প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে ভারতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বিদ্বেষমূলক অপরাধ ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য। দিল্লিভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটসের (এপিসিআর) নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

মুসলিম, দলিত, আদিবাসী, খ্রিষ্টানসহ অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর এ সহিংসতা ‘পদ্ধতিগত ও প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ভারতে ৯৪৭টি বিদ্বেষমূলক ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৫টি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ও ৬০২টি সরাসরি বিদ্বেষমূলক অপরাধ।

বিদ্বেষমূলক অপরাধের মধ্যে ১৭৩টিতে শারীরিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং ২৫টি ঘটনায় ভুক্তভোগীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সবাই মুসলমান। এই এক বছরে বিদ্বেষমূলক অপরাধে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ জন হিন্দুও আছেন। অবশ্য তারা আক্রমণের মূল নিশানা ছিলেন না। ঘটনাস্থলে থাকার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি।

এপিসিআর জানায়, গত এক বছরে সারাদেশে যে ৩৪৫টি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এগুলোর ১৭৮টিই দিয়েছেন শাসক দল বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘৃণা-সম্পর্কিত অপরাধও সবচেয়ে বেশি ঘটেছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে। বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ও অপরাধের প্রবণতাও এসব রাজ্যে বেশি। আরও দেখা গেছে, বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বেশি দেওয়া হচ্ছে। লোকসভা বা বিধানসভা ভোটেই শুধু নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ও অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এক বছরের এই সময়কালে উত্তরাখন্ডের পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচন তার প্রমাণ।

এপিসিআরের প্রতিবেদন জানায়, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন। এক বছরের ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিজেপি দলের সদস্যদের দেওয়া ১৭৮টি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে পাঁচটি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ৬৩টি বক্তব্য দিয়েছেন বিজেপির বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রীরা, ৭১টি বক্তব্য  দিয়েছেন অন্য নির্বাচিত ব্যক্তিরা। সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, দু’জন বিচারপতি এবং একজন রাজ্যপালও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গত এক বছরে ঘটে যাওয়া ৯৪৭টি বিদ্বেষমূলক অপরাধের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশ। শুধু এই রাজ্যেই ২১৭টি বিদ্বেষমূলক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এর পর যথাক্রমে বিজেপিশাসিত মহারাষ্ট্রে ১০১টি, মধ্যপ্রদেশে ১০০টি ও উত্তরাখন্ডে ৮৪টি। এ ছাড়া বিজেপিশাসিত রাজস্থানে ৬০টি, বিহারে ৩৬টি, গুজরাট ও হরিয়ানায় ২৩টি করে এবং আসামে এমন ঘটনা ঘটেছে ২০টি।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপর ধ র এক বছর র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মোদির তৃতীয় মেয়াদে এক বছরেই ৯৪৭টি ঘৃণা অপরাধ, নিশানা মুসলিমসহ সংখ্যালঘুরা

ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা অপরাধ (হেট ক্রাইম) বেড়েই চলেছে। শুধু মুসলিম ও খ্রিষ্টান নয়, ঘৃণা অপরাধ বেড়ে গেছে দলিত ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধেও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় দফার শাসনের প্রথম বছরে এ ধরনের অপরাধের হার মারাত্মকভাবে বেড়েছে। মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর)’–এর সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে এ প্রবণতার চিত্র উঠে এসেছে।

মোদি সরকারের তৃতীয় দফার শাসনের প্রথম বছরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি, সেসব ঘটনায় রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক মদদ, তাদের উৎসাহদান এবং সামাজিক–রাজনৈতিক আদর্শগত পরিবর্তনগুলো এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুন মাসে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় দফার শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৯৪৭টি ঘৃণা অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৪৫টি ঘৃণা ভাষণ, বাকি ৬০২টি ঘৃণা অপরাধ, যাতে হিন্দুত্ববাদীরা সংখ্যালঘুদের জানমালের ওপর সরাসরি ভয়ানক আক্রমণ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ৬০২ ঘৃণা অপরাধের ঘটনার মধ্যে ১৭৩টিতে সংখ্যালঘুরা শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫টি ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিহত হয়েছেন। তাঁদের সবাই মুসলিম। এই এক বছরে ঘৃণা অপরাধে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ জন হিন্দুও আছেন। অবশ্য তাঁরা আক্রমণের মূল নিশানা ছিলেন না। ঘটনাস্থলে থাকার কারণে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি।

এপিসিআর সংগঠনটি তৈরি হয়েছিল ২০০৬ সালে। তাদের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতে দিন দিন ঘৃণা ভাষণ ও ঘৃণা অপরাধ বাড়লেও এবং তাতে প্রধানত ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এসব অপরাধ রেকর্ড বা নথিভুক্ত করার কোনো পদ্ধতিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টা নেই। দলিত হিন্দুদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও অপরাধ নথিভুক্ত করা হয় ১৯৮৯ সালের তফসিল জাতি ও উপজাতি (অত্যাচার নিরোধ) আইন মোতাবেক। এ আইনে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বিশেষ বিধান রয়েছে; কিন্তু সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা অপরাধ মোকাবিলায় এ ধরনের কোনো আইনি ব্যবস্থা এখনো তৈরি করা হয়নি।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, সামাজিক পরিচয়ের দরুন কোনো ব্যক্তি যখন আক্রান্ত হন, তাঁর জীবন বিপন্ন ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তা ঘৃণা অপরাধের আওতায় পড়ে। ঘৃণা ভাষণ মানুষকে হিংসাত্মক করে তোলে। সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করে। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ঘৃণা ভাষণ হলো সেই সব আপত্তিকর কথা, যার লক্ষ্য ব্যক্তির সামাজিক ও ধর্মীয় পরিচয়।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাষণ ও ঘৃণা অপরাধের প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভ। ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, নয়াদিল্লি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোদির তৃতীয় মেয়াদে এক বছরেই ৯৪৭টি ঘৃণা অপরাধ, নিশানা মুসলিমসহ সংখ্যালঘুরা