হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের পৃথক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, উপজেলার গান্ধীগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে আজিজুর রহমান আকাশ (২২) এবং বড় গজনী গ্রামের সোহান মারাকের ছেলে এফিলিস মারাক (৩৫)।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে এক পাল হাতি খাবারের সন্ধানে কাংশা ইউনিয়নের দরবেশতলায় ধানক্ষেতে হানা দেয়। এ সময় মশাল নিয়ে ক্ষুধার্ত হাতি তাড়াতে যায় স্থানীয় লোকজন। আকাশও তাদের সঙ্গে ছিলেন। লোকজন হাতিকে তাড়া করে বনের ভেতর নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে হাতির পাল পাল্টা আক্রমণ করলে সবাই দৌড়ে চলে আসেন। কিন্তু আকাশ দৌড়াতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান। তিনি আর উঠতে পারেননি। এ সময় উন্মত্ত হাতি শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে তাঁকে পিষ্ট করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আকাশকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

এদিকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রের কাছে তিন সড়কের মোড়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৪ ব্যক্তি বাড়ি যাচ্ছিলেন। এসময় একই সড়ক দিয়ে হাতির পাল যাচ্ছিল। হাতি দেখে তিনজন দৌঁড়ে চলে গেলেও এফিলিস মারাক নামে একজন আটকে যায়। এসময় তাকে পদপিষ্ট করে হত্যা করে হাতি।

বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ‘খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পাই আকাশের পেটের বাম পাশে ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। সম্ভবত হাতি তাকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে পায়ে পিষ্ট করে মেরেছে।’

ছোট গজনী গ্রামের বাসিন্দা ক্রিস্টিয়ানা মারাক বলেন, বনে হাতির খাবারের খুব সঙ্কট। তাছাড়া ধান হাতির প্রিয় খাবার। খেতে পাকা ধান দেখে তারা হানা দিচ্ছে। বাঁধা দিলেই আক্রমণ করছে। তিনি বলেন, আসলে অভুক্ত হাতির দল গত এক সপ্তাহ ধরে ভীষণ তিক্ত হয়ে উঠেছে। তারা বন থেকে যখন-তখন লোকালয়ে আসছে। লোকজন নানাভাবে এদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তারা আরও ক্ষিপ্তহয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, পরিষদের তরফ থেকে মৃত দুই পরিবারকে যতটুকু সম্ভব তারা সহায়তা করবেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসরাফুল আলম রাসেল বলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। নিহতের দুই পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ভুক্তভোগীদের পরিবারকে সবধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। হাতি তাড়ানোর জন্য রাতেই জনসাধারণকে কেরোসিন তেল দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাড্ডায় বিস্ফোরণ: মা-মেয়ের পর চলে গেলেন বাবা

ঢাকার বাড্ডায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ শিশু তানজিলা ও তার মায়ের মৃত্যুর পর এবার না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তানজিলার বাবা তোফাজ্জল হোসাইন।

বুধবার (২১ মে) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল হোসাইনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন জন মারা গেলেন। এ ঘটনায় এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরো দুজন। 

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, তোফাজ্জল হোসাইনের ৮০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসাধীন তাদের মেয়ে তানিশার ৩০ শতাংশ ও মিথিলার ৬০ শতাংশ দগ্ধ আছে। তাদের  অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এর আগে গত ১৮ মে বিকেল ৩টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোট্ট তানজিলা (৪)। এর ৭ ঘণ্টা পর মারা যান তার মা মানসুরা (২৪)।

গত ১৬ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আফতাব নগরের দক্ষিণ আনন্দনগর এলাকার আনসার ক্যাম্প বাজারসংলগ্ন একটি তিন তলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। এতে একই পরিবারের পাঁচ জন দগ্ধ হন। 

তোফাজ্জল হোসাইনের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং গ্রামে। তিনি পেশায় একজন নির্মাণশ্রমিক এবং পরিবারসহ আফতাব নগরে বসবাস করেন।

ওই দিন তোফাজ্জল হোসাইনে প্রতিবেশী মোহাম্মদ হোসেন শরীফ জানান, রান্না করার জন্য রাতে চুলায় আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ হয়। এতেই সবাই দগ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের আগুনে প্রায়ই দগ্ধ হচ্ছে মানুষ। তাদের অনেকে চিকিৎসা নিতে ঢাকায় আসছেন। কিন্তু সবাইকে বাঁচানো যাচ্ছে না বলে জানান চিকিৎসকরা। 

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হিসাবে, শুধু ২০২৪ সালে আগুনে দগ্ধ হয়ে ১২ হাজার ৮১১ জন রোগী জরুরি বিভাগে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৬৮০ জন রোগী। ভর্তি রোগীদের মধ্যে মারা যান ১০০২ জন। অর্থাৎ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা/বুলবুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ