ভারত যেভাবে প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছিলো
Published: 17th, May 2025 GMT
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রতিযোগিতা চলছিলো শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে এর মধ্যে ভারত ছিল ষষ্ঠ অবস্থানে। ১৮ মে, ১৯৭৪ প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেয় ভারত। হোমি সেথনার তত্ত্বাবধায়নে পরমাণু বোমাটি অ্যাসেম্বল করা শুরু করে। দুই দিন পর ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করেন। সেথনা বলেছিলেন, ‘পারমাণবিক ডিভাইস প্রস্তুত আছে। এখন যেন সেটা সরিয়ে ফেলতে বলবেন না। কারণ সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। এখন যেন আবার আমাদের পিছিয়ে যেতে বলবেন না।’’এর প্রতিউত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘চালিয়ে যান, আপনি ভয় পাচ্ছেন নাকি?’’
ইন্দিরা গান্ধীর অনুমোদন নিয়ে পরের দিন রাজস্থানের পোখরানে ফেরেন সেথনা। এরপর পুরো দলকে একত্রিত করে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘এই পুরো প্রক্রিয়া যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে কার ধর থেকে মাথা আলাদা করা হবে?’’ প্রশ্নটি শেষ হতে না হতেই রাজগোপাল চিদাম্বরাম উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘আমার।’’ পিকে আয়েঙ্গার বলেছিলেন, ‘‘কারও ধড় থেকে মাথা আলাদা করার প্রয়োজন নেই। যদি পরীক্ষা ব্যর্থ হয় তাহলে বুঝতে হবে পদার্থ বিদ্যার তত্ত্ব ঠিক ছিল না।’’
আঠারো তারিখ সকাল বেলা পোখরানের মরুভূমির তাপমাত্রা ছিল ভয়ানক। বিষ্ফোরণ দেখার জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রের পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটি মাচার মতো তৈরি করা হয়েছিল। হোমি সেথনার সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ পর্যয়ের সামরিক বাহিনী এবং বিজ্ঞানীদের একটি দল। সকাল আটটায় পরীক্ষা চলানোর কথা ছিল। কিন্তু এর আগে বিজ্ঞানী বিরেন্দ্র সিং শেঠীকে বহনকারী জিপটি বিগড়ে যায়। তিনি পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা, তা শেষবার দেখতে। উপায় না দেখে জিপটি ফেলে দুই কিলোমিটার হেঁটে এসেছিলেন নিয়ন্ত্রণকক্ষ পর্যন্ত। সেনাপ্রধান জেনারেল বিভূরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বিষ্ফোরণের খুব কাছে জিপটি নিয়ে এখন কি করবেন? তিনি বলেছিলেন, ওটাকে উড়িয়ে দাও। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে টো-ট্রাক দিয়ে জিপটি টেনে নিরাপদ স্থানে নিয়ে এসেছিলেন। এই কারণে পরীক্ষামূলক বিষ্ফোরণটি ঘটাতে পাঁচ মিনিট দেরি হযেছিল।
আরো পড়ুন:
আচমকাই ফরাক্কা ব্যারেজ ঘিরে ফেলল সেনা, এল কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ
পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধে নতুন পরিকল্পনা ভারতের
লাউড স্পিকারে কাউন্ট-ডাউন শুরু হলো। পাঁচ পর্যন্ত গুণে হাই ভোল্টেজের সুইসটি অন করেন বিষ্ফোরণ দলের নেতা প্রণব দস্তিদার। কয়েকফুট দূরে বসানো মিটারে দেখা যায় যত ভোল্টেজ দরকার তার মাত্র দশ ভাগের একভাগ পরমাণু ডিভাইসটিতে যাচ্ছে। দস্তিদারের সহকারী আতঙ্কে বলে ওঠেন, ‘আমরা কি থেমে যাবো?’ কিন্তু দাস্তিদার বুঝেছিলেন মাটির যে খাদে বোমাটি বসানো তার ভেতরে খুব বেশি আদ্রতা থাকার কারণে মিটার রিডিং ভুল দেখাচ্ছে।
এদিকে হোমি সেথনা ভেবেছিলেন বিষ্ফোরণ থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজা রামান্না তার বইতে লিখেছেন, ‘‘সে সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিজ্ঞানী ভেঙ্কাটেসান সংস্কৃতা ভাষায় ক্রমাগত মন্ত্র জপে যাচ্ছিলেন। এক সময় তিনি মন্ত্র জপা থামিয়ে দিলেন। সবাই ভাবছিলো, সব শ্রম বুঝি বৃথা গেলো। কিন্তু হঠাৎ করে মাটি থেকে পাহাড়ের মতো জেগে উঠলো বালু। মিনিটের মধ্যে শূন্যে ভেসে থেকে তা আবার ধীরে ধীরে নিচে পড়তে আরম্ভ করলো। ’’
শুধুমাত্র এই খবরটি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছিল। সেদিন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান বাজছিলো। সেই গান থামিয়ে দিয়ে মাঝখানে ঘোষণা আসে, ‘‘আজ সকাল আটটা বেজে পাঁচ মিনিটের সময় পশ্চিম ভারতের একটি অপ্রকাশিত স্থানে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো মাটির নিচে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত।’’
সেবার আমেরিকার কৃত্রিম উপগ্রহ এবং গোয়েন্দার চোখ ফাঁকি দিয়ে আরও দুইটি পারমাণবিক বিষ্ফোরণ ঘটায়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বল ছ ল ন পর ক ষ ইন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথমবারের মতাে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দু’দিন বাকি থাকতেই ৩০ বিলয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২৮ জুন পর্যন্ত বৈধ চ্যানেলে এসেছে ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬৩০ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এর আগে করোনার প্রকোপ শুরুর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার এসেছিল। এতদিন সেটিই ছিল অর্থবছরের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এদিকে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২৮ মাস পর ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের ২৮ দিনে প্রবাসীরা ২৫৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৩৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ জালিয়াতি বন্ধ ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হুন্ডি চাহিদা কমেছে। যে কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে।
রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। এর পর ওই মাসের ১৫ তারিখ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এ ছাড়া সব সময়ই এখনকার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল। গত মে মাসে ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার। তবে বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ প্রবাহের কারণে ডলার দীর্ঘদিন ধরে ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে।
২০২৩ সালে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালুর পর থেকে রিজার্ভের তিনটি হিসাব হচ্ছে। ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণসহ গ্রস রিজার্ভের হিসাব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণ বাদ দিয়ে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল এবং আগামী এক বছরে সরকারি পরিশোধের হিসাব বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব করা হচ্ছে। গতকাল বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে এই পদ্ধতিতে হিসাব প্রকাশ শুরুর পর যা সর্বোচ্চ। ওই মাসে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া গতকাল নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় যেখানে জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এর মানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিট রিজার্ভ বেশি রয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। অর্থ পাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর
আগের সরকারের ৩৭০ কোটি ডলারের বকেয়া পরিশোধ করেছে। এর পরও গত ১০ মাসে রিজার্ভ বেড়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।