Samakal:
2025-05-22@01:49:34 GMT

গাজাবাসীর ঘরের শত্রু

Published: 21st, May 2025 GMT

গাজাবাসীর ঘরের শত্রু

গত মাসে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের ওপর কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। তিনি তাদের ‘কুকুরের সন্তান’ বলে মন্তব্য করেন এবং তারা যেন নিরস্ত্র হয়ে বাকি ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেয়। মনে হচ্ছে, তিনি এ সময় ২০২৩ সালের মে মাসে জাতিসংঘে দেওয়া তাঁর পূর্ববর্তী ভাষণটি ভুলে গেছেন। এতে দখলদারদের আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার জন্য ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’-এর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। আব্বাস এতে বলেছিলেন, ‘হে বিশ্ববাসী, আমাদের রক্ষা করুন। আমরা কি মানুষ নই? এমনকি প্রাণীদেরও সুরক্ষা দেওয়া উচিত। যদি আপনার একটি প্রাণী থাকে, তাহলে আপনি কি তা রক্ষা করবেন না?’

গত ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছিল, সৌদি আরব গাজার ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে। এই প্রস্তাবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ক্ষমতা থেকে অপসারণ। আরব ও মার্কিন সূত্র ‘ইসরায়েল হায়োম’ পত্রিকায় জানিয়েছে, যদি হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ না করে এবং যুদ্ধোত্তর শাসন ব্যবস্থায় যে কোনো ধরনের ভূমিকা পালনে বিরত থাকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজার পুনর্গঠনে আর্থিক বা মাঠ পর্যায়ে শরিক হবে না।’ 
এর পর এপ্রিলে আব্বাস হামাসের প্রতি হুমকি দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে মিসর কায়রোতে হামাসের একটি প্রতিনিধি দলের কাছে ‘যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব’ করে। সেখানেও হামাসের নিরস্ত্রীকরণের দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আব্বাস এবং বিশিষ্ট আরব শাসকগোষ্ঠীর হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান গাজাবাসীর প্রতিরোধের ব্যাপারে আরবের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরোধী মনোভাব কতটা ব্যাপক তা তুলে ধরে। এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যথাযথ প্রশ্ন উত্থাপন করে। তা হলো, দখলদারদের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধ করার কী অধিকার আছে? নিরস্ত্র জনগণের ওপর গণহত্যা চালানোর মতো নৃশংস সামরিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অস্ত্র ছাড়া প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব? আরব শাসকগোষ্ঠী ও বিশ্ব যদি চোখ বন্ধ করে থাকে, তবে দখলদারিত্বের অবসান ও অবরোধ তুলে নেওয়ার কী গ্যারান্টি আছে?
গাজাবাসীর নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানোকে, পশ্চিমাদেরই ভাষায় আগ্রাসনের ‘তোষণ’ এবং তার জন্য উপহার হিসেবে দেখা যায়। এ ধরনের দাবি আরব শাসকদের ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাসের কথাই উন্মোচন করে।

বছরের পর বছর এই বিশ্বাসঘাতকতা এই শাসকগোষ্ঠীর অপকর্মের প্রতি সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে, যার মূলে রয়েছে অক্ষমতা নয়, বরং সাজানো পরিকল্পনা। তাদের কাছে প্রতিরোধ নিরর্থক; দখলদারিত্বকে পরাজিত করা একটি মিথ। আর একটি স্বাধীন ও বিদ্রোহী ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব তাদের বিদ্যমান আঞ্চলিক শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ইহুদিবাদী উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকালে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এসেছে যখন আরব সরকারগুলো অর্থপূর্ণ হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পেয়েছিল; হয় ইহুদিবাদী প্রকল্প চ্যালেঞ্জ করার অথবা অন্তত এর অগ্রগতি ধীর করার সুযোগ ছিল। এর পরিবর্তে আরব রাজনৈতিক নেতৃত্ব বারবার ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। 
গাজায় কয়েক মাসের রক্তপাতকালে বেশির ভাগ আরব সরকার এমনকি হালকা নিন্দা জানাতেও গড়িমসি করেছে। যদিও তাদের বক্তব্যের সুর অবশেষে পরিবর্তিত হয়েছিল। তাদের কর্মকাণ্ড মূলত নিষ্ক্রিয় ছিল অথবা আরও খারাপ ছিল। ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন তাদের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করেছিল। বিপরীতে ইয়েমেনের হুতিরা গণহত্যা বন্ধ করার প্রচেষ্টায় বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছিল। 

গাজা আরব রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতার বিভ্রম ভেঙে দিয়েছে। আর তাদের ভেতরের কাঠামোগত ও নৈতিক দেউলিয়াত্ব উদোম করে দিয়েছে। যখন ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ ও হত্যা করা হচ্ছে, তখন অজস্র সম্পদ, বিদেশি জোট বা অভ্যন্তরীণ দমন সৌদি আরব বা অন্য কোনো পক্ষভুক্ত দেশে প্রকৃত স্থিতিশীলতা দিতে পারে না।

আহমদ রাশেদ ইবনে সাইদ: রাজনৈতিক যোগাযোগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ন রস ত র দখলদ র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

কেন অবৈধ বেড়িবাঁধ কেটে ফেলা হচ্ছে না

কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য দিন দিন সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। সম্প্রতি এ নিয়ে প্রথম আলো দীর্ঘ প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এর আগেও এ দ্বীপের ওপর রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চা, দখলদারি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় এক হাজার একরের প্যারাবন পুড়িয়ে তৈরি করা চিংড়িঘের উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এই অভিযান নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সোনাদিয়ায় নতুন করে অন্তত এক হাজার একরের প্যারাবন ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে সাতটি চিংড়িঘের। প্রকাশ্যে পেট্রল ঢেলে গাছপালা পুড়িয়ে এসব ঘের করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিন হাজার একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে সেখানে নির্মিত হয়েছিল ৩৭টি চিংড়িঘের। এসব ঘের উচ্ছেদ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও গত ছয় মাসে তা কার্যকর হয়নি। এখন চিংড়িঘেরের সংখ্যা ৪৪।

এসব অবৈধ ঘের উচ্ছেদে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বরাবরের মতোই প্রশ্ন ছিল। প্রশাসনের আশ্রয়–প্রশ্রয়েই প্যারাবন ধ্বংস ও অবৈধ ঘের গড়ে উঠেছে বলে স্থানীয়ভাবে আলোচনা আছে। সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তখন চাপে পড়ে যে অভিযান চালানো হয়, সেগুলোকেও লোকদেখানো বলে সাব্যস্ত করতে চান অনেকে।

শুক্রবার অভিযান চালিয়ে মাত্র তিনটি চিংড়িঘেরের অস্থায়ী কিছু ঘর–গুদাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। চিংড়ি চাষের জন্য অবৈধভাবে তৈরি করা ঘেরের বাঁধও কাটেনি। আটক করা হয়নি দখলদার কাউকেও। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ বলেন, অভিযানে তিনটি চিংড়িঘেরের অস্থায়ীভাবে তৈরি বেশ কিছু স্থাপনা (ঘর-গুদাম) গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে নামার পর ঘেরের দখলদার ও শ্রমিকেরা পালিয়ে পাশের প্যারাবনে আত্মগোপন করেন। এ কারণে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

ইউএনওর বক্তব্য থেকেই আমরা জানতে পারি, আগুন লাগিয়ে প্যারাবন ধ্বংসের ঘটনা থামছে না। বৃহস্পতিবার (১৫ মে ২০২৫) বিকেলেও আগুন দিয়ে গাছপালা পোড়ানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে কি চলতে থাকবে? শুধু তিনটি ঘেরের অস্থায়ী স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েই কি এ দখলদারি থামানো সম্ভব? কেন আদালতের নির্দেশনা মেনে সব কটি অবৈধ ঘের পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হচ্ছে না? কেন সব অবৈধ বাঁধ কেটে ফেলা হচ্ছে না? মহেশখালীতে জনমনে প্রতিষ্ঠিত যে কারা এসব প্যারাবন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, কারা এসব অবৈধ চিংড়িঘেরের মালিক। ফলে অভিযানের সময় দখলদার ও শ্রমিক পালিয়ে গেছে বলে কাউকে ধরা যায়নি, এই যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা দেখতে চাই স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর সোনাদিয়ার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কতটা আন্তরিক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘পুকুরচুরি’র শিকার ঢাকার ৩১ পুকুর
  • কেন অবৈধ বেড়িবাঁধ কেটে ফেলা হচ্ছে না