ফাইনালে রোনালদোর ছেলের জোড়া গোলে পর্তুগাল চ্যাম্পিয়ন
Published: 19th, May 2025 GMT
পিতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছিলেন এক সময়ের গোল মেশিন। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে যিনি রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন। এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের প্রথম সাফল্যের গল্প লিখলেন ছেলে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো জুনিয়র। ১৪ বছর বয়সেই জাতীয় দলের জার্সিতে দুই গোল করে এনে দিলেন শিরোপা। তাও আবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে।
ক্রোয়েশিয়ায় আয়োজিত ভ্লাতকো মার্কোভিচ অনূর্ধ্ব-১৫ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩-২ গোলের জয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৫ দল। ম্যাচের নায়ক ছিলেন রোনালদো জুনিয়র। যিনি করেছেন জোড়া গোল।
এই টুর্নামেন্টের প্রথম তিন ম্যাচে তেমন চোখে পড়ার মতো কিছু করতে পারেননি রোনালদো জুনিয়র। গোল না পাওয়া, সহায়তা না করতে পারা—সবকিছু মিলিয়ে নিরুত্তাপই ছিল শুরুটা। কিন্তু ফাইনালের মতো চাপের ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরলেন রোনালদোর ছেলে। যেন বড় মঞ্চের জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন।
আরো পড়ুন:
মেসিদের আরও একটি হতাশাজনক হার
বার্সেলোনার হোঁচট, রিয়ালের জয়ে পিচিচির দৌড়ে এগিয়ে এমবাপ্পে
ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন তিনি। কঠিন অ্যাঙ্গেল থেকে নেওয়া শট পেরিয়ে যায় গোলরক্ষককে। গোলের পর বাবার মতো করেই ‘সিউউউ’ উদযাপনে মাতেন জুনিয়র রোনালদো। এ যেন শুধুই একটি গোল নয়, বরং এক কিংবদন্তির উত্তরাধিকারের ঘোষণাও। প্রথমার্ধের শেষ দিকে হেডে করেন দ্বিতীয় গোলটি। ফাইনালে এই জোড়া গোলই ছিল ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।
এই টুর্নামেন্ট দিয়েই প্রথমবারের মতো পর্তুগালের জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেন রোনালদো জুনিয়র। জাপানের বিপক্ষে বদলি হিসেবে অভিষেক হয় তার। বাবার মতোই গায়ে ছিল সাত নম্বর জার্সি।
১৭ জুন ১৫ বছরে পা দিতে চলা এই কিশোর ফুটবলারের ক্যারিয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও জুভেন্টাস একাডেমিতে। এরপর আল-নাসর একাডেমিতে। এবার জাতীয় দলের হয়ে প্রথম আসরে শিরোপা জয় করলেন। এ যেন তার ভবিষ্যতের দিকেই একটি দৃঢ় পদক্ষেপ।
রোনালদো জুনিয়রের এই অর্জনে রোমাঞ্চিত তার বাবা। সামাজিক মাধ্যমে ছেলের অভিষেকের ছবি পোস্ট করে তিনি আগেই বলেছিলেন— “গর্বিত বাবা।’’
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল পর ত গ ল ফ ইন ল প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদে স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ি, ফিরে দেখেন ঘর থেকে কোটি টাকার স্বর্ণালংকার চুরি
তরুণ ব্যবসায়ী আসিফ তাঁর স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে রাজধানীর ডেমরার মুসলিমনগরে নিজেদের ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। ঈদুল আজহার দুই দিন পর (৯ জুন) আসিফ তাঁর স্ত্রী, বাবা-মাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে যান। এক দিন শ্বশুরবাড়িতে থেকে ১০ জুন রাত আটটায় মা খালেদা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে আসিফ ডেমরার নিজের বাসায়। আসিফ দেখতে পান শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে দরজার তালা যেমন লাগিয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই রয়েছে। কিন্তু ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখতে পান, ড্রয়িং রুমের মেঝেতে এলোমেলোভাবে জামাকাপড় পড়ে আছে।
আসিফের মা দেখতে পান, তাঁর কক্ষের আলমারি ভাঙা। তখন আলমারির বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকার খুঁজতে থাকেন তিনি। কোথাও স্বর্ণালংকারের ব্যাগ খুঁজে না পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন। আসিফ তখন মাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। পরে আসিফ নিজের শয়নকক্ষে গিয়ে দেখতে পান, বাসার কাপড়চোপড় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। আলমারির দরজার তালা ভাঙা। তখন আলমারিতে রাখা স্ত্রীর স্বর্ণালংকারের ব্যাগ দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আসিফ তখন বাসার অন্য আরেকটি আলমারির দিকে খেয়াল করেন। দেখতে পান সেই আলমারির তালাও ভাঙা। আলমারির বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকারের সেই ব্যাগও সেখানে নেই। স্ত্রী, মা, নানি, মামির সব স্বর্ণালংকার চুরি হওয়ায় আসিফ তখন আরও হতাশ হয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে আসিফ বাসার তৃতীয় তলার আরেকটি শয়নকক্ষের জানালার একটি গ্রিল কাটা অবস্থায় দেখতে পান। আসিফের মা সেখানে এসে তাঁকে বলেন, ‘আসিফ, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে…।’
আসিফ তখন মুন্সিগঞ্জে অবস্থান করা তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে বাসায় চোর ঢোকার তথ্য জানান। আসিফের ফোন পেয়ে তাঁর স্ত্রী ওই রাতেই মুন্সিগঞ্জ থেকে ডেমরার বাসায় চলে আসেন। আলমারিতে বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকারের ব্যাগটি দেখতে না পেয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। আসিফের স্ত্রীর কান্না দেখে তাঁর মা খালেদাও তখন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। পুত্রবধূকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন তিনি।
এ বিষয়ে আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের সময় আমার শ্বশুরবাড়ি যাওয়াটাই কাল হয়েছে। আমার ভাবনাতেই ছিল না, আমরা বাসায় না থাকলে বাসার গ্রিল কেটে চোর ঢুকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ২৮ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। আর মায়ের ২১ ভরি। আমার নানির সাড়ে চার ভরি আর মামির সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। মোট আমাদের বাসা থেকে এক কোটি টাকা (৬০ ভরি স্বর্ণ) মূল্যের স্বর্ণালংকার চুরি হয়েছে।’
আসিফদের শয়নকক্ষের যে জানালার গ্রিল কাটা, সেখানে আর কোনো ভবন নেই। বেশ দূরে রয়েছে একটা ভবন। আসিফ বলেন, ‘আমাদের বাসার প্রবেশপথে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) রয়েছে। কিন্তু সেটি যে নষ্ট ছিল, সেটা আমাদের জানা ছিল না। আর বাসার পেছনে থাকা তৃতীয় তলার শয়নকক্ষের জানালার গ্রিল কেটে চোর ঢুকেছে। ওই পাশে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই।’
চোর শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ
ঘরে চুরি হওয়ার তিন দিনের মাথায় গত ১৩ জুন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ডেমরা থানায় মামলা করেন আসিফ। এরপর এক মাস হতে চললেও কোটি টাকার স্বর্ণ চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন আসিফ।
আক্ষেপ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুরির এত দিন পার হয়ে গেল, পুলিশ কাউকে ধরতে পারল না। চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকার উদ্ধার না হওয়ায় আমার স্ত্রী ও মায়ের মন অনেক খারাপ। প্রায় সময় মা আমার কান্নাকাটি করেন। স্ত্রীর মনেও অনেক ক্ষোভ জন্মেছে, কেন পুলিশ চোর ধরতে পারছে না?’
আসিফ জানান, ১০ জুন রাতে বাসায় ঢুকে যখন তাঁরা বুঝতে পারেন স্বর্ণালংকার চুরি হয়ে গেছে, তখন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। ডেমরা থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা আসেন রাত ১০টার পর। তিনতলার যে কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা হয়েছে, সেটির ছবি তোলেন তাঁরা। পরে চুরি যাওয়া ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার আর নগদ ৫ লাখ টাকা চুরি হওয়ার তথ্য লিখে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।
এ মামলা তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাসা থেকে ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বাসার কাছের একটি সিসিটিভির ফুটেজ জোগাড় করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাতে একজন যুবকের উপস্থিতি দেখা গেছে। তাঁকে শনাক্ত করা এবং চোর খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।