জিলকদ মাস ইসলামি কালপঞ্জির ১১তম মাস। এই মাস ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের একটি, যে মাসগুলোতে যুদ্ধ নিষিদ্ধ। ইসলামি ক্যালেন্ডার চন্দ্রভিত্তিক, নতুন চাঁদের উদয় দেখা গেলে মাস শুরু হয়। এই ক্যালেন্ডার সৌরবছরের তুলনায় ১১-১২ দিন ছোট, তাই জিলকদ বিভিন্ন ঋতুতে স্থানান্তরিত হয়। এই মাসে মুসলিমরা পরবর্তী মাসে অনুষ্ঠিত হজের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। নিচে জিলকদের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও ঘটনাগুলো হিজরি সালসহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।
হুদায়বিয়ার সন্ধি: ১ জিলকদ ৬ হিজরি
৬ হিজরিতে মহানবী (সা.
হজ ফরজ হলো: ৮ জিলকদ ৯ হিজরি
এই দিনে হজ ফরজ হওয়ার বিধান অবতীর্ণ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ, যারা সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
জিলকদ মাস থেকে মুসলিমরা পরবর্তী মাসের হজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এরপর রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে হজ্জাতুল বিদা (বিদায় হজ) পালন করেন।
আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫গাদির খুমের ঘটনা: ১৮ জিলকদ ১০ হিজরি
১০ হিজরিতে হজ্জাতুল বিদার পরে নবীজি (সা.) মদিনায় ফেরার পথে গাদির খুম নামক স্থানে আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর প্রশংসা করেন; যা শিয়া পরবর্তী সময়ে মুসলিমদের কাছে ইমামতের সূচনা হিসেবে ভিত্তি পায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪০৮)
নবী ইব্রাহিম (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর জন্ম: ২৫ জিলকদ
বর্ণিত আছে, এই দিনে নবী ইব্রাহিম (আ.) ও ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁদের জন্মতারিখ ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা
খন্দকের যুদ্ধ: ৫ হিজরিতে জিলকদ মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মদিনার মুসলিমরা কুরাইশ ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য খন্দক খনন করেন। এই যুদ্ধে মুসলিমদের কৌশলগত বিজয় ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,১১৮)
বায়াতে রিদওয়ান (গাছের নিচে শপথ): ৬ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির আগে মুসলিমরা নবী (সা.)-এর নেতৃত্বে একটি গাছের নিচে শপথ গ্রহণ করেন, যা বায়াতে রিদওয়ান নামে পরিচিত। এই ঘটনা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা ফাতহ: ১৮)
প্রথম ওমরাহ: ৭ হিজরিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সাহাবিদের নিয়ে প্রথম ওমরাহ পালন করেন, যা হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলাফল ছিল। এটি মুসলিমদের জন্য মক্কায় ইবাদতের অধিকার পুনরুদ্ধারের একটি মাইলফলক। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৮০৭)
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪জিলকদের পবিত্রতা
হুদায়বিয়ার সন্ধির কারণে এই মাসকে ‘সন্ধির মাস’ বলা হয়। জিলকদ চারটি পবিত্র মাসের (মহররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) একটি। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় মাসের সংখ্যা আল্লাহর কাছে বারোটি, যেদিন তিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; তন্মধ্যে চারটি পবিত্র।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ, যা সুরা বাকারায় উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা বাকারা: ২১৭)। এ মাসের মধ্যবর্তী তিন দিন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বীয’ হিসেবে পরিচিত এবং এ সময় সুন্নাহ হিসেবে রোজা রাখতে উৎসাহিত করা হয়।
সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন ডটকম
আরও পড়ুনকবর জিয়ারতে কী করব, কী করব না১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ লকদ ম স পরবর ত উল ল খ এই ম স র জন য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছেন, ৬৯ বছর বয়সে করেছেন পিএইচডি
সময়টা ১৯৯৯ সাল। মরিশাস থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান নিদ্যানন্দ রায়া। উদ্দেশ্য ছিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা। বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে যত দিন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন তিনি।
এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বাবাকে দেওয়া সেই কথা রেখেছেন নিদ্যানন্দ। এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। এ বয়সে এসে মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে সামাজিক নীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নামের শুরুতে ‘ড.’ শব্দটি যুক্ত করেছেন।
এ অর্জন কেমন লাগছে? প্রশ্নের জবাবে নিদ্যানন্দের চটজলদি জবাব, ‘তেমন কিছুই না। এটা জীবনের একটা অর্জন মাত্র।’
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিদ্যানন্দ বলেন, আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।ড. নিদ্যানন্দ এখন লন্ডনের এনফিল্ডে বসবাস করেন। পড়াশোনার জন্যই দেশ ছেড়েছিলেন। বলছিলেন, নিজ দেশে পড়াশোনার সুযোগ সীমিত ছিল। তাই দেশ ছেড়ে এসেছিলেন।
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’
যুক্তরাজ্যকে ‘সুযোগের ভূখণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।’
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর নিদ্যানন্দ সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার প্রস্তাব পান। কিন্তু সেখানে কাজের সুযোগ না থাকায় সেটা করতে পারেননি।
মাঝের সময়টায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে নিদ্যানন্দকে। দীর্ঘ সময় পরিবারের খরচ চালাতে স্কুলশিক্ষক স্ত্রী ল্যাকসোমিকে সহায়তা করতে পারেননি তিনি। বরং স্ত্রীই তখন পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। নিদ্যানন্দ বলেন, ‘তখন আমাকে চাকরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল। আমাকে স্থায়ী হতে হয়েছিল। আমাকে সবকিছু করতে হয়েছিল।’
‘এখানে আসার পর আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আমাকে একজন পরিচর্যাকারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে,’ বলেন নিদ্যানন্দ।
নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এই শিক্ষক বলেন, আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন নিদ্যানন্দ। এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।’
জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বলতে গিয়ে কয়েক দশক আগে বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন নিদ্যানন্দ। তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছি। বাবা, আমি তোমাকে গর্বিত করেছি।’