ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগ এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল। বুধবার সাম্য হত্যার ঘটনায় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদলের একদল শিক্ষার্থী। এদিকে সাম্য হত্যার ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল ঘাতকসহ সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেফতার, সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।  

এদিকে ক্যাম্পাসে নয় মাসে দুই খুন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থার দায় স্বীকার করে উপাচার্য এবং প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ছাত্রদল এবং বামপন্থী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপুরে তারা প্রক্টর অফিসের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন।

এ সময় তারা ‘আর চাই না, আর চাই না এন‌এস‌আইয়ের প্রক্টর,’ ‘ক্যাম্পাসে লাশ ঝুলে, প্রক্টর কী করে’, ‘আমার ভাই কবরে , খুনি কেন বাহিরে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই ,সাম্য হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।

একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের নির্বাচন কমিশন ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দুপুর ২টা থেকে অনশন শুরু করেন তিনি।

তার তিন দফা দাবি হলো- সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার করা; ডাকসুর নির্বাচন কমিশন ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া; ঢাবি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো।

তিনি বলেন, মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা থাকলেও এখনো প্রশাসন তা করেনি। দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও দেখতে পাচ্ছি না। দাবি জানাচ্ছি দ্রুত ডাকসুর তফসিল ঘোষণা ও নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

ইয়ামিন বলেন, একটা গোষ্ঠী চেষ্টা করছে যেন ডাকসু নির্বাচন না হয়। পাশাপাশি প্রশাসনের মধ্যেও এই অচলাবস্থা সৃষ্টির কার্যক্রম চলছে। এখানে অনশনে বসেছি, সুনির্দিষ্ট টাইমফ্রেম, সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দিলে এই অনশন থেকে উঠবো না।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্যর পিতা মো.

ফকরুল আলম বুধবার উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে ২০ মে রাতে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপে সহযোগিতার জন্য সাম্যর পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানানো হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে আমরা সকল প্রকার রাজনীতির বাইরে থাকতে চাই।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল স ম য হত য র উপ চ র য অবস থ ন ছ ত রদল

এছাড়াও পড়ুন:

স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা

কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাঁদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী রিক্তা আক্তারও তাঁর মা, ভাই ও বোনকে হত্যার জন্য বাচ্চু মিয়া (৫৫) ও তাঁর সহযোগীদের দায়ী করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে মো. রাসেল মিয়া (৩৫) এবং মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকিকে (২৯)

কুপিয়ে হত্যা করেন হামলাকারীরা। এ ছাড়া সেখানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭) বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে গতকাল শনিবার বাঙ্গরা বাজার থানায় বাচ্চু মিয়াসহ ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র‍্যাব-১১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামি বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল (৫৫) ও দুলাল (৪৫) ছাড়াও আতিকুর রহমান (৪২), বয়েজ মাস্টার (৪৩) ও আকাশকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী ও কুমিল্লায় একাধিক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে

র‍্যাব–১১–এর অধিনায়কের দেওয়া সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য এবং মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, গত ১ জুন রবিউল আওয়ালের একটি মুঠোফোন চুরি হয়। এর জন্য বোরহান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধর করেন বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। তখন ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে বোরহানের বাবা জসীম উদ্দিন স্থানীয় মাতবরদের কাছে যান। এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে একপর্যায়ে তিনি রোকসানা বেগমের কাছে যান। পরে বোরহানের বাবা ছেলের সন্ধান চেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি মামলা করেন।

র‍্যাব–১১–এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তখন বাচ্চু মিয়াসহ অন্যদের ধারণা হয়, রোকসানা বেগমের পরামর্শে জসীম উদ্দিন থানায় মামলা করেছেন। তখন মব সৃষ্টি করে বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা সেদিন রোকসানার বাড়িতে হামলা করে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।

মামলার এজাহারে রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার সময় রোকসানাদের পরিবারকে ঘেরাও করেন বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা। বাড়ির সামনে এসে তাঁরা রোকসানার নাম ধরে ডাকতে থাকেন। রোকসানা ঘর থেকে বের হয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর মাথায় একটি কোপ দেন। বাচ্চু মিয়ার পূর্বপরিচিত স্থানীয় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাছির মিয়াও রোকসানার মাথায় কোপ দেন। এ সময় মাকে বাঁচাতে ঘর থেকে ছুটে আসেন তাঁর ছোট মেয়ে জোনাকী। তখন জোনাকীর মাথায় কোপাতে থাকেন শিমুল বিল্লাহ, রফিকসহ কয়েকজন। জোনাকি ও রোকসানাকে কোপানোর খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে করে তখন বাড়িতে আসেন রোকসানার ছেলে রাসেল। তখন শিমুল বিল্লাহসহ অন্যরা রাসেলকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলে হত্যা করেন। এ সময় রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা

এগিয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর হাতে থাকা রামদা দিয়ে মাথায় কোপ দেন। তখন রুমা পড়ে যান। এ সময় অন্যরাও তাঁর মাথায় কোপাতে থাকেন। পরে মামলার বাদী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর

৯৯৯–এ ফোন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও ততক্ষেণ তিনজন খুন হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান যে পাঁচজনকে নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁরা দেশে আসেননি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • দেশে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ৩ জনের কেউ জঙ্গি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা