এক দশক পর আবার ইরানি হজযাত্রী পরিবহন শুরু করল সৌদি উড়োজাহাজ সংস্থা
Published: 19th, May 2025 GMT
সৌদি আরবের উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইনাস দীর্ঘ এক দশক পর আবার ইরানি হজযাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। এটিকে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সৌদি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘গত শনিবার তেহরানের ইমাম খোমেনি বিমানবন্দর থেকে ইরানি হজযাত্রী পরিবহন শুরু করেছে ফ্লাইনাস।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরানের মাশহাদ শহর থেকেও ফ্লাইট চালু করা হবে। এর মাধ্যমে ৩৫ হাজারের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে যাত্রা করতে পারবেন।
ফ্লাইনাস হলো সৌদি আরবভিত্তিক একটি স্বল্প খরচের উড়োজাহাজ সংস্থা। এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
সৌদি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ওই কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, এসব ফ্লাইট বাণিজ্যিক নয়, কেবল হজের উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।
চলতি বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যাওয়া শুরু করেছেন।
২০১৬ সালে সুন্নি-অধ্যুষিত সৌদি আরবে শিয়া ধর্মীয় নেতা নিমর আল-নিমরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে শিয়া-অধ্যুষিত ইরানে বিক্ষোভ চলার সময় তেহরানে সৌদি দূতাবাস ও মাশহাদের কনস্যুলেটে হামলা চালানো হয়। এর জের ধরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
সেই বছর কোনো ইরানি হজযাত্রীকে সৌদি আরবে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ, দুই দেশের কেউই তখন ইরানি হজযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেনি।
পরে ইরানি হজযাত্রীদের হজে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলেও কেবল ইরানের চার্টার্ড ফ্লাইটেই সৌদি আরবে প্রবেশের সুযোগ পেতেন তাঁরা। তবে ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতা হয়। এর পর থেকে দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে হজের সময় পদপিষ্ট হয়ে ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি হাজি প্রাণ হারান। এর মধ্যে কয়েক শ ইরানি নাগরিক ছিলেন।
সম্প্রতি দুই দেশ নতুন করে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সফর হয়েছে। এমনকি ২০২৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে গিয়ে গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি আরব-ইসলামিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইরান এয়ার সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর দাম্মাম ও মাশহাদের মধ্যে আবারও ফ্লাইট চালু করে।
গত মাসে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান ইরানে এক বিরল সফর করেন। ওই সফরে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এই পদক্ষেপগুলো এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি নতুন চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান চার দফা বৈঠক করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় অঞ্চল সফরকালে ইঙ্গিত দিয়েছেন, দুই পক্ষ একটি চুক্তির ‘কাছাকাছি’ পৌঁছেছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তেহরান যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে ‘খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে’।
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের এই সফরের ঠিক কয়েক দিন আগে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সৌদি আরব সফর করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৭২৫ বছর আগের ম্যাগনা কার্টার মূল কপি হার্ভার্ডে
ম্যাগনা কার্টাকে মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মূল কপি পাওয়া দুষ্কর। এই দলিলের মূল কপি প্রায় ৮০ বছর ধরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু এই কপিকে ২০২৩ সালের আগপর্যন্ত অনুলিপি বা নকল বলে ধারণা করা হয়েছিল।
১৯৪৬ সালে হার্ভার্ড ল স্কুল লাইব্রেরি ২৭ ডলার ৫০ সেন্টে ম্যাগনা কার্টার একটি কপি কেনে। লন্ডনের বই ব্যবসায়ী সুইট অ্যান্ড ম্যাক্সওয়েল থেকে কেনা এই কপি ছিল বিবর্ণ ও দাগযুক্ত। মূল নয়, অনুলিপি হিসেবেই দলিলটি কেনা হয়েছিল।
সুইট অ্যান্ড ম্যাক্সওয়েল কর্তৃপক্ষ বিক্রির এক মাস আগে সথেবির নিলাম থেকে কিনেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাবেক এক বৈমানিক সথেবির কাছে মাত্র ৪২ পাউন্ডে এটি বিক্রি করেছিলেন। এই বৈমানিক এই কপিকে ভুলবশত ১৩২৭ সালের বলে জানিয়েছিলেন, যা কিনা ছিল রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডের সময়ের।
কেনার পর ম্যাগনা কার্টার কপিটি তালিকাভুক্ত করে হার্ভার্ড ল স্কুল লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ। অনুলিপি হিসেবেই তা তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর কেটে যায় প্রায় ৮০ বছর।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কিংস কলেজ লন্ডনের ইতিহাসবিদ ডেভিড কার্পেন্টার অনলাইনে হার্ভার্ডের কপিটি পর্যালোচনা করেন। বিশ্লেষণ এবং মিলিয়ে দেখার পর তিনি বিস্মিত হয়ে যান। এটি যে অনুলিপি নয়, দুষ্প্রাপ্য মূল সংস্করণ!
কার্পেন্টার বিষয়টি দ্রুত ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঙ্গোলিয়ার অধ্যাপক নিকোলাস ভিনসেন্টকে জানান। তাঁরা দুজনেই নিশ্চিত করেন, এটি অনুলিপি নয়, ম্যাগনা কার্টার মূল কপি। তবে ১২১৫ সালেরটি নয়। এটি ১৩০০ সালের ম্যাগনা কার্টার একটি মূল কপি, যা রাজা প্রথম এডওয়ার্ডের সংস্করণ হিসেবে পরিচিত। এই হিসাবে মূল দলিলটির বয়স ৭২৫ বছর পার হয়ে গেছে।
ম্যাগনা কার্টা প্রথম গৃহীত হয়েছিল ১২১৫ সালে রাজা জনের আমলে। বিশ্বজুড়ে সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তি হিসেবে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত ১২১৫ সালের ম্যাগনা কার্টার চারটি কপি সংরক্ষিত আছে। ১৩০০ সালের সংস্করণের আছে সাতটি। এর মধ্যে হার্ভার্ডে একটি।