সিলেটে পরিবহন কর্মবিরতি নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা নাটকীয়তা। একপক্ষ ‘পরিবহন চলবে’ বলে ঘোষণা দেওয়ার একদিনের মাথায় আরেকপক্ষ পরিবহন ‘কর্মবিরতির’ ডাক দিয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস মালিক সমিতি এবং সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে মঙ্গলবার থেকে সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ফলে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সিলেটে গণপরিবহনসহ কোনো যানবাহন চলবে না বলে জানানো হয়।

গত ২ জুলাই নগরীর কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সিলেটে পণ্যবাহী কোনো ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চলবে না বলে ঘোষণা দেয় সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারসহ ৬ দফা দাবি মানা না হলে সিলেটজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানানো হয়। গত শনিবার থেকে তাদের এই কর্মসূচি শুরু হয়। এ কারণে ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। পণ্য পরিবহনকারী কোনো ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান সিলেটে চলাচল করছে না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলো নিজ গন্তব্যে ফেরত যেতে পারছে না। একই দাবিতে পুরো জেলায় শনিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

এ অবস্থায় গতকাল রোববার রাতে এক সভায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একাংশের সভাপতি ও জামায়াত নেতা লোকমান আহমদ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে বাস চলবে বলে ঘোষণা দেন। ফলে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়।

সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে পরিবহন-মালিক সমিতির নেতারা বিষয়টি পরিষ্কার করেন। তারা জানান, লোকমান আহমদের কর্মসূচির সঙ্গে তাদের কোনো মিল নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, আগে তাদের পাঁচ দফা দাবি থাকলেও দাবিনামায় নতুন করে সিলেটের জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারের দাবি যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে তারা ওই দাবি প্রত্যাহার করে নেন।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিক-আপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনার ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে।

বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের ওপর আরোপিত বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে হবে। সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাঙচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং সিলেটের পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সিলেটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে অবিলম্বে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের ময়নুল হক বলেন, লোকমান আহমদ কে? তাকে আমরা চিনি না। তার কোনো গাড়ি নেই। তিনি বাস মালিক সমিতির নেতাও হন। তিনি আমাদের কর্মসূচির সাথে আছেন কি নেই, তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা দাবি আদায়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে সিলেটের সব পাথর কোয়ারী বন্ধ। এতে পাথর সংশ্লিষ্ট সকলে চরম দুর্ভোগে আছে। সরকার পাথর লুটপাট বন্ধ করতে না পারলেও বৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহন করতে দিচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা ট্রাক, পিক-আপ, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া।

এর আগে রোববার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে ৮ জুলাই থেকে সিলেট জুড়ে কর্মবিরতির ঘোষণা কথা উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ‘সিলেটের আর কোনো কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হবে না’- সম্প্রতি সিলেট সফরে এসে এমন ঘোষণা দেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ঘোষণার পরপরই মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জাফলংয়ে তার গাড়ি বহর অবরোধ করে রাখে কয়েকজন মানুষ। এরপরই ফুঁসে উঠেন সিলেটের পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিকরা। তারা লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিতে থাকেন। দাবি ওঠে পাথর কোয়ারীগুলো থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর বহন সড়ক পর বহন ব স ম ন ব স পর বহন ম ল ক দ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

একপক্ষের কর্মবিরতি ঘোষণা, আরেকপক্ষের প্রত্যাহার

সিলেটে পরিবহন কর্মবিরতি নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা নাটকীয়তা। একপক্ষ ‘পরিবহন চলবে’ বলে ঘোষণা দেওয়ার একদিনের মাথায় আরেকপক্ষ পরিবহন ‘কর্মবিরতির’ ডাক দিয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস মালিক সমিতি এবং সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে মঙ্গলবার থেকে সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ফলে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সিলেটে গণপরিবহনসহ কোনো যানবাহন চলবে না বলে জানানো হয়।

গত ২ জুলাই নগরীর কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সিলেটে পণ্যবাহী কোনো ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চলবে না বলে ঘোষণা দেয় সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারসহ ৬ দফা দাবি মানা না হলে সিলেটজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানানো হয়। গত শনিবার থেকে তাদের এই কর্মসূচি শুরু হয়। এ কারণে ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। পণ্য পরিবহনকারী কোনো ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান সিলেটে চলাচল করছে না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলো নিজ গন্তব্যে ফেরত যেতে পারছে না। একই দাবিতে পুরো জেলায় শনিবার থেকে ৭২ ঘণ্টার পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

এ অবস্থায় গতকাল রোববার রাতে এক সভায় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির একাংশের সভাপতি ও জামায়াত নেতা লোকমান আহমদ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে বাস চলবে বলে ঘোষণা দেন। ফলে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়।

সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে পরিবহন-মালিক সমিতির নেতারা বিষয়টি পরিষ্কার করেন। তারা জানান, লোকমান আহমদের কর্মসূচির সঙ্গে তাদের কোনো মিল নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, আগে তাদের পাঁচ দফা দাবি থাকলেও দাবিনামায় নতুন করে সিলেটের জেলা প্রশাসকের প্রত্যাহারের দাবি যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে তারা ওই দাবি প্রত্যাহার করে নেন।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিক-আপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনার ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে।

বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের ওপর আরোপিত বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে হবে। সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাঙচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং সিলেটের পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সিলেটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে অবিলম্বে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের ময়নুল হক বলেন, লোকমান আহমদ কে? তাকে আমরা চিনি না। তার কোনো গাড়ি নেই। তিনি বাস মালিক সমিতির নেতাও হন। তিনি আমাদের কর্মসূচির সাথে আছেন কি নেই, তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা দাবি আদায়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে সিলেটের সব পাথর কোয়ারী বন্ধ। এতে পাথর সংশ্লিষ্ট সকলে চরম দুর্ভোগে আছে। সরকার পাথর লুটপাট বন্ধ করতে না পারলেও বৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহন করতে দিচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা ট্রাক, পিক-আপ, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া।

এর আগে রোববার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে ৮ জুলাই থেকে সিলেট জুড়ে কর্মবিরতির ঘোষণা কথা উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ‘সিলেটের আর কোনো কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হবে না’- সম্প্রতি সিলেট সফরে এসে এমন ঘোষণা দেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ঘোষণার পরপরই মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জাফলংয়ে তার গাড়ি বহর অবরোধ করে রাখে কয়েকজন মানুষ। এরপরই ফুঁসে উঠেন সিলেটের পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিকরা। তারা লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিতে থাকেন। দাবি ওঠে পাথর কোয়ারীগুলো থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ