দালাই লামার উত্তরাধিকার ঘিরে কি ভারত-চীন নতুন রেষারেষি শুরু হচ্ছে
Published: 4th, July 2025 GMT
দালাই লামার উত্তরাধিকার ঘিরে কি ভারত-চীন নতুন রেষারেষি শুরু হচ্ছে
ছবি: ফাইল ছবি দিন
সেকশন: / ট্যাগ:
এক্সার্প্ট:
মেটা:
দালাই লামার উত্তরাধিকার ঘিরে কি ভারত-চীন নতুন রেষারেষি শুরু হচ্ছে
বৌদ্ধ ধর্মগুরু হিসেবে পঞ্চদশ দালাই লামার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ভারত–চীন রেষারেষির নতুন এক অধ্যায়। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও এক নতুন খাতে বইতে শুরু করবে। আগামী রোববার, ৬ জুলাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
১৪ বছর আগে ২০১১ সালে চতুর্দশ দালাই লামা বলেছিলেন, তাঁর ৯০ বছর বয়সে উত্তরাধিকার–সংক্রান্ত প্রশ্নের মীমাংসা হবে। ১৪ বছর পর, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত তাঁর আত্মকাহিনি ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস: ওভার সেভেন ডিকেডস অব স্ট্র্যাগল উইথ চায়না ফর মাই ল্যান্ড অ্যান্ড মাই পিপল’ বইয়ে দালাই লামা জানিয়ে দেন, পরবর্তী দালাই লামা জন্ম নেবেন চীনের বাইরে।
আগামী রোববার চতুর্দশ দালাই লামার ৯০তম জন্মদিন। কোনো অঘটন না ঘটলে সেদিনই উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালার ম্যাকলয়েডগঞ্জে তাঁর উত্তরসূরি বেছে নেওয়া হবে। আত্মপ্রকাশ ঘটবে পঞ্চদশ দালাই লামার।
সেই উপলক্ষে ধর্মশালার ম্যাকলয়েডগঞ্জে ভারত সরকারের পক্ষে উপস্থিত থাকবেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপির কিরেন রিজিজু ও জেডি(ইউ)–এর রাজীব রঞ্জন সিং। তাঁরা ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে পেমা খানডু ও প্রেম সিং তামাং। কিরেন রিজিজু ও পেমা খানডু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
দালাই লামার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার কিরেন রিজিজু গণমাধ্যমকে বলেন, দালাই লামা প্রতিষ্ঠান শুধু তিব্বতিদের কাছেই নয়, সারা পৃথিবীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দালাই লামার অনুসারীরা মনে করেন, প্রতিষ্ঠিত নিয়ম মেনে এবং চতুর্দশ দালাই লামার ইচ্ছানুযায়ী তাঁর উত্তরসূরির আবির্ভাব ঘটবে। দালাই লামা ছাড়া এই অধিকার আর কারও নেই।
রিজিজু এ কথাও বলেছেন, এই অনুষ্ঠানে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নয়।
ভারতের দৃষ্টিতে চতুর্দশ দালাই লামা ধর্মগুরু। তিনি ও তাঁর অনুগামী যাঁরা ভারতে রয়েছেন, তাঁরা কেউই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন।
ভারত বরাবরই বিশ্বাস করে এবং বারবার সে কথা বলেও এসেছে, উত্তরাধিকার বাছাইয়ের প্রাচীন ঐতিহ্য দালাই লামারই। এই পরম্পরায় তৃতীয় কোনো পক্ষের হাত কখনো ছিল না, থাকা উচিতও নয়।
গত বুধবার চতুর্দশ দালাই লামাও সে কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ৬০০ বছর ধরে তিব্বতি বৌদ্ধরা তাঁদের আধ্যাত্মিক গুরু বাছাই করে চলেছেন। দালাই লামা প্রতিষ্ঠানের সেই ধারাবাহিকতা তাঁর মৃত্যুর পরেও বজায় থাকবে। তিনি যে ট্রাস্ট গঠন করেছেন, যার নাম গাহদেন ফোডরাং ট্রাস্ট, একমাত্র তারাই তাঁর পুনর্জন্ম বা উত্তরাধিকার শনাক্তকরণের কাজ করবে।
২০১১ সালে এই ট্রাস্ট গঠিত হয়েছিল। তখনই চতুর্দশ দালাই লামা জানিয়েছিলেন, তাঁর ৯০ বছরে পদার্পণের দিনই পরবর্তী দালাই লামা খুঁজে নেওয়া হবে।
নিশ্চিতভাবেই চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কহানির বাড়তি কারণ হতে চলেছে এ ঘটনা। কমিউনিস্ট চীনের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১৯৫৯ সালে তিব্বত ছেড়ে ভারতে চলে এসেছিলেন চতুর্দশ দালাই লামা ও তাঁর লক্ষাধিক অনুগামী। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৪। তিব্বতি প্রথা অনুযায়ী মাত্র দুই বছর বয়সে (তখন তাঁর নাম ছিল তেনজিং গিয়াৎসো) তাঁকে পরবর্তী দালাই লামা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
তিব্বতিদের বিশ্বাস, কোনো এক জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধভিক্ষুর মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা পুনর্জন্ম লাভ করে। জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরাই তাঁকে পরবর্তী দালাই লামা হিসেবে খুঁজে নেন। ১৯৪০ সালে তেনজিং গিয়াৎসো আনুষ্ঠানিকভাবে চতুর্দশ দালাই লামায় অভিষিক্ত হন।
কমিউনিস্ট চীনের কাছে দালাই লামা গলার কাঁটা। ভারতে অবস্থানকারী দালাই লামা ও তিব্বতিদের নির্বাসিত সরকার তাদের কাছে বিশেষ স্পর্শকাতর। কমিউনিস্ট চীন শুরু থেকেই চায় দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়ন্ত্রণ করতে। তাদের পছন্দমতো উত্তরসূরি বেছে নিতে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে যেভাবে ‘সোনালি পাত্র’ থেকে পরবর্তী দালাই লামার নাম তোলা হতো, চীন চায় সেভাবেই তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বেছে নিতে। সে কারণে তারা বারবার বলে আসছে, দালাই লামার মনোনয়ন তাদের অনুমোদন পেতে হবে। চতুর্দশ দালাই লামা ও ভারতে অবস্থানরত তিব্বতি জনগণ তা মানতে রাজি নন।
আগামী রোববার চতুর্দশ দালাই লামা তাঁর ৯০তম জন্মদিনে পঞ্চদশ দালাই লামা বেছে নিলে (তিব্বতি ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী যাঁর মধ্যে দালাই লামা নতুন জীবন পাবেন, তাঁর পুনর্জন্ম ঘটবে) চীন–ভারত রেষারেষি নিশ্চিতভাবেই তীব্রতর হবে। আরও নিশ্চিতভাবে বলা যায়, চীন সরকারও পাল্টা বেছে নেবে পঞ্চদশ দালাই লামাকে, ঠিক যেভাবে তারা ১৯৯৫ সালে চতুর্দশ দালাই লামার পছন্দের পাঞ্চেন লামাকে অপহরণ করে বেছে নিয়েছিল তাদের পছন্দের পাঞ্চেন লামাকে।
দালাই লামার পর তিব্বতি বৌদ্ধদের কাছে পাঞ্চেন লামাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক গুরু। সরকারিভাবে দুই মন্ত্রীকে ধর্মশালা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত সরকারও বোঝাতে চাইছে, চীনের আধিপত্যবাদ মেনে নিতে তারা মোটেও প্রস্তুত নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দশ দ ল ই ল ম র র পছন দ ত সরক র পরবর ত মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছেন, ৬৯ বছর বয়সে করেছেন পিএইচডি
সময়টা ১৯৯৯ সাল। মরিশাস থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান নিদ্যানন্দ রায়া। উদ্দেশ্য ছিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা। বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে যত দিন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন তিনি।
এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বাবাকে দেওয়া সেই কথা রেখেছেন নিদ্যানন্দ। এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। এ বয়সে এসে মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে সামাজিক নীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নামের শুরুতে ‘ড.’ শব্দটি যুক্ত করেছেন।
এ অর্জন কেমন লাগছে? প্রশ্নের জবাবে নিদ্যানন্দের চটজলদি জবাব, ‘তেমন কিছুই না। এটা জীবনের একটা অর্জন মাত্র।’
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিদ্যানন্দ বলেন, আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।ড. নিদ্যানন্দ এখন লন্ডনের এনফিল্ডে বসবাস করেন। পড়াশোনার জন্যই দেশ ছেড়েছিলেন। বলছিলেন, নিজ দেশে পড়াশোনার সুযোগ সীমিত ছিল। তাই দেশ ছেড়ে এসেছিলেন।
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’
যুক্তরাজ্যকে ‘সুযোগের ভূখণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।’
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর নিদ্যানন্দ সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার প্রস্তাব পান। কিন্তু সেখানে কাজের সুযোগ না থাকায় সেটা করতে পারেননি।
মাঝের সময়টায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে নিদ্যানন্দকে। দীর্ঘ সময় পরিবারের খরচ চালাতে স্কুলশিক্ষক স্ত্রী ল্যাকসোমিকে সহায়তা করতে পারেননি তিনি। বরং স্ত্রীই তখন পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। নিদ্যানন্দ বলেন, ‘তখন আমাকে চাকরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল। আমাকে স্থায়ী হতে হয়েছিল। আমাকে সবকিছু করতে হয়েছিল।’
‘এখানে আসার পর আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আমাকে একজন পরিচর্যাকারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে,’ বলেন নিদ্যানন্দ।
নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এই শিক্ষক বলেন, আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন নিদ্যানন্দ। এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।’
জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বলতে গিয়ে কয়েক দশক আগে বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন নিদ্যানন্দ। তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছি। বাবা, আমি তোমাকে গর্বিত করেছি।’