সৌদি আরবের উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইনাস দীর্ঘ এক দশক পর আবার ইরানি হজযাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। এটিকে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সৌদি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘গত শনিবার তেহরানের ইমাম খোমেনি বিমানবন্দর থেকে ইরানি হজযাত্রী পরিবহন শুরু করেছে ফ্লাইনাস।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরানের মাশহাদ শহর থেকেও ফ্লাইট চালু করা হবে। এর মাধ্যমে ৩৫ হাজারের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে যাত্রা করতে পারবেন।

ফ্লাইনাস হলো সৌদি আরবভিত্তিক একটি স্বল্প খরচের উড়োজাহাজ সংস্থা। এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

সৌদি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ওই কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, এসব ফ্লাইট বাণিজ্যিক নয়, কেবল হজের উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।

চলতি বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যাওয়া শুরু করেছেন।

২০১৬ সালে সুন্নি-অধ্যুষিত সৌদি আরবে শিয়া ধর্মীয় নেতা নিমর আল-নিমরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে শিয়া-অধ্যুষিত ইরানে বিক্ষোভ চলার সময় তেহরানে সৌদি দূতাবাস ও মাশহাদের কনস্যুলেটে হামলা চালানো হয়। এর জের ধরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

সেই বছর কোনো ইরানি হজযাত্রীকে সৌদি আরবে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ, দুই দেশের কেউই তখন ইরানি হজযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেনি।

পরে ইরানি হজযাত্রীদের হজে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলেও কেবল ইরানের চার্টার্ড ফ্লাইটেই সৌদি আরবে প্রবেশের সুযোগ পেতেন তাঁরা। তবে ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতা হয়। এর পর থেকে দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে হজের সময় পদপিষ্ট হয়ে ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি হাজি প্রাণ হারান। এর মধ্যে কয়েক শ ইরানি নাগরিক ছিলেন।

সম্প্রতি দুই দেশ নতুন করে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সফর হয়েছে। এমনকি ২০২৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে গিয়ে গাজা যুদ্ধ নিয়ে একটি আরব-ইসলামিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইরান এয়ার সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর দাম্মাম ও মাশহাদের মধ্যে আবারও ফ্লাইট চালু করে।

গত মাসে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান ইরানে এক বিরল সফর করেন। ওই সফরে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এই পদক্ষেপগুলো এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি নতুন চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান চার দফা বৈঠক করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় অঞ্চল সফরকালে ইঙ্গিত দিয়েছেন, দুই পক্ষ একটি চুক্তির ‘কাছাকাছি’ পৌঁছেছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তেহরান যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে ‘খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে’।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের এই সফরের ঠিক কয়েক দিন আগে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সৌদি আরব সফর করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজয ত র ফ ল ইট

এছাড়াও পড়ুন:

ইইউর বাইরের দেশে নতুন ৫ লাখ কর্মভিসা দেবে ইতালি

শ্রমিকসংকট মোকাবিলায় বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির কৌশলের অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বহির্ভূত দেশগুলোর নাগরিকদের প্রায় ৫ লাখ নতুন কর্মভিসা দেবে ইতালি।

২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এ ভিসা দেওয়া হবে বলে গতকাল সোমবার ইতালির মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী বছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০টি ভিসা দেওয়া হবে। পরে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জনকে বৈধপথে কর্মভিসা নিয়ে ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

ডানপন্থী জোটের প্রধান হিসেবে প্রায় তিন বছর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এ ধরনের উদ্যোগ নিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তাঁর সরকার ইতিমধ্যে অভিবাসীদের জন্য সাড়ে ৪ লাখের বেশি পারমিট ইস্যু করার কথা জানিয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব পারমিট দেওয়া হচ্ছে।

ইতালির জর্জিয়া মেলোনি সরকার ইতিমধ্যে অভিবাসীদের জন্য সাড়ে ৪ লাখের বেশি পারমিট ইস্যু করা শুরু করেছে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব পারমিট দেওয়া হচ্ছে।

নতুন শ্রমিক নেওয়ার পাশাপাশি, মেলোনি অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া দ্রুত করা ও ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারকারী দাতব্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
গতকালের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শ্রম ও শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এবং গত কয়েক বছরে জমা পড়া প্রকৃত কর্মভিসার আবেদন যাচাইয়ের ভিত্তিতে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে; যাতে ব্যবসার প্রয়োজন মেটানো যায় ও কার্যক্রমটি বাস্তবসম্মত হয়।’

বয়স্ক জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও নিম্ন জন্মহার ইউরো অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালিতে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। ইতালিতে ২০২৪ সালে নতুন শিশু জন্মের চেয়ে ২ লাখ ৮১ হাজার বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট জনসংখ্যা ৩৭ হাজার কমে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজারে নেমে গেছে। এক দশক ধরেই দেশটিতে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

ইতালির কৃষি-পেশাজীবীদের সংগঠন কোলদিরেত্তি সরকারের এ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি মাঠে শ্রমিকের সহজলভ্যতা ও দেশের খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনবে।মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি, ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গত রোববার স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকাকে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, ‘বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

চলতি জনসংখ্যার হ্রাস ঠেকাতে এবং বর্তমান জনসংখ্যার স্তর ধরে রাখতে ইতালিকে ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত ১ কোটি অভিবাসী গ্রহণ করতে হবে—ওসেরভাতোরিও কন্তি পাব্বলিচি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে।

আরও পড়ুনইতালির ভিসা ভোগান্তিতে ৬০ হাজার কর্মী ১৫ অক্টোবর ২০২৪আরও পড়ুনসম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ইতালিতে কর্মী কম যাচ্ছেন, কারণ কী ১০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গরিব পাচ্ছে বিদ্যুৎ ভর্তুকির ছিটেফোঁটা, লাভবান ধনীরা
  • র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে কুবির একটি ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, তদন্ত
  • আবেগে নেইমারের স্বাক্ষর করা বল নিয়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ড
  • ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়
  • শিক্ষার মান বাড়বে কীভাবে
  • আগের পাঁচ মাসের চেয়ে জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি, ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা
  • প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে সুবাতাস
  • লুকিয়েও বাঁচেন না কাব্য, ক্যামেরাম্যান খুঁজেই ফেলে!
  • কনটেইনার পরিবহনে ৪৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল চট্টগ্রাম বন্দর
  • ইইউর বাইরের দেশে নতুন ৫ লাখ কর্মভিসা দেবে ইতালি