বস্তিবাসী গর্ভবতী নারীদের ৮০ শতাংশ ক্যালসিয়াম ও ৫৮ শতাংশ লৌহের স্বল্পতায় ভুগছেন। এখানে বসবাসকারী শিশুদের ওজন ও উচ্চতা প্রয়োজনের তুলায় কম। গবেষকেরা দেখেছেন, একীভূত সেবায় বস্তির মানুষের পুষ্টির উন্নতি সম্ভব।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষকেরা রাজধানীর বাউনিয়াবাদ বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। আজ সোমবার সকালে আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষেকেরা বলেন, শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। বস্তিতে বাস করা অর্ধেক পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটায়। বস্তির শিশুগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশ খর্বাকৃতির।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ও আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। শহরের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বাস করে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়—দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মাঝখানে থাকা বস্তিবাসী নানা সেবা থেকে বঞ্চিত। বস্তির মানুষের জীবনমান খারাপ। তিনি আরও বলেন, সেবার বাণিজ্যিকীকরণ, ব্যথা ব্যবস্থাপনা, মানুষর ইচ্ছা—এসব কারণে দেশে অস্ত্রোপচারে শিশু জন্মহার অনেক বেশি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাউনিয়াবাদ বস্তির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জমির মালিক কোনো না কোনো ব্যক্তি। বাকি জমির মালিক সরকার। ২০২১ সালের নভেম্বরে এখানে গবেষণা শুরু করেন আইসিডিডিআরবির গবেষেকেরা। এখানে ১৬ হাজার ৫৩২টি পরিবারে মানুষ ৬০ হাজার ৭৮৬ জন। গবেষণায় ৭২১ জন গর্ভবতী নারী, ৪ হাজার ২৩৪ কিশোরী এবং দুই বছরের কম বয়সী ২ হাজার ৪৯৭ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিউট্রি-ক্যাপ নামে এ গবেষণাকাজ শেষ হয়েছে এ বছরের মে মাসে। কানাডা সরকারের আর্থিক সহায়তায় অ্যাডভান্সিং সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস (অ্যাডসার্চ) প্রকল্পের আওতায় আইসিডিডিআরবির পুষ্টি গবেষণা বিভাগ বেশ কিছু গবেষণা করছে। নিউট্রি-ক্যাপ এর একটি।

গবেষণায় কী দেখা গেল

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ঢাকা শহরে প্রায় পাঁচ হাজার বস্তি আছে। বস্তিতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাস। বস্তিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজার মানুষ বাস করে। ৮০ শতাংশ পরিবার এক কক্ষের ঘরে থাকে। ৯০ শতাংশ পরিবার টয়লেট ও সরবরাহকৃত পানি ভাগাভাগি করে।

নিউট্রি-ক্যাপের প্রধান গবেষক মোস্তফা মাহফুজ বলেন, বস্তির গর্ভবতী নারীরা প্রয়োজনের চেয়ে ৩১৪ শতাংশ বেশি শর্করা খান। গর্ভবতীদের ৮০ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৭৮ শতাংশ ভিটামিন এ, ৫৮ শতাংশ লৌহ এবং ৪৪ শতাংশ জিংকের স্বল্পতায় ভুগছেন। অন্যদিকে শিশুদের ৫৯ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। শিশুদের ২৭ শতাংশের উচ্চতা ও ২০ শতাংশের ওজন কম। এই বস্তির ৯১ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত।

আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা এই বস্তির গর্ভবতী নারী, কিশোরী ও দুই বছরের কম বয়সী শিশু—এই তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একীভূত সেবা প্যাকেজ চালু করে। এই প্যাকেজের আওতায় পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন এ দেওয়া হতো। এ ছাড়া ওজন, রক্তচাপ, রক্তে হিমোগ্লোবিন ও শর্করা নিয়মিত মাপা হতো। এর পাশাপাশি বস্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ ও প্রচারণা চালানো হয়।

অনুষ্ঠানে মোস্তফা মাহফুজ বলেন, গবেষণার আওতাধীন গর্ভবতী নারীদের গর্ভকালীন ওজন বেড়েছে, হাসপাতালে প্রসবের হার বেড়েছে। পাশাপাশি গর্ভপাত ও নবজাতকের মৃত্যু কমতে দেখা গেছে। কিশোরীদের হিমোগ্লোবিদের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে শিশুদের উচ্চতা ও ওজন বেড়েছে।

স্বাগত বক্তব্যে আইসিডিডিআরবির পুষ্টি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক থাডিয়াস ডেভিড মে বলেন, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতিতে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। এ গবেষণা প্রকল্পে মানুষকে তথ্য ও পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এডোয়ার্ড ক্যাবরেরা বলেন, এমন একটি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পেরে তিনি আনন্দিত। আইসিডিডিআরবি কোনো গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করলে তা থেকে বিশ্ববাসীর কিছু গ্রহণ করার থাকে।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ও আইসিডিডিআরবির প্রফেসর ইমিরেটাস শামস এল আরিফিন বলেন, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে গবেষণাটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, এর সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইস ড ড আরব র ক য লস য় ম অন ষ ঠ ন প রকল প বস ত ত বস ত র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

একুশ বছরে বাতিঘর, উৎসবে সাজবে কাল

২০০৫ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম শহরের চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে স্বল্প পুঁজি আর অল্প বই নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাতিঘরের। গত ১৭ জুন একুশ বছরে পা রাখে বাতিঘর। এ উপলক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা বাতিঘরে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তলায় আলাপ আড্ডা আবৃত্তি ও গানের মধ্য দিয়ে এ আনন্দ উদযাপন করা হবে। এতে লেখক-পাঠক-শিল্পী-সাংবাদিক ও শুভানুধ্যায়ীরা অংশ নেবেন।

বাতিঘরের প্রধান ৪ পুস্তক বিপণিতে প্রতিবছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে ঢাকা চট্টগ্রাম রাজশাহী ও সিলেট বাতিঘরে এবার আরও বড় উৎসব করা হবে। হবে পাঠক লেখক শিল্পী সাংবাদিকসহ সব পেশা ও শ্রেণির মানুষের মিলনমেলা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস ধরে চলবে নানা আয়োজন। তার মধ্যে রয়েছে চার বিভাগীয় শহরে বইমেলা আয়োজন, বই নিয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠান ও প্রকাশনা।

বই বিক্রির পাশাপাশি ২০১৭ সালে বাতিঘর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইতোমধ্যে বাতিঘর ৪০০-র বেশি বই প্রকাশ করছে। বাতিঘর ইউরোপ-আমেরিকার প্রকাশকদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বই প্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশ নিয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলায় নানা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করে আসছে বাতিঘর। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত অমর একুশে বইমেলায় প্যাভিলিয়ান ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন নকশা ও সজ্জার জন্য শীর্ষ পুরস্কার লাভ করেছে বাতিঘর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ