) কূপ থেকে উদ্ধার হন, হযরত মূসা (আ.) বনি ইসরাইলকে লোহিত সাগর পার করান এবং ফেরাউন তার বাহিনীসহ সাগরে ডুবে যায়, হযরত ঈসা (আ.)–কে আসমানে উত্তোলন করা হয় ইত্যাদি।
এসব ঘটনাই আশুরার পবিত্রতা ও গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে। এটি একদিকে রহমতের দিন, অন্যদিকে প্রতিবাদের দিন।
আশুরার সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ও গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা হলো কারবালার যুদ্ধ। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম, ইরাকের কারবালা প্রান্তরে ঘটেছিল ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও আদর্শিক সংঘর্ষ। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) ও তার পরিবার সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে রুখে দাঁড়ান অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের বিরুদ্ধে। ইয়াজিদ ছিল এক নিষ্ঠুর, অবৈধ ও ইসলামবিরোধী শাসক। তার জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রা.) মাথানত না করে সত্য ও ইনসাফের পক্ষে অবস্থান নেন।
তিনি মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হলে কারবালায় সঙ্গীদেরসহ তাকে অবরুদ্ধ করা হয়। পানির পথ বন্ধ করে তাদের তৃষ্ণার্ত করে তোলা হয়। অবশেষে, আশুরার দিনে শুরু হয় ভয়ংকর যুদ্ধ। মাত্র ৭২ জন সাহসী সঙ্গী নিয়ে ইমাম হুসাইন (রা.) হাজার হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। একে একে সবাই শহীদ হন। শিশু, নারী, যুবক কেউ রেহাই পাননি।
৬ মাস বয়সী শিশু আলী আসগর পর্যন্ত তীরের আঘাতে প্রাণ হারায়। ইমাম হুসাইন (রা.) নিজেও শাহাদত বরণ করেন। এই ইতিহাস কোনো সাধারণ যুদ্ধের নয়, এটি আদর্শের, ঈমানের ও আত্মত্যাগের যুদ্ধ। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোই মুসলমানের পরিচয়, আর আত্মত্যাগই সেই ঈমানের পরিপূর্ণতা। ইমাম হুসাইন (রা.) প্রমাণ করে গেছেন—সত্যের পথে মৃত্যুও গৌরবের।
আশুরার অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এ দিনে রোজা রাখা। হিজরতের পূর্বেও রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরাইশদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে তিনি দেখতে পান, ইহুদিরাও এদিন রোজা রাখে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এদিন হযরত মূসা (আ.) ফেরাউন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তারা রোজা রাখে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী।” (সহীহ বুখারী: ২০০৪)
এরপর থেকে তিনি এ দিনে রোজা পালন করেন এবং সাহাবীদেরও পালনের নির্দেশ দেন। পরে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইচ্ছা প্রকাশ করেন, ইহুদিদের রীতি থেকে ভিন্নতা আনতে পরের বছর মহররমের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ রোজা রাখাবেন। কিন্তু তিনি পরের বছর ইন্তেকাল করেন।
তাই ইসলামী ফিকহবিদরা বলেন, আশুরার রোজা একদিন হলেও রাখা জায়েয। তবে ইহুদিদের অনুকরণ না করতে চাইলে ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ দুইদিন রোজা রাখা উত্তম।
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আশুরার দিন আল্লাহর কাছে আমি আশা করি, এদিনের রোজার মাধ্যমে গত বছরের গোনাহগুলো মাফ হয়ে যায়।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২) এই হাদিসে দেখা যায় যে, আশুরার রোজা রাখা অত্যন্ত শুভ ও পুণ্যের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, এই রোজা মানবিক পাপের মোচন ঘটায়। অর্থাৎ, যিনি আশুরার রোজা রাখবেন, আল্লাহ তাকে অতীত বছরের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি দান করবেন।
আশুরার রোজা শুধু গোনাহ মাফের সুযোগই নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধির এক বিরাট মাধ্যম। এ দিনে রোজা রেখে মানুষ যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে, তেমনি আগের বছরের ভুল, পাপ ও গাফিলতির জন্য অনুশোচনা করে এবং নতুনভাবে জীবনে ভালো কিছু করার অঙ্গীকার করে। তাই এ রোজা শুধু ইবাদত নয়, বরং নিজেকে সংশোধনের এক মোক্ষম সুযোগ।
তাই আশুরার শিক্ষা হোক আমাদের জীবনের চালিকাশক্তি। আমরা যেন ইমাম হুসাইন (রা.)-এর মতো সাহসিকতা, ধৈর্য ও ত্যাগের আদর্শ ধারণ করে সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি—এটাই হোক আশুরার প্রকৃত শিক্ষা ও প্রতিজ্ঞা।
(লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
ঢাকা/মেহেদী