এইচএসসি পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞানে ভালো নম্বর কীভাবে পাবে
Published: 7th, July 2025 GMT
প্রিয় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থী, এ বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে পরীক্ষা দেবে, তাই হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে যথার্থ প্রস্তুতি নিয়েছ। অযথা ভয় পাবে না। হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে দুটি পত্রে পরীক্ষা হবে। যার মধ্যে উভয়পত্রে আর্থিক বিবরণী অধ্যায় থেকেই ৪০ নম্বরের বাধ্যতামূলক সৃজনশীল অংশে থাকবে, এই অধ্যায়টি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো ফলাফল করার একটি সুযোগ নিতে পারো।
হিসাববিজ্ঞান একটি বিষয়, যা আত্মবিশ্বাস ও চর্চার মাধ্যমে অনেক সহজ হয়ে ওঠে। মনে রেখো, বিষয়টি মুখস্থনির্ভর নয় বরং বিশ্লেষণমূলক ও হিসাবনির্ভর। হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রস্তুতি সহজ করার পাশাপাশি বেশি কমন নিশ্চিত করার জন্য কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো।
অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতির গুরুত্ব
কোন অধ্যায় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে, কোনগুলো বেশি নম্বর পাওয়া যায়, তা বোঝার জন্য বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করা জরুরি। হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্রের পুনর্বিন্যস্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে এ বছর তোমরা নির্ধারিত অধ্যায়গুলো বারবার চর্চা করবে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে-হিসাব সমীকরণ ও হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব, জাবেদা প্রস্তুতকরণ, দুঘরা, তিনঘরা ও অগ্রদত্ত নিয়মে খুচরা নগদান বই, নগদ প্রাপ্তি ও নগদ প্রদান জাবেদা প্রস্তুতকরণ, প্রচলিত ও সংশোধিত উভয় পদ্ধতিতে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুতকরণ,রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ, অশুদ্ধি সংশোধন–পরবর্তী রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ, কার্যপত্র প্রস্তুতকরণ, সমন্বয় দাখিলা, সমাপনী দাখিলা, বিপরীত দাখিলা জাবেদা প্রস্তুতকরণ, অবচয় ধার্যের ও হিসাবভুক্তকরণের পদ্ধতি, আর্থিক বিবরণী ও এর বিভিন্ন অংশ, বিশদ আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থার বিবরণী এর প্রস্তুতপ্রণালি। এই অধ্যায়গুলো থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে—অংশীদারি ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি অবণ্টন হিসাব, স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল পদ্ধতিতে অংশীদারদের মূলধন হিসাব প্রস্তুতকরণ, অংশীদারের চলতি হিসাব প্রস্তুতকরণ, যৌথ মূলধনি কোম্পানি, যৌথ মূলধনি কোম্পানির বিশদ আয় বিবরণী ও এর প্রস্তুত প্রণালি, প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে কোম্পানির আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ, অনুপাত বিশ্লেষণ, উৎপাদন ব্যয় বিবরণী প্রস্তুতকরণও পদ্ধতিতে মজুত পণ্যের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি। শুধু পঞ্চম অধ্যায় থেকে বিগত সব বোর্ডে দুটি করে প্রশ্ন এসেছিল। তোমরা হিসাববিদ্যা দ্বিতীয় পত্রে সংক্ষিপ্ত অধ্যায় থেকে পঞ্চম অধ্যায়সহ অন্য যেকোনো চারটি অধ্যায় ভালোভাবে চর্চা করলেই ভালো ফলাফল করার একটি মোক্ষম সুযোগ নিতে পারো।
সৃজনশীল অংশের জন্য
১.
২. কোনো প্রশ্নের যতটুকু অংশের শুদ্ধভাবে সমাধান করতে পারবে, ততটুকু অংশের জন্য নম্বর পাবে। তোমরা কতটুকু ভুল করলে কত নম্বর কাটা যাবে, তার চিন্তা দরকার নেই। একটু ভুল করলেই সম্পূর্ণ উত্তরটা কাটার দরকার নেই। তাই কোনো সৃজনশীল প্রশ্নের ক, খ কিংবা গ–এর কিছু অংশের সঠিক সমাধান করতে না পারলে বিচলিত হবে না।
৩. কোন প্রশ্নের উত্তর করার সময় মাথা ঠান্ডা রেখে যথাসম্ভব দ্রুত উত্তর লিখতে হবে যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাতটি প্রশ্নের উত্তর করা যায়।
৪. হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র যেহেতু একটি প্রায়োগিক বিষয়, তাই এ সৃজনশীল অংশে কোনো থিওরি প্রশ্ন থাকবে না। সব প্রশ্নই হবে গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যাসংক্রান্ত হবে। প্রতিটি প্রশ্নে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ ৩টি অংশ থাকবে। প্রশ্নের ‘ক’ অংশ সহজ যা ‘২’ নম্বর বরাদ্দ এই অংশের জন্য যথার্থ উত্তর করবে। খুব বেশি লেখার প্রয়োজন নেই। প্রশ্নের ‘খ’ অংশ মধ্যম যা ‘৪’ নম্বর বরাদ্দ, এই অংশটিতে প্রশ্নে যা চাওয়া হবে, তোমরা সমাধানে প্রয়োজনীয় সবকিছুই উল্লেখ করবে। প্রশ্নের ‘গ’ অংশ কঠিন মানের হবে, যা ‘৪’ নম্বর বরাদ্দ, এই অংশে তোমরা উত্তর করার সময় নিজেদের চিন্তা-চেতনা প্রতিফলন ঘটাবে। তোমরা মনে রাখবে হিসাববিজ্ঞানে যতটুকু ভুল করবে ততটুকু নম্বর কাটা যাবে। ৪ নম্বরের মধ্যে ৪ নম্বরই কাটা যায় না। প্রশ্নের উত্তর করার সময়, ধাপ ও চিন্তার ব্যাপকতার ওপর ভিত্তি করে নম্বর বিভাজন করতে হবে।
৫. তোমরা সময়ের দিকে খেয়াল রেখে যে যত বেশি অঙ্কের অনুশীলন করবে, সেই কেবল পরীক্ষায় অঙ্কের সমাধান করতে সহজ হবে। হিসাববিজ্ঞান অনুশীলন ছাড়া আয়ত্ত করা যায় না। প্রতিটি অঙ্ক নিজ হাতে করে শিখতে হবে। ক্যালকুলেশন ও পদ্ধতিগত সমাধান যত বেশি করবে, ততই আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
৬. বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্ন থেকে অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন আলাদা করে সমাধান করবে। এতে প্রশ্নের ধরন বুঝতে সুবিধা হবে। মডেল টেস্ট ও সময় ধরে পরীক্ষার মতো পরিবেশে নিজেকে যাচাই করবে। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ও সংজ্ঞাগুলো আলাদা করে নোট করবে। সূত্র ও সংজ্ঞা মুখস্থ কর সহজ উপায়ে, এগুলো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য খুবই জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সময় নোট রিভিশন দেবে।
বহুনির্বাচনি অংশ
হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র পত্রের পাঠ্যসূচির নির্ধারিত অধ্যায়ের সঙ্গে মিল রেখে বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলো বারবার পড়তে হবে। বহুনির্বাচনী এই অংশে মধ্যম বলে কিছু নেই। প্রত্যেকটি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের যথার্থতার কাছাকাছি গেলে হবে না, তোমাদের সঠিক উত্তর করতে হবে। বহুনির্বাচনি অপশনগুলো সাধারণত এমনভাবে থাকে, যা দেখে তোমাদের মনে হতে পারে ২–৩টিই সঠিক উত্তর। এমন পরিস্থিতিতে তোমাদের প্রস্তুতি এমন হতে হবে, যাতে সঠিক উত্তরের দিকে তোমাদের নজর যায়।
১. বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে অনেক কম সময়ে উত্তর করা যায়। তোমরা এ বছর ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করবে। ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা যায় না। তাই জানা-অজানা নির্ধারিত সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
২. কোনো বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করতে না পারলে সেটা নিয়ে সময় নষ্ট না করে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর করার চেষ্টা করবে। শেষে সময় পেলে ফেলে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তর করার চেষ্টা করবে।
৩. কোন বহুনির্বাচনি প্রশ্ন পড়ে কঠিন মনে হলে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। হয়তো দেখা যাবে যে বিষয়গুলো এমনভাবে আছে যে তোমরা যাচাই করে সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারবে।
৪. কোন বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর নির্বাচনে সন্দেহ দেখো দিলে প্রথমে নিশ্চিত ভুল উত্তরগুলো নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাহলে সঠিক উত্তরটি সহজেই অনুমান করা সম্ভব হবে। বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করার জন্য যেকোনো ভালো মানের বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা পড়ে অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি অংশ এবং বিগত বছরের বোর্ডের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।
পরীক্ষার আগে করণীয়
পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে তোমরা নির্ধারিত অধ্যায়গুলোর গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করবে। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও উত্তর দেখে অনুশীলন করবে। বিভিন্ন টেস্ট পেপার ও প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন সমাধান করবে। অঙ্ক করার সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অভ্যাস করবে। প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন শেষ হলে রিভিশন দেবে, নিজের তৈরি নোট বারবার পড়ে নিবে, পরীক্ষার এক দিন আগে সময় ধরে মডেল টেস্টের অনুশীলন করবে, সময় ব্যবস্থাপনার অভ্যাস গড়ে তুলবে।
সময় ব্যবস্থাপনা
পরীক্ষার হলে হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের সৃজনশীল অংশে গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যার প্রতিটি প্রশ্নের জন্য কত সময় বরাদ্দ করবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখ। কোনো থিওরি প্রশ্ন থাকবে না। সময়মতো সব কটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো। অতিরিক্ত সময় নষ্ট না করে যে প্রশ্নগুলো সহজে পারবে, সেগুলোর উত্তর আগে দেবে।
অপ্রয়োজনীয় উত্তর লেখা বা বেশি সময় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকো। গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যার সমাধানে প্রতিটি ছকে পেনসিলের ব্যবহার করবে, অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও গাণিতিক সমাধানে নিখুঁত ক্যালকুলেশন করবে। মনে রাখবে, প্রতিটি ১ নম্বরের জন্য তোমরা দুই মিনিট সময় পাবে, নম্বর ও সময় উভয়ের প্রতি খেয়াল রেখে তোমাকে উত্তর করতে হবে। যে সৃজনশীল প্রশ্ন তুমি পারবে না, সেখানে কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না । শিক্ষার্থীরা, তোমরা পরীক্ষার সময় প্রশ্নটি হাতে পেয়ে প্রথমে প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে সিদ্ধান্ত নেবে, প্রথমে কয়েক অংশের দুটি বাধ্যতামূলক প্রশ্নের সমাধান করবে, অতঃপর দুঃখ অংশে ৯টি থেকে যেকোনো পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর করবে, এ ক্ষেত্রে তোমরা অবশ্যই খেয়াল রাখবে, যে সৃজনশীলের গাণিতিক সমস্যার কয়েক, দুঃখ এবং গণ্ড তিনটি অংশের উত্তর তুমি ভালোভাবে পারবে, সেটি প্রথমে উত্তর করবে। একটি প্রশ্নের তিনটি অংশের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে করবে। পরীক্ষার হলে কোনো প্রশ্ন কঠিন মনে হলে ঘাবড়ে না গিয়ে শান্তভাবে চিন্তা করে উত্তর করার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে সময় নিয়ে অন্য প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং পরে সেই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে। পরীক্ষার শেষের দিকে ১৫ মিনিট আগে সতর্কতামূলক যে ঘণ্টা বাজবে, এই সময় তুমি তোমার লেখা বন্ধ করে, প্রশ্নের নম্বর অনুযায়ী উত্তরটি মিল আছে কি না, তা অবশ্যই একনজরে যাচাই করে নেবে ।
হিসাববিজ্ঞান এমন একটি বিষয়, যেখানে বোঝা ও প্রয়োগ দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থী শুধু মুখস্থ করে শিখতে চায়, অথচ এই বিষয় অনুশীলনভিত্তিক ও বিশ্লেষণমূলক। তাই মুখস্থের চেয়ে বুঝে শেখা ও হাতে-কলমে চর্চা করাই সফলতার মূল চাবিকাঠি। তোমরা এ বিষয়গুলোর প্রতি অধিক গুরুত্ব দিলে বোর্ড পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে এ প্লাস পাবে।
লেখক: মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী অধ্যাপক, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র য় গ ক সমস য স জনশ ল অ শ র প রস ত ত কর র চ ষ ট কর র সময় পর ক ষ র র জন য এই অ শ বর দ দ আর থ ক ন করত সময় ব ব যবস সময় ন ব বরণ র করব
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসির পর বিদেশে পড়াশোনা, এসওপি-বৃত্তি পেতে কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-পরবর্তী সময় উত্তম সময়। দেশে স্নাতক করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোর্স আউটলাইনসহ অনেক সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্নাতক স্তর থেকে বিদেশে পড়াশোনা শুরু করা গেলে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আর এ অসামঞ্জস্যতার আশঙ্কা থাকে না। তাই এইচএসসির পরপরই বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব হলে দূর ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে এই সুফলের জন্য দেশে থাকা অবস্থাতেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এইচএসসির পরপরই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক—
প্রবেশিকা পরীক্ষা
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন একাডেমিক পর্যায়ের প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগুলো হলো এসএটি (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) এবং এসিটি (আমেরিকান কলেজ টেস্টিং)। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর রিডিং, রাইটিং ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মতো প্রাথমিক দক্ষতাগুলো যাচাই করা হয়। স্যাটে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ স্কোর তুলতে হয়, সেখানে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসিটিতে ২৫ থেকে ৩০ স্কোর প্রয়োজন হয়। যুক্তরাজ্যের জন্য ইসিএএস (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস) ট্যারিফ বা এ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক কিছু পরীক্ষার ফলাফলকেও গুরুত্ব দেয়। যেমন যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের জন্য বিএমএটি (বায়োমেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্ট) অথবা ইউসিএটি (ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল অ্যাপটিটিউড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়।
ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা—আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এই আবশ্যকীয় যোগ্যতাটি যাচাইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বেশ কিছু পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন—
আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম)
টোয়েফেল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাস ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ)
পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ)
ডুওলিঙ্গো
এগুলোর মধ্যে আইইএলটিএস ও টোয়েফেল বহু বছর ধরে ইংরেজি ভাষাভাষীসহ অন্য ভাষার দেশগুলোতেও অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইইএলটিএস স্কোর সাধারণত ৬ থেকে ৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে থাকলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে আবেদন করা যায়।
অপর দিকে টোয়েফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর দেখাতে হয়। কিছু ইউরোপীয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) বা পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি ভাষায় হলেই ভর্তি নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি মূলত শুধু ইংলিশ মিডিয়াম ও ইংরেজি ভার্সন কলেজগুলোর জন্য প্রযোজ্য।
ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার দেশগুলোতে অধ্যয়নের জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আলাদা পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন জার্মানির ক্ষেত্রে টেস্টডিএএফ (টেস্ট অব জার্মান অ্যাস আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) বা ডিএসএইচ (জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সামিনেশন ফর ইউনিভার্সিটি এনট্রান্স) পাস করতে হয়। একইভাবে ফ্রান্সে গুরুত্ব দেওয়া হয় ডিএএলএফ (ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভান্সড ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ) পরীক্ষার ফলাফলকে।
আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের প্রয়োজনীয় নথি তৈরি—শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে কিছু দরকারি নথি প্রয়োজন হয়। প্রথমটি হচ্ছে স্টেটমেন্ট অব পার্পাস (এসওপি)। এখানে আবেদনকারীর একাডেমিক লক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা তার প্রোগ্রাম নির্বাচনের কারণগুলো উল্লেখ করতে হয়।
এরপরেই আসে লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)। এটি হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে সুপারিশনামা। সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এই সুপারিশ করে থাকেন। সংগত কারণেই এই লেটারের কয়েকটি কপি তৈরি করে রাখতে হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ থেকে ৩টি এলওআর সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
এসওপি ও এলওআরের সঙ্গে একটি সিভি বা রেজুমি ও কাভার লেটার বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট যুক্ত করা হলে আবেদনটি আরও শক্তিশালী হয়। সিভি বা রেজুমিতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে একাডেমিক ও একাডেমির বাইরের যাবতীয় অর্জনগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। পারসোনাল স্টেটমেন্টের আরও একটি নাম মোটিভেশনাল লেটার। এখানে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত কোর্সটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীর আবেগের বিষয়টি পেশাগত কায়দায় ফুটিয়ে তুলতে হয়।
সর্বোপরি, এসব নথি তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে।
ফাইল ছবি