২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার ফুফু দোয়া, যিনি গাজার একজন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন কিছু পাঠ্য কার্যক্রম প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছিলেন। পরদিন সকালে শিশুদের কাছ থেকে সেই কাজগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তিনি ছিলেন ভীষণ উচ্ছ্বসিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, পরদিন ৭ অক্টোবর যেন সব স্বাভাবিক জীবনের সমাপ্তি টেনে নিল। শুরু হলো এমন এক যুদ্ধ, যা সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল।

সেই দিন থেকে, ইসরায়েলি বিমান হামলা গাজার প্রতিটি কোনায় আঘাত হানতে শুরু করে—বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি কিন্ডারগার্টেনের শ্রেণিকক্ষও রেহাই পায়নি। আমার ফুফুর বাড়িটিও মাটির সঙ্গে মিশে যায়, যেখানে চাপা পড়ে যায় তাঁর পাঠদানের উপকরণ আর সেই খেলনাগুলো—যেগুলো তিনি তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিনেছিলেন, যেসব শিশুর বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার ছিল।

গত শীতে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের পাড়া ছেড়ে সরে যায়, তখন দোয়া স্মৃতির চিহ্ন খুঁজতে ধ্বংসস্তূপে ফিরে আসেন। ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং পাঠদানের উপকরণ, গানের খাতা, জ্যামিতির আকৃতি ও পশুর মূর্তিগুলো খুঁজে পাওয়ার আশা নিয়েই তিনি ফিরে আসেন। শেষমেশ তিনি শুধু একটি বর্ণমালার বই আর কিছু চিত্রসমৃদ্ধ গল্পের বই খুঁজে পান। সেগুলো তিনি একটি ছোট বাক্সে তুলে রাখেন, উদ্ধার করা কিছু পোশাক আর রান্নার সামগ্রীর পাশে। যেন সেগুলো নিঃশব্দে তাঁকে বলছিল, ‘হাল ছেড়ো না। এখনো আশা বেঁচে আছে।’

দোয়ার ঘরের মতোই, ইসরায়েলি বোমা তার কিন্ডারগার্টেনের শ্রেণিকক্ষকেও ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। তবে কয়েক মাস পর, শিক্ষার প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং গাজার শিশুদের অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে যেতে না দেওয়ার দৃঢ় সংকল্প থেকে, দোয়া আবার নতুন করে শুরু করেন। তিনি মাজাজি শরণার্থী শিবিরের একটি পাড়ায় ছোট একটি কক্ষ জোগাড় করেন।

পড়াশোনার জন্য ঘরটি আদর্শ ছিল না। তবু দোয়া পরিশ্রমে কোনো কমতি রাখেননি সে জায়গাটিকে শিশুদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাস্থানে রূপ দিতে। তিনি রঙিন ওয়ালপেপার ঝুলিয়েছেন, একটি ব্ল্যাকবোর্ড বসিয়েছেন এবং গাজার অবরোধ ও জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হওয়া সত্ত্বেও শিশুদের মানসিকভাবে শান্ত রাখতে রং, লেখার উপকরণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী গান চালানোর জন্য স্পিকার সংগ্রহ করেছেন।

মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী, যারা সবাই আশপাশ থেকে এসেছে, দোয়ার স্কুলে ভর্তি হয়। অনেক অভিভাবক, যাঁরা দৈনিক বোমাবর্ষণের আতঙ্কে থাকেন এবং গাজার ভেঙে পড়া যোগাযোগব্যবস্থার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পান না। যুদ্ধের আগে শিশুরা বাসে করে স্কুলে যেত এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরত। কিন্তু সেই সামান্য নিরাপত্তাটুকুও এখন নিখোঁজ—প্রতিদিনের সন্ত্রাসে ছিন্নভিন্ন।

যারা দোয়ার স্কুলে আসে, তারা বড় ভাই–বোন বা মা–বাবার সঙ্গে আসে। তারা ফিসফিস করে সতর্ক করে দেয়—‘কোয়াডকপ্টার’ ড্রোন ঘোরাঘুরি করছে এমন রাস্তা এড়িয়ে চলতে। এই ক্ষুদ্র, মারাত্মক ড্রোনগুলো কখনো সাহায্যের জন্য চিৎকার বা অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের মতো শব্দ করে, যাতে মানুষ ভুল করে এগিয়ে গিয়ে হামলার শিকার হয়।

ক্লাস চলাকালে হঠাৎ বিস্ফোরণে শিশুদের হাত থেকে কলম পড়ে যায়, তারা কানে হাত চাপা দিয়ে বসে পড়ে। দোয়া তাদের খেলা ও সান্ত্বনার মাধ্যমে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন, যদিও যুদ্ধের ক্ষত তাদের মনে গভীরভাবে বসে গেছে। তিনি লক্ষ করেছেন—এই যুদ্ধ শিশুদের মনোজগৎ বদলে দিয়েছে। রং করার বই, রংপেনসিলের বদলে তারা এখন আলোচনা করে রাজনীতি, আটা কিংবা জিনিসপত্রের দাম নিয়ে। এই বাস্তবতায় পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের অক্ষর শেখানো যে অনেক কঠিন, দোয়া আমাকে সেটি বলেছেন।

আমি যখন দোয়াকে জিজ্ঞেস করি, শিক্ষার্থীরা তাঁকে সবচেয়ে কঠিন কী প্রশ্ন করেছে। তিনি বলেন, এক শিশু তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল, যুদ্ধ কবে শেষ হবে? তারা এমন বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করে, যেন তাদের শিক্ষকই এর উত্তর জানেন। দোয়া আশা দেন, ‘খুব শিগগির আমরা আমাদের সুন্দর স্কুলে ফিরে যাব।’ তবে তিনি জানেন, কিছু শিশুর চোখে সন্দেহ রয়েই যায় আর সেটাই তাঁর হৃদয়কে সবচেয়ে বেশি ভারাক্রান্ত করে।

দোয়ার স্কুলের ১৩টি শিশুর প্রত্যেকের জীবনে আছে একটি করে অনন্য বেদনার গল্প। কেউ বসবাস করছে তাঁবুতে, কারণ তাদের ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। পুষ্টিহীনতা ও ক্ষুধার কারণে কেউ ভাঙা দাঁত, দুর্বল শরীর নিয়ে দিন পার করছে। আবার অনেকেই হারিয়েছে পরিবারের প্রিয়জনদের।

ইসরায়েলের গণহত্যা ও দখলদারত্বের নিষ্ঠুরতার মাঝেও দোয়া আঁকড়ে ধরে আছেন তাঁর অক্ষর চেনার বই এবং সেই একগুঁয়ে আশাকে—যে আশায় তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর শিক্ষার্থীরা একদিন মৃত্যু ও যুদ্ধের বাইরেও শব্দ শিখবে।

এই শিশুদের পক্ষ থেকে দোয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয় গাজার শিশুদের রক্ষায়, নিশ্চিত করে তাদের নিরাপদ শিক্ষা পাওয়ার অধিকার। তারা যেন একটি এমন বিশ্ব গড়ে তোলে, যেখানে শিশুদের শৈশব বিকশিত হতে পারে আর কোমল ডানাগুলো পাখা মেলতে পারে স্বপ্নের আকাশে।

গাদা আবু মুয়ালেক গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক এবং একজন ফ্রিল্যান্স লেখক

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘৯৫ শতাংশ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান’

পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাইমা কুরেশি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বিয়ে ও সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। তার দাবি—“৯৫ শতাংশ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান।”

কয়েক দিন আগে একটি পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন সাইমা কুরেশি। এ আলাপচারিতায়, নারীদের আয়, পুরুষদের বৈবাহিক দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এই অভিনেত্রী। 

আরো পড়ুন:

মেঘা থেকে অপু বিশ্বাস

‘ডিরেক্টর কোনদিন আর্টিস্ট পয়দা করতে পারে না’

সাইমা কুরেশি বলেন, “যেসব পুরুষ পরকীয়ায় আগ্রহী, তাদের উচিত দায়িত্বশীলভাবে বৈধভাবে বিয়ে করা। কারণ তাদের বেপরোয়া আচরণের কারণে পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতির হতে পারে।”

কারো অনূভূতি নিয়ে খেলতে বারণ করে সাইমা কুরেশি বলেন, “কারো অনুভূতি নিয়ে খেলার চেয়ে, একজন পুরুষের বৈধভাবে বিয়ে করা অনেক ভালো।” 

গোপন সম্পর্কের চেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করাই ভালো বলে মত সাইমা কুরেশির। তার ভাষ্য—“একজন পুরুষ দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে, সেটা কেন পরকীয়ার চেয়ে খারাপ হিসেবে বিবেচিত হয়?”

দ্বিতীয় বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি প্রসঙ্গে সাইমা কুরেশি বলেন, “যদি কোনো পুরুষের প্রথম স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি না দেন, তাহলেও ধর্মীয় দিক থেকে পুরুষকে স্ত্রীর অনুমতি নিতে বাধ্য করা হয়নি। কারণ ইসলাম এ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা দেয়নি।”

পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাইমা কুরেশি জানান, ‘পরিষ্কার ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত’ নেন এবং অবৈধ সম্পর্ক থেকে বিরত থাকেন। সাইমা কুরেশি বলেন, “ব্যক্তিগত চাহিদা ধর্মীয় নীতিমালার ভিত্তিতে পূরণ করা উচিত, সমাজের চাপে নয়।”

৫১ বছর বয়েসি সাইমা কুরেশির এসব মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ারর পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার বক্তব্যের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছেন।

বলে রাখা ভালো, সাইমা কুরেশি পাকিস্তানি অভিনেত্রী রোজিনার কন্যা। ২০০৫ সালে সৈয়দ নূরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাইমা কুরেশি। ২০১৮ সালে এ দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এ সংসারে তাদের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। মায়ের পথ অনুসরণ করে অভিনয়ে পা রেখেছেন পুত্র দানিয়াল খান। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাজী মামুনকে ফাঁসানো হয়েছে: যুব সংহতি
  • ‘ত্রাণকে দর কষাকষির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল’
  • বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু
  • কিশোরগঞ্জে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
  • মুসলিম জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ৯ উপায়
  • ১৭ ঘণ্টার মধ্যেই রাকসুর ফল প্রকাশ: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
  • দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
  • গুগল ম্যাপে দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে পড়লেন খালে
  • অ্যানথ্রাক্স ঝুঁকি: ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চলছে পশু জব
  • ‘৯৫ শতাংশ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান’