উল্টো টানে শেষ হলো ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা
Published: 5th, July 2025 GMT
উল্টো টানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো ঢাকার ধামরাইয়ের ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী যশোমাধবের রথযাত্রা উৎসব। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শনিবার (৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত এই ‘উল্টো রথ টান’ উৎসবে যোগ দেন হাজারো ভক্ত। রথ টান শেষ হলেও এ উপলক্ষে আয়োজিত মেলা চলবে মাসব্যাপী।
গত সপ্তাহে নিজের বাড়ি থেকে মাসির বাড়ি যাত্রার মধ্য দিয়ে রথযাত্রা শুরু হয়। শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে শুরু হওয়া রথ উৎসবের ৯ দিনের মাথায় আয়োজন হয় উল্টো রথ টান।
শনিবার বিকেলে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরপর শ্রী শ্রী যশোমাধবকে মাসির বাড়ি যাত্রাবাড়ী মন্দির থেকে টেনে নেওয়া হয় পূর্বের স্থান ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়া রথখোলায়। এই যাত্রায় নারী-পুরুষের ঢল নামে রাস্তায়। ভক্তরা রথের পথচলায় চিনি ও কলা ছিটিয়ে যশোমাধবের প্রতি ভক্তি নিবেদন করেন। রথযাত্রা ও মেলার উদ্বোধন করা হয়েছিল গত ২৭ জুন।
আরো পড়ুন:
বাগেরহাটে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা শুরু, বসেছে মেলা
সোনারগাঁয়ে ঐতিহ্যবাহী পাগলা গাছের মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়
তিথিয়া ঘোষ নামে এক ভক্ত বলেন, “আমি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে এসেছি। প্রতি বছরই রথযাত্রার উৎসবে অংশ নেই। এবারো এসেছি। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় রথ ধর্মীয় অনুসঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে এটি আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যেরও। সবাই এখানে আনন্দ উল্লাস করে।”
মেঘনা দাস নামে অপর ভক্ত বলেন, “প্রথমবারের মতো ধামরাই রথ দেখতে এসেছি। রথ টানে আসতে পারিনি। তবে আজ এসেছি। অনেক ভালো লেগেছে। স্বামী ও সন্তানের মঙ্গল কামনা করেছি। ধর্ম-বর্ণ সবাই যাতে সুখে শান্তিতে ভালো ও সুখে থাকতে পারেন সেটি যশোমাধবের কাছে কামনা করেছি।”
রথযাত্রা শেষ হলেও জমজমাট হয়ে উঠেছে মেলাপ্রাঙ্গণ। ধামরাইয়ের পৌর এলাকায় মাসব্যাপী চলবে এই মেলা। বিভিন্ন খাবার, প্রসাধনী ও খেলনা সামগ্রীর প্রায় দুই শতাধিক দোকান বসেছে মেলায়।
অর্পিতা সূত্রধর নামে এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, “পরিবারের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছি। চুরি কিনেছি, আরো কেনাকাটা করব। মেলায় বিভিন্ন ধরনের অনেক জিনিসপত্র উঠেছে।” রথ ও মেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখের পড়ার মতো বলে জানান তিনি।
রথ কমিটির সভাপতি ও যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির সদর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস বলেন, “উল্টো রথ যাত্রার মধ্য দিয়ে এ বছর আমাদের রথযাত্রা উৎসবের সমাপ্তি ঘটল। আনন্দ ও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা সুন্দর একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরেছি। আমি সব সুধী ভক্তকে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। যারা আমাদের এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, রথ তার পরিপূর্ণতা পেয়েছে। রথ শেষ হলেও মাসব্যাপী মেলা চলবে। এতে সবাইকে স্বাগত জানাই। এই রথযাত্রার মধ্য দিয়ে সুখী এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি, যেখানে সবাই সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তিতে বসবাস করবে।”
এদিকে, রথযাত্রা চলাকালে নাম না জানা (৬৫) এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রথ যাত্রা শুরুর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় ধামরাই বাজারের একটি দোকানে রেখে যান কিছু ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে মারা যান।
মৃত্যুর পর তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল পাওয়া যায়। এরমধ্যে তিনটি ফোনে যোগাযোগ করা হলে সেগুলো খোয়া গেছে দাবি করে তিনজন দোকানে আসেন। অপর ফোনটি মারা যাওয়া ব্যক্তির নিজের বলে শনাক্ত হয়।
এছাড়া, উল্টো টানের সময় রথের ধাক্কায় গৌরাঙ্গ (৬০) নামে এক ব্যক্তির দুই পায়ে আঘাত পান। তিনি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার বাড়ৈখালি এলাকার বাসিন্দা। তাকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ল র খবর উৎসব রথয ত র শ ষ হল
এছাড়াও পড়ুন:
উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হলো রথ উৎসব
উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শনিবার শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। এ উপলক্ষে রাজধানী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উল্টো রথটান ছাড়াও পদাবলি কির্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্রী যজ্ঞ, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, ধর্মীয় বৈদিক নৃত্য, ভাগবতকথা, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ২৭ জুন রথ শোভাযাত্রা, রথের মেলাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবারের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছিল। রথযাত্রার ৯ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় উল্টো রথযাত্রা।
গতকাল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে স্বামীবাগের ইসকন আশ্রম মন্দির পর্যন্ত বর্ণাঢ্য উল্টো রথের শোভাযাত্রা আয়োজন করে। দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উল্টো রথযাত্রা উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
আলোচনা সভার পর বিকেলে বরণানুষ্ঠান ও পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনটি বিশাল রথে শ্রীশ্রী জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীর প্রতিকৃতিসহ উল্টো রথযাত্রা শুরু হয়। ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টা ও উলুধ্বনির মধ্যে সব বয়সের শত শত নারী-পুরুষ বর্ণাঢ্য সাজে এতে অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি পলাশীর মোড় থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন, শাপলা চত্বর, টিকাটুলি ও জয়কালী মন্দির হয়ে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দিরেও উল্টো রথযাত্রা হয়।
এদিকে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামে নগরীর তুলসীধাম মন্দিরের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটি, নন্দনকানন শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির এবং শ্রীকৃষ্ণ ইসকন মন্দিরের উদ্যোগে আলাদা আলাদাভাবে উল্টো রথযাত্রা বের হয়। এসব আয়োজনে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে এই রথযাত্রার প্রচলন।