সাত কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, সাত কলেজ থেকে তিতুমীরকে আলাদা করে স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

আজ সোমবার দুপুরে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সংসদের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্য’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রফিক উদ্দীন রায়হান।

লিখিত বক্তব্যে রফিক উদ্দীন রায়হান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে শিক্ষা সিন্ডিকেটের প্রেসক্রিপশনে চাপিয়ে দেওয়া কথিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাব সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের যে ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিন।’

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—তিতুমীরের জন্য স্বতন্ত্র কাঠামো গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা, কলেজের জন্য জমি বরাদ্দ, শিক্ষার্থীদের আবাসন–সংকট নিরসন, শিক্ষক–সংকট সমাধান, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার-গ্রন্থাগার নির্মাণ এবং সহশিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রমে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া।

দ্রুত এসব দাবি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অতীতের যেকোনো কর্মসূচির চেয়ে ‘কঠিনতম কর্মসূচি’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় লিখিত বক্তব্যে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৯৪ পৃষ্ঠার একটি লিখিত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল। সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পক্ষে তাঁর একান্ত সচিব এম আমিনুল ইসলাম সেটা গ্রহণ করেন। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েও প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যৌক্তিকতা এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণ করে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো সাড়া না পেয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে একটি ‘শিশুসুলভ’ উত্তর জানা যায়—প্রতিবেদনটি নাকি মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে গেছে।

আরও পড়ুনসাত কলেজে নতুন প্রশাসক, প্রধান দপ্তর ঢাকা কলেজে২০ ঘণ্টা আগে

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ৩ ডিসেম্বর ‘সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যৌক্তিকতা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে কমিটি গঠন’ শিরোনামে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। যদিও সেই কমিটির প্রতিবেদন আজও প্রকাশ করা হয়নি। কোনো নির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর বাকি ছয়টি কলেজের সঙ্গে মিলিয়ে সাত কলেজের জন্য আরেকটি প্রহসনমূলক কমিটি গঠন করা হয়। রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে ওই প্রহসনের কমিটির ডাকে সাড়া দিলেও গত ৯ জানুয়ারি ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে উপস্থিত হয়ে আবার তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে। তাঁদের নিঃশর্ত অবস্থান স্পষ্ট করে।

আরও পড়ুনসাত কলেজের অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষার সম্ভাব্য সময়সূচি প্রকাশ৫ ঘণ্টা আগে

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত সাত দফার মধ্যে ছয়টি দফা মেনে নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যক্রম শুরুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি; বরং সেই প্রহসনের কমিটির মাধ্যমেই তথাকথিত ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ (ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারি তিতুমীর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আহমেদ বলেন, ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন অন্তর্বর্তী প্রশাসন করা হয়েছে, সেভাবে তিতুমীর কলেজকে সেখান থেকে আলাদা করে প্রশাসন গঠন করে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে এখনো ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন না হলে সোমবার থেকে আন্দোলনে যাবে সাত কলেজ ১৭ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ত ম র কল জ র র প রস ত ব স ত কল জ গঠন র প গঠন কর র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ছেলের গলায় ছুরি ধরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

পঞ্চগড় সদর উপজেলায় দুই বছর বয়সী ছেলের গলায় ছুরি ধরে এক গৃহবধূকে (২৮) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে সদর উপজেলার একটি চা-বাগান সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেন। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই গৃহবধূ ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে ওই গৃহবধূ পঞ্চগড় সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। এর আগে, এদিন সকালে উপজেলার জগদল বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে পুলিশ।

আরো পড়ুন:

তালাক দেওয়ার পর আটকে রেখে প্রাক্তন স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

মুরাদনগরে পর্নোগ্রাফি মামলায় ৪ যুবক ৩ দিন রিমান্ডে

আটককৃতরা হলেন- সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের জগদল বাজার এলাকার জনি ইসলাম (২৭), বিপ্লব হোসেন (২৫), মকছেদুল ইসলাম (৩৩) এবং সাতমেড়া ইউনিয়নের বদিনাজোত এলাকার সাদেকুল ইসলাম (২৮)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার একটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন ওই গৃহবধূ। শুক্রবার রাতে বাসা থেকে ইজিবাইকযোগে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নে বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। সদর ইউনিয়নের তিনমাইল সুরিভিটা এলাকায় পৌঁছলে তার ইজিবাইকের পেছনে থাকা আরেকটি ইজিবাইকের পরিচিত চালক নাম ধরে ডাকতে থাকেন। পরে থামতেই তাকে জনিসহ ছয়জন সড়কের পাশের একটি চা-বাগান সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে শিশু সন্তানের গলায় ছুরি ধরে ওই গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন তারা। ধর্ষণের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন ওই গৃহবধূ। পরে স্থানীয় একটি সড়কের পাশে তাকে ফেলে পালিয়ে যান ধর্ষকেরা। ৯৯৯-এ খবর পেয়ে পুলিশ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমার ছোট্ট ছেলের গলায় ছুরি ধরেছিল তারা। তখন আমি নিরুপায় হয়ে পড়ি। চিৎকার করতে চাইলে আমাকে তারা ভয়ভীতি দেখায়। পরে একে একে ছয়জন আমাকে ধর্ষণ করে। চারজন পরিচিত আর দুইজন অপরিচিত। আমি ধর্ষণের শিকার হলাম এখন আমার কাছের লোকজন আপসের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আবুল কাশেম বলেন, ‘‘রাতে পুলিশ অচেতন অবস্থায় এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। ধর্ষণের বিষয়টি পরীক্ষার পরে জানা যাবে। আপাতত তিনি শারীরিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছেন।’’

পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, ‘‘৯৯৯-এ খবর পেয়ে পুলিশের একটি টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে অচেতন অবস্থায় এক নারী এবং তার সঙ্গে থাকা একটি শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ওই নারীর জ্ঞান ফিরলে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানান। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’’

ঢাকা/নাঈম/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ