দালাই লামার উত্তরাধিকার ঘিরে কি ভারত-চীন নতুন রেষারেষি শুরু হচ্ছে
ছবি: ফাইল ছবি দিন
সেকশন: / ট্যাগ:
এক্সার্প্ট:
মেটা:
দালাই লামার উত্তরাধিকার ঘিরে কি ভারত-চীন নতুন রেষারেষি শুরু হচ্ছে

বৌদ্ধ ধর্মগুরু হিসেবে পঞ্চদশ দালাই লামার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ভারত–চীন রেষারেষির নতুন এক অধ্যায়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও এক নতুন খাতে বইতে শুরু করবে। আগামী রোববার, ৬ জুলাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

১৪ বছর আগে ২০১১ সালে চতুর্দশ দালাই লামা বলেছিলেন, তাঁর ৯০ বছর বয়সে উত্তরাধিকার–সংক্রান্ত প্রশ্নের মীমাংসা হবে। ১৪ বছর পর, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত তাঁর আত্মকাহিনি ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস: ওভার সেভেন ডিকেডস অব স্ট্র্যাগল উইথ চায়না ফর মাই ল্যান্ড অ্যান্ড মাই পিপল’ বইয়ে দালাই লামা জানিয়ে দেন, পরবর্তী দালাই লামা জন্ম নেবেন চীনের বাইরে।

আগামী রোববার চতুর্দশ দালাই লামার ৯০তম জন্মদিন। কোনো অঘটন না ঘটলে সেদিনই উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালার ম্যাকলয়েডগঞ্জে তাঁর উত্তরসূরি বেছে নেওয়া হবে। আত্মপ্রকাশ ঘটবে পঞ্চদশ দালাই লামার।

সেই উপলক্ষে ধর্মশালার ম্যাকলয়েডগঞ্জে ভারত সরকারের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপির কিরেন রিজিজু ও জেডি(ইউ)–এর রাজীব রঞ্জন সিং। তাঁরা ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে পেমা খানডু ও প্রেম সিং তামাং। কিরেন রিজিজু ও পেমা খানডু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

দালাই লামার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার কিরেন রিজিজু গণমাধ্যমকে বলেন, দালাই লামা প্রতিষ্ঠান শুধু তিব্বতিদের কাছেই নয়, সারা পৃথিবীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দালাই লামার অনুসারীরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠিত নিয়ম মেনে এবং চতুর্দশ দালাই লামার ইচ্ছানুযায়ী তাঁর উত্তরসূরির আবির্ভাব ঘটবে। দালাই লামা ছাড়া এই অধিকার আর কারও নেই।

রিজিজু এ কথাও বলেছেন, এই অনুষ্ঠানে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নয়।

ভারতের দৃষ্টিতে চতুর্দশ দালাই লামা ধর্মগুরু। তিনি ও তাঁর অনুগামী যাঁরা ভারতে রয়েছেন, তাঁরা কেউই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন।

ভারত বরাবরই বিশ্বাস করে এবং বারবার সে কথা বলেও এসেছে, উত্তরাধিকার বাছাইয়ের প্রাচীন ঐতিহ্য দালাই লামারই। এই পরম্পরায় তৃতীয় কোনো পক্ষের হাত কখনো ছিল না, থাকা উচিতও নয়।

গত বুধবার চতুর্দশ দালাই লামাও সে কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ৬০০ বছর ধরে তিব্বতি বৌদ্ধরা তাঁদের আধ্যাত্মিক গুরু বাছাই করে চলেছেন। দালাই লামা প্রতিষ্ঠানের সেই ধারাবাহিকতা তাঁর মৃত্যুর পরেও বজায় থাকবে। তিনি যে ট্রাস্ট গঠন করেছেন, যার নাম গাহদেন ফোডরাং ট্রাস্ট, একমাত্র তারাই তাঁর পুনর্জন্ম বা উত্তরাধিকার শনাক্তকরণের কাজ করবে।

২০১১ সালে এই ট্রাস্ট গঠিত হয়েছিল। তখনই চতুর্দশ দালাই লামা জানিয়েছিলেন, তাঁর ৯০ বছরে পদার্পণের দিনই পরবর্তী দালাই লামা খুঁজে নেওয়া হবে।

নিশ্চিতভাবেই চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কহানির বাড়তি কারণ হতে চলেছে এ ঘটনা। কমিউনিস্ট চীনের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১৯৫৯ সালে তিব্বত ছেড়ে ভারতে চলে এসেছিলেন চতুর্দশ দালাই লামা ও তাঁর লক্ষাধিক অনুগামী। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৪। তিব্বতি প্রথা অনুযায়ী মাত্র দুই বছর বয়সে (তখন তাঁর নাম ছিল তেনজিং গিয়াৎসো) তাঁকে পরবর্তী দালাই লামা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

তিব্বতিদের বিশ্বাস, কোনো এক জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধভিক্ষুর মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা পুনর্জন্ম লাভ করে। জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরাই তাঁকে পরবর্তী দালাই লামা হিসেবে খুঁজে নেন। ১৯৪০ সালে তেনজিং গিয়াৎসো আনুষ্ঠানিকভাবে চতুর্দশ দালাই লামায় অভিষিক্ত হন।

কমিউনিস্ট চীনের কাছে দালাই লামা গলার কাঁটা। ভারতে অবস্থানকারী দালাই লামা ও তিব্বতিদের নির্বাসিত সরকার তাদের কাছে বিশেষ স্পর্শকাতর। কমিউনিস্ট চীন শুরু থেকেই চায় দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়ন্ত্রণ করতে। তাদের পছন্দমতো উত্তরসূরি বেছে নিতে।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে যেভাবে ‘সোনালি পাত্র’ থেকে পরবর্তী দালাই লামার নাম তোলা হতো, চীন চায় সেভাবেই তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বেছে নিতে। সে কারণে তারা বারবার বলে আসছে, দালাই লামার মনোনয়ন তাদের অনুমোদন পেতে হবে। চতুর্দশ দালাই লামা ও ভারতে অবস্থানরত তিব্বতি জনগণ তা মানতে রাজি নন।

আগামী রোববার চতুর্দশ দালাই লামা তাঁর ৯০তম জন্মদিনে পঞ্চদশ দালাই লামা বেছে নিলে (তিব্বতি ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী যাঁর মধ্যে দালাই লামা নতুন জীবন পাবেন, তাঁর পুনর্জন্ম ঘটবে) চীন–ভারত রেষারেষি নিশ্চিতভাবেই তীব্রতর হবে। আরও নিশ্চিতভাবে বলা যায়, চীন সরকারও পাল্টা বেছে নেবে পঞ্চদশ দালাই লামাকে, ঠিক যেভাবে তারা ১৯৯৫ সালে চতুর্দশ দালাই লামার পছন্দের পাঞ্চেন লামাকে অপহরণ করে বেছে নিয়েছিল তাদের পছন্দের পাঞ্চেন লামাকে।

দালাই লামার পর তিব্বতি বৌদ্ধদের কাছে পাঞ্চেন লামাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক গুরু। সরকারিভাবে দুই মন্ত্রীকে ধর্মশালা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত সরকারও বোঝাতে চাইছে, চীনের আধিপত্যবাদ মেনে নিতে তারা মোটেও প্রস্তুত নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দশ দ ল ই ল ম র র পছন দ ত সরক র পরবর ত মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩