আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের পর্যালোচনা শেষ হয়েছে। তাতে ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও আইএমএফ। এর ফলে আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের কাছ থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়ার আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আবার আইএমএফও ঋণের কিস্তি ছাড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে। আজ বুধবার পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আইএমএফ ও অর্থ মন্ত্রণালয়।

আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকায়, এরপর ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এবং পরে অনলাইনে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় আলোচনা হয়। এর মাধ্যমে ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার পর ঐকমত্যে পৌঁছেছে উভয় পক্ষ। এখন আইএমএফ নির্বাহী বোর্ড অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ ঋণের পরবর্তী কিস্তি পাবে। তবে এ জন্য রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও বিনিময় হার সংস্কারসহ কিছু শর্ত পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এদিকে আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াসহ কিছু শর্ত পালন নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন দেখা দেয়। তাতে ঋণের দুই কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। অবশেষে সেই জট খুলেছে।

এই কারণে ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনা শেষ হওয়ায় আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফের কাছ থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি জুনের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে আরও প্রায় ২০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাবে বলে প্রত্যাশা অর্থ মন্ত্রণালয়ের।

আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৩টি কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে ডলারের বিনিময় হার নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে দর-কষাকষি চলে আইএমএফ ও সরকারের মধ্যে। এর আগে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে গত ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আইএমএফের একটি মিশন ঢাকা ঘুরে যায়। তাতেও কোনো সমঝোতা হয়নি। আলোচনা গড়ায় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল ওই বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানেও কোনো সমঝোতা হয়নি। এরপরই বাংলাদেশ ও আইএমএফ ৫ ও ৬ মে দুই দিন ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে বৈঠক করে। তাতেও কোনো সমঝোতা হয়নি। এরপর সরকারের মধ্যে থেকে এই ঋণ না নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইএমএফের ঋণ থেকে সরে না আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজস্ব খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বা আইআরডি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত সোমবার রাতে এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে নতুন দুটি বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

এদিকে আজ এক বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি কঠোর নীতি গ্রহণ, কর অব্যাহতি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, বিনিময় হারকে নমনীয় করা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করা, দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আইনি সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, শাসনব্যবস্থা ও স্বচ্ছতা বাড়িয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় টেকসই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ ও রাজস্ব সংস্কার প্রভৃতি বিষয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে। বিবৃতিতে আইএমএফ আরও জানায়, ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের পর্যালোচনা শেষে ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা। এখন আইএমএফের বোর্ডে অনুমোদন পেলে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড় হবে।

এর আগে আজ দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইএমএফের চতুর্থ পর্যালোচনা সফলভাবে শেষ হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ মিশন সম্পন্ন হওয়ার পর নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় আরও বলছে, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সব বিষয় সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করে উভয় পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কারকাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। চতুর্থ পর্যালোচনার ‘স্টাফ লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট’ সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বাজেট–সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত ও জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এসব সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধু কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ডলারের দাম বাজারের হাতে, থাকবে নজরদারি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে দীর্ঘ দর-কষাকষির পর মার্কিন ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে দাম কী হবে, তা ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ডলারের দাম আরও বাজারভিত্তিক হবে, সঙ্গে থাকবে জোরদার তদারকি। আইএমএফের ঋণের শর্তপূরণের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও এ পদ্ধতি পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হবে কি না, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডলারের দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে না যায়, সে জন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতি জরুরি প্রয়োজনে ডলারের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে ৫০ কোটি ডলার দিয়ে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গতকাল বুধবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং আমরা এ সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আইএমএফের সঙ্গে সময়টা নিয়েই একরকম দর-কষাকষি হয়। গত কয়েক মাসে বিনিময় হারে কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো হস্তক্ষেপও করেনি। এমনকি কোনো ডলার বিক্রি করিনি। বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই আমরা বাজার থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়িয়েছি। সরকারের ব্যয় সংকোচন এবং প্রবাসী আয় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দাম নির্ধারণের বিষয়ে গভর্নর স্পষ্ট করে বলেন, ‘বাজারভিত্তিক মানে এই নয় যে ডলার যেকোনো দামে কেনাবেচা হবে। আমাদের সরবরাহ পরিস্থিতি এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। বড় ধরনের প্রয়োজন দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে। ডলারের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট বরদাশত করা হবে না। ডলারের দাম দুবাইয়ে নয়, দেশেই নির্ধারিত হবে।’

গভর্নরের এ ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে দিনে দুবার ডলারের দামের তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে কেনা ও বিক্রির মধ্যে এক টাকা পর্যন্ত ব্যবধানের বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। ফলে কেনা ও বিক্রির দামের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা থাকল না। পাশাপাশি গতকাল থেকেই ব্যাংকগুলোতে কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে তদারকি শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলো গতকাল ১২২ টাকা ৭০ পয়সা দামে প্রবাসী আয় কিনেছে। বিক্রি করেছে ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দামে। খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৪ টাকায়।

এদিকে গত রাতে আইএমএফের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এক বিবৃতিতে বিনিময় হারের নমনীয়তা বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছেন। নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন তিনি।

যেভাবে দাম নির্ধারণ হবে

টাকা-ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সেটি ‘ক্রলিং পেগ’ নামে পরিচিত। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১১৯ টাকা দামের সঙ্গে ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে ও কমতে পারে। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ১ টাকা ব্যবধানে ডলার বিক্রি করা যায়। ফলে ডলারের দাম এখন সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হওয়ার কথা। তবে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এখন আইএমএফের ঋণের শর্ত মেটাতে আরও বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে গতকাল জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত ব্যাংক শাখাগুলো (এডি ব্রাঞ্চ) তাদের গ্রাহক ও ডিলারদের কাছে নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে বিনিময় হার নির্ধারণ করতে পারবে। এডি শাখাগুলো থেকে

প্রতিদিন দুবার বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সরবরাহ করবে। এক লাখ ডলারের বেশি কেনাবেচার তথ্য বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এ ছাড়া বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। পাশাপাশি আগের মতো বৈদেশিক মুদ্রার কেনাবেচার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনের একটি ভিত্তি মূল্য বা রেফারেন্স প্রাইস প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ ভিত্তি মূল্য প্রকাশ করা হবে।

এদিকে গতকাল সকালে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) ডেকে বাজারভিত্তিক দামে লেনদেন করতে বলা হয়েছে। তবে এখনকার দামের সঙ্গে যেন খুব বেশি পার্থক্য না হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের আগে ভালো প্রবাসী আয় আসছে। গত কয়েক মাসের ডলার ও রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো। এ ছাড়া লেনদেন ভারসাম্যেও উন্নতি হচ্ছে। তাই ডলারের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই মাসে ডলারের দাম নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ভিত্তি মূল্য প্রকাশ করবে, পাশাপাশি দাম তদারকিও করবে। ব্যাংকগুলোকে বুঝেশুনে দাম ঠিক করতে হবে। এখন প্রবাসী ও রপ্তানি আয় ভালো। ফলে বাজার উন্মুক্ত হলেও দামে এখনই তেমন প্রভাব পড়বে না। দেখা যাক কত দিন এভাবে চলে। আশা করি, ডলার নিয়ে একটা স্বস্তিদায়ক সময়ের সূচনা হতে যাচ্ছে।’

ডলার ও রিজার্ভে স্বস্তি

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ, বেনামি ঋণ, তারল্যসংকট ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা সমস্যা থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রা ও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় স্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, ২০২২ সালের শুরুতে ডলারের দামে যে অস্থিরতা শুরু হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তা থেমে গেছে। অর্থ পাচার কমে আসায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ছে। এতে রিজার্ভও বাড়ছে। এ ছাড়া আর্থিক হিসাবের ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্তে পৌঁছেছে, কমে এসেছে চলতি হিসাবের ঘাটতি।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। সেবার প্রবাসীরা পাঠান ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে আন্তদেশীয় বাণিজ্য নিষ্পত্তি সংস্থা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বকেয়া পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে রয়েছে। অন্যদিকে মোট রিজার্ভ রয়েছে ২৫ বিলিয়নের ওপরে।

এর মধ্যে আইএমএফের ঋণের কিস্তিসহ বিভিন্ন বিদেশি ঋণদাতা সংস্থা থেকে আগামী জুনের মধ্যে ৩৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে আইএমএফের পর্ষদে আগামী মাসে ঋণের কিস্তি পাশের সূচি রয়েছে। এর ফলে সামনে রিজার্ভ আরও বাড়বে।

আইএমএফ ঋণের ধারাবাহিকতা থাকায় ব্যাংক সংস্কারে বৈশ্বিক সমর্থন মিলছে জানিয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আশা করি, ডলারের বিনিময় হারের বিষয়ে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা সঠিক। বাজার আমাদের সমর্থন দেবে। দাম এখনকার আশপাশে থাকবে। ডলার বাজারকে স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সমগ্র জাতিকে ভূমিকা রাখতে হবে। ডলারের দাম নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সবাই যে যার মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যান। দেখবেন, সবকিছুই স্বাভাবিকভাবেই চলছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডলারের দাম বাজারের হাতে, থাকবে নজরদারি
  • সতর্কতার সঙ্গে পর্যলোচনা করে সংস্কার নিয়ে সম্মত উভয় পক্ষ
  • আইএমএফের চতুর্থ রিভিউ সফল : অর্থ মন্ত্রণালয়
  • বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর ঘোষণা, আসছে আইএমএফের কিস্তি
  • ডলারের দাম এখন থেকে ঠিক করবে ‘বাজার’: গভর্নর
  • জুনের মধ্যে আসবে বিদেশি ঋণের সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার: গভর্নর 
  • আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ
  • বিনিময় হার নমনীয় করবে বাংলাদেশ, আইএমএফ দেবে ঋণের কিস্তি
  • ডলারের বিনিময় হারে নমনীয়তা আসছে