Samakal:
2025-11-02@13:15:46 GMT

গাজাবাসীর ঘরের শত্রু

Published: 21st, May 2025 GMT

গাজাবাসীর ঘরের শত্রু

গত মাসে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের ওপর কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। তিনি তাদের ‘কুকুরের সন্তান’ বলে মন্তব্য করেন এবং তারা যেন নিরস্ত্র হয়ে বাকি ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেয়। মনে হচ্ছে, তিনি এ সময় ২০২৩ সালের মে মাসে জাতিসংঘে দেওয়া তাঁর পূর্ববর্তী ভাষণটি ভুলে গেছেন। এতে দখলদারদের আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার জন্য ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’-এর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। আব্বাস এতে বলেছিলেন, ‘হে বিশ্ববাসী, আমাদের রক্ষা করুন। আমরা কি মানুষ নই? এমনকি প্রাণীদেরও সুরক্ষা দেওয়া উচিত। যদি আপনার একটি প্রাণী থাকে, তাহলে আপনি কি তা রক্ষা করবেন না?’

গত ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছিল, সৌদি আরব গাজার ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে। এই প্রস্তাবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ক্ষমতা থেকে অপসারণ। আরব ও মার্কিন সূত্র ‘ইসরায়েল হায়োম’ পত্রিকায় জানিয়েছে, যদি হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ না করে এবং যুদ্ধোত্তর শাসন ব্যবস্থায় যে কোনো ধরনের ভূমিকা পালনে বিরত থাকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজার পুনর্গঠনে আর্থিক বা মাঠ পর্যায়ে শরিক হবে না।’ 
এর পর এপ্রিলে আব্বাস হামাসের প্রতি হুমকি দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে মিসর কায়রোতে হামাসের একটি প্রতিনিধি দলের কাছে ‘যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব’ করে। সেখানেও হামাসের নিরস্ত্রীকরণের দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আব্বাস এবং বিশিষ্ট আরব শাসকগোষ্ঠীর হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান গাজাবাসীর প্রতিরোধের ব্যাপারে আরবের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরোধী মনোভাব কতটা ব্যাপক তা তুলে ধরে। এটি স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যথাযথ প্রশ্ন উত্থাপন করে। তা হলো, দখলদারদের বিরুদ্ধে অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধ করার কী অধিকার আছে? নিরস্ত্র জনগণের ওপর গণহত্যা চালানোর মতো নৃশংস সামরিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অস্ত্র ছাড়া প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব? আরব শাসকগোষ্ঠী ও বিশ্ব যদি চোখ বন্ধ করে থাকে, তবে দখলদারিত্বের অবসান ও অবরোধ তুলে নেওয়ার কী গ্যারান্টি আছে?
গাজাবাসীর নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানোকে, পশ্চিমাদেরই ভাষায় আগ্রাসনের ‘তোষণ’ এবং তার জন্য উপহার হিসেবে দেখা যায়। এ ধরনের দাবি আরব শাসকদের ফিলিস্তিনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাসের কথাই উন্মোচন করে।

বছরের পর বছর এই বিশ্বাসঘাতকতা এই শাসকগোষ্ঠীর অপকর্মের প্রতি সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে, যার মূলে রয়েছে অক্ষমতা নয়, বরং সাজানো পরিকল্পনা। তাদের কাছে প্রতিরোধ নিরর্থক; দখলদারিত্বকে পরাজিত করা একটি মিথ। আর একটি স্বাধীন ও বিদ্রোহী ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব তাদের বিদ্যমান আঞ্চলিক শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ইহুদিবাদী উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকালে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এসেছে যখন আরব সরকারগুলো অর্থপূর্ণ হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পেয়েছিল; হয় ইহুদিবাদী প্রকল্প চ্যালেঞ্জ করার অথবা অন্তত এর অগ্রগতি ধীর করার সুযোগ ছিল। এর পরিবর্তে আরব রাজনৈতিক নেতৃত্ব বারবার ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। 
গাজায় কয়েক মাসের রক্তপাতকালে বেশির ভাগ আরব সরকার এমনকি হালকা নিন্দা জানাতেও গড়িমসি করেছে। যদিও তাদের বক্তব্যের সুর অবশেষে পরিবর্তিত হয়েছিল। তাদের কর্মকাণ্ড মূলত নিষ্ক্রিয় ছিল অথবা আরও খারাপ ছিল। ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন তাদের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করেছিল। বিপরীতে ইয়েমেনের হুতিরা গণহত্যা বন্ধ করার প্রচেষ্টায় বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছিল। 

গাজা আরব রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতার বিভ্রম ভেঙে দিয়েছে। আর তাদের ভেতরের কাঠামোগত ও নৈতিক দেউলিয়াত্ব উদোম করে দিয়েছে। যখন ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ ও হত্যা করা হচ্ছে, তখন অজস্র সম্পদ, বিদেশি জোট বা অভ্যন্তরীণ দমন সৌদি আরব বা অন্য কোনো পক্ষভুক্ত দেশে প্রকৃত স্থিতিশীলতা দিতে পারে না।

আহমদ রাশেদ ইবনে সাইদ: রাজনৈতিক যোগাযোগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ন রস ত র দখলদ র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা খুবই অমানবিক। যে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের ঘরবাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে আইনি আদেশ পালন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানবিকতার প্রতিটি শর্তকে এক্সকাভেটরের আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের জন্য তাদের জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই প্রক্রিয়া এড়াতে দখলদার চক্র জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। উচ্ছেদের শিকার কোল পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই জমির আসল মালিক ছিলেন তাঁদেরই ‘জাত-ভাই’। অথচ তাঁদের হিন্দু সাজিয়ে জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এই জমির মালিকানা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমি দখলদার চক্র। এরপর গরিব কোল পরিবারগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারায় আদালতের একতরফা রায় যায় দখলদার চক্রের পক্ষে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারগুলোকে গত সোমবার উচ্ছেদ করা হয়।

কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসা পরিবারগুলো ভিটা ছাড়তে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় চেয়েও পায়নি। কিন্তু উচ্ছেদকারী দল, আদালতের প্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে সেই মানবিক আবেদন উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে গরু বিক্রির অর্থ, আসবাব, এমনকি রান্না করা খাবারও চাপা পড়েছে মাটির নিচে। পরবর্তী সময়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

আদালত প্রতিনিধির বক্তব্য অনুযায়ী, বাদীপক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উচ্ছেদকারী দলের নৈতিক দায়িত্ব ছিল কেবল দখল বুঝিয়ে দেওয়া নয়, বরং মানবিক বিপর্যয় এড়ানো। একটি গরিব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারকে অভুক্ত অবস্থায় মশার কামড় খেতে বাঁশঝাড়ের নিচে ফেলে আসা কোনোভাবেই সভ্য সমাজের আইন প্রয়োগ হতে পারে না।

উচ্ছেদের দুই দিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাঁকে জানানোই হয়নি। ফলে এখানে আইনি আদেশের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কেন স্থানীয় প্রশাসনকে এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে অন্ধকারে রাখা হলো? উপজেলা প্রশাসন ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে চাল ও অল্প অর্থসহায়তা দিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু সেটি তো সময়সাপেক্ষ। পরিবারগুলো নারী ও শিশুদের নিয়ে এখন কোথায় যাবে?

সমতলের ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইনকে অপব্যবহার করে যে চক্র পরিবারগুলোকে উদ্বাস্তু করে দিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে গোটা বিষয়টি তদন্ত করা হোক। আমরা আশা করব, কোল পরিবারগুলোকে তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন