শহীদ মিনারে বই প্রেমীদের আনাগোনা। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। তবে কেউ বই কিনতে বা উপহার দিতে আসেননি। এসেছেন একে অপরের সঙ্গে জ্ঞান বাটোয়ারা করতে, বিনিময় করতে। একগুচ্ছ অপরিচিত মানুষের এই জ্ঞান বাটোয়ারার বিষয়টি রূপ নিয়েছে উৎসবে। আর এই উৎসবের মাধ্যমে স্মরণ করা হয়েছে বইয়ের মানুষকে। পলান সরকারকে স্মরণ করতেই শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করে ‘মেঘের ধাক্কা’ নামের একটি সংগঠন।
বিকেলে সরেজমিনে বই বিনিময় উৎসব ঘুরে দেখা যায়, অনেকে প্রিয়জন, সন্তানদেরও নিয়ে এসেছেন। বই বিনিময়ের পাশাপাশি কেউ কেউ কবিতা আবৃত্তি করছেন। নিজেদের মতো করে জ্ঞানের গল্পকথা ভাগ করছেন অনেকে। অনেকে আবার মেতে উঠেছেন আড্ডায়। অনেকেই নিজেদের পছন্দের বইয়ের খোঁজ করে একে অন্যের সঙ্গে বই বিনিময় করছেন। সেখানে ঢাবির চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক মলয় বালাও বই বিনিময় করেন।
বই বিনিময় করতে আসা বইপড়ুয়া শাহনাজ বলেন, এমন আয়োজনে ফেব্রুয়ারির বইমেলার থেকেও বেশি লোক সমাগমের আশা করেছিলাম। কিন্তু মানুষের নগন্য উপস্থিতি আমাকে হতাশ করেছে। এখানে বই কিনতে তো টাকাও লাগছে না। তবে আশা করছি, সামনে আরও মানুষের উপস্থিতি বাড়বে।
উৎসবটি চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হলেও সঠিক প্রচারণার অভাবে অনেকে জানেন না বলে দাবি করেছেন লাবণী আক্তার। তিনি বন্ধুর কাছ থেকে শুনে বই নিয়ে এসেছেন বিনিময় করতে। তিনি বলেন, পড়া শেষ করা বইগুলো বিনিময় করে নিজের পছন্দের বই নিতে পারছি। এতে করে জ্ঞান ভাগাভাগি করতে পারছি। সেটি আমার জন্য খুবই আনন্দের বিষয়।
উৎসবটি সম্পর্কে ‘মেঘের ধাক্কা’র পরিচালক জহির রায়হান বলেন, এই উৎসবে কেবল বই বিনিময়ই হবে না, একে-অন্যের ভাবনা চিন্তার আদান প্রদানও হবে। যান্ত্রিক এই শহরে আমরা দিন দিন একটা যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি। আপনজন, বন্ধু-বান্ধব কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা কিংবা খোঁজ-খবর নেওয়া হয়ে ওঠে না। এই উৎসবে বই বিনিময়ের পাশাপাশি হবে বই নিয়ে আড্ডা, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা হবে। শুধু ক্লান্ত পাখির মতো ঘরে ফেরার পথে উপহার হিসেবে হাতে থাকবে একটি বই।
হেঁটে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে মানুষের হাতে বই পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। তার স্মরণেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয় বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, পলান সরকার এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সহায়-সম্বল বিক্রি করে নিজের জীবনটা শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেছেন। ৯০ বছর বয়সেও তিনি প্রতিদিন ১০-১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে মানুষের হাতে বিনা মূল্যে বই পৌঁছে দিয়েছেন।
পলান সরকারের জন্ম ১৯২১ সালে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নূরপুর মালঞ্চী গ্রামে। ২০১৯ সালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি গ্রামের পথে হেঁটে হেঁটে বই বিলি করতেন। তার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০০৭ সালে সরকারিভাবে তার বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেওয়া হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বই উৎসব বই এই উৎসব স মরণ
এছাড়াও পড়ুন:
উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হলো রথ উৎসব
উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শনিবার শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। এ উপলক্ষে রাজধানী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্টো রথটান ছাড়াও পদাবলি কির্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্রী যজ্ঞ, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, ধর্মীয় বৈদিক নৃত্য, ভাগবতকথা, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ২৭ জুন রথ শোভাযাত্রা, রথের মেলাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবারের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছিল। রথযাত্রার ৯ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় উল্টো রথযাত্রা।
গতকাল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে স্বামীবাগের ইসকন আশ্রম মন্দির পর্যন্ত বর্ণাঢ্য উল্টো রথের শোভাযাত্রা আয়োজন করে। দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উল্টো রথযাত্রা উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
আলোচনা সভার পর বিকেলে বরণানুষ্ঠান ও পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনটি বিশাল রথে শ্রীশ্রী জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীর প্রতিকৃতিসহ উল্টো রথযাত্রা শুরু হয়। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা ও উলুধ্বনির মধ্যে সব বয়সের শত শত নারী-পুরুষ বর্ণাঢ্য সাজে এতে অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি পলাশীর মোড় থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন, শাপলা চত্বর, টিকাটুলি ও জয়কালী মন্দির হয়ে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দিরেও উল্টো রথযাত্রা হয়।
এদিকে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামে নগরীর তুলসীধাম মন্দিরের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটি, নন্দনকানন শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির এবং শ্রীকৃষ্ণ ইসকন মন্দিরের উদ্যোগে আলাদা আলাদাভাবে উল্টো রথযাত্রা বের হয়। এসব আয়োজনে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে এই রথযাত্রার প্রচলন।