Samakal:
2025-06-20@00:16:41 GMT

পদাবলি

Published: 19th, June 2025 GMT

পদাবলি

দেবী-না-মানবী কিছু নেই মনে 
আবিদ আনোয়ার

বশীকরণের মন্ত্র শিখিনি,
নীল খামে কোনো পত্র লিখিনি,
তবুও চেয়েছি মন বিকিকিনি
                  দীনহীন কিছু পদ্যে–
শব্দে-ছন্দে এই দূতিয়ালি
ব্যর্থ হয়েছে তবু খালি-খালি 
এখনও বইছে ক্ষরণের কালি
                 ধমনি-শিরার মধ্যে।

উবে গেছে আশা হয়ে কর্পূর, 
বাঁশি থেমে গেছে তবু বাজে সুর,
যত যায় দূরে ততই মধুর,
                 ঘোরে-পাওয়া এই সত্তা–
ঘুমের ভেতরে নিদ্রাবিহীন
শুনি সেই সুর সারানিশিদিন;
দেহ ক্ষয়ে গেছে, আছে শুধু চিন,
                 তারও নেই নিরাপত্তা।

আমার পৃথিবী বর্তুলাকার:
যে-রেখায় আমি ঘুরি চারিধার
কেন্দ্রে রয়েছে সেই সে-রেখার
                     একটি নিছক বিন্দু–
বুকে তার বল সেন্ট্রিপেটাল
টান খেয়ে যার হয়েছি নাকাল, 
পেরিয়েছি খানাখন্দ ও খাল,
         তেরো নদী-সাত সিন্ধু।

একদা কখন কবে কুক্ষণে
দেবী-না-মানবী কিছু নেই মনে
একা নদীতীরে নাকি নীপবনে
                দেখা দিয়েছিল সত্যি–
নাকি আমি নিজে শুনে নিশিডাক
পথে নেমে এসে খাই ঘুরপাক;
এই গতিবিধি মিথ্যে বেবাক,
                   মানে নেই একরত্তি!

 

ছন্দের রান্নাঘর
টোকন ঠাকুর 

ছন্দ আমাকে শিখতে হয়নি বলে
আমি বেঁচে গেছি আমি বেঁচে গেছি খুব
শুনেছি ছন্দের ঘর-বারান্দা আছে
আমারও আছে ভাবের মধ্যে ডুব

ছন্দবিহীন ছন্নছাড়া ভাষা
চৈত্র-ফেরা হাওয়ায় গুঁজে রাখি
মনে হলো যে, তোমাকে বলা যায়–
আমি একটি পাখির যমজ পাখি

পাখিরা তো ছন্দ জানে না
ব্যাকরণও পড়েনি বোধ হয়!
অভিধানও না-ঘেঁটে তাই ঘটে
পাখির সঙ্গে গাছের পরিচয়

গাছের কথা উঠল যখন বলি–
গাছ বলল, কবিতা না লিখে
বিষণ্ন এক মেয়ের কাছে যাও
তার কাছেই আজ ছন্দ আসো শিখে

এখন বিষণ্ন সেই মেয়ে কোথায় পাই
যার চোখে মেঘ, বৃষ্টি আসবে না
যার সঙ্গে যাওয়া হলো না বলে
তার মন আর কখনো হাসবে না

সেই মেয়েটিই ছন্দ-গুরু মা
পাখি আমি তাকেই খুঁজে ফিরি
না পেলে তো জানতে পারব না
কেমনে বহে হাওয়া ঝিরিঝিরি

কেমনে হয় ধুকপুকানি বুকে
জাপ্টে ধরার এক মুহূর্ত আগে
হরিণ পালায়, তার পেছনে ছুটে
কোন ছন্দে কবিতা লেখে বাঘে?

 

মানুষটা নেই তবু
বেনজির শিকদার

দূরে কিছু দেখা যায়, অদেখার ছলে;
মানুষটা নেই, তবু ছায়া পড়ে জলে।
মিশে গেছে তারকারা আকাশের বুকে
ঘরে ফেরা পাখিদের ভ্রম চোখে মুখে।

ছায়া থেকে চোখ ফেরে মায়াঘেরা মুখে
আনত একাকী কেউ ধুঁকছে অসুখে!
বাতায়ন ছোট হয়ে মরে গেছে স্বর;
অনেকেরই অচেনা আপনার ঘর।

ঘর যদি পর তবু ধরে থাকা স্মৃতি
ধরে থাকা শত ঢেউ সাগর-উদ্ধৃতি!
সব দেখে ফিরে আসে গতির জাহাজ;
আলগোছে ডেকে বলে– দেখে যাও আজ!

দেখে যাও এ কেমন ছলনার ছল;
মানুষটা নেই, তবু ছায়া টলমল।

 

সিলভিয়ার সঙ্গে 
নিজাম বিশ্বাস

সিলভিয়ার সঙ্গে তোমার সখ্য 
আমাকে আতঙ্কিত করে সন্ধ্যার মতো–
পোষা হাঁস যদি ঘরে না ফিরে
নীলচে মোরগটিও যদি পথ ভুলে যায়,
এ পথে সারারাত বনবিড়াল চষে বেড়ায়– 
তুমি ওর সঙ্গে মিশবে না,
ও ডাকলে বলবে, এখন অনেক কাজ
লাল ফিতায় বাঁধতে হবে বেণি,
কাঁঠালের পাতায় মোমের কালি দিয়ে
কাজল পরতে হবে চোখে,
কবুতরের পালকে আলতা মেখে
আঁকতে হবে পা .

..
এমন এমন অজুহাত দিয়ে তুমি
বিকেলটা আমার সঙ্গে থেকে যেয়ো

সিলভিয়ার সঙ্গে একদম মিশবে না,
ও যদি কোথাও যেতে বলে, যাবে না,
সিলভিয়ার সঙ্গে তুমি কোথাও যাবে না।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা: চেরনোবিলের মতো বিপর্যয় হবে না

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ হলেও চেরনোবিল-ফুকুশিমার মতো বিপর্যয় ডেকে আনবে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, এগুলো মূলত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এ ধরনের স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা চেরনোবিল বা ফুকুশিমার মতো ভয়াবহ ‘পারমাণবিক দুর্ঘটনা’ ঘটানোর ঝুঁকি তৈরি করে না। এর কারণ হলো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে কোনো পারমাণবিক বিক্রিয়া (নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকশন) ঘটে না। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরে ইউরেনিয়ামের পরমাণু বিভাজিত হয়ে ফিশন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন করে এবং তাতে তৈরি হয় অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য।

অন্যদিকে, সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো শুধু ইউরেনিয়ামকে জ্বালানি হিসেবে প্রস্তুত করে, সেখানে শক্তি উৎপাদনের কোনো প্রক্রিয়া চলে না। 

ব্যাঙ্গোর বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক উপাদান বিশেষজ্ঞ সায়মন মিডলবার্গ  বলেন, যদি কোনো সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় বোমা মারা হয়, তাহলে ভেতরের ইউরেনিয়াম পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এতে কোনো পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা নেই। কাজেই এ ক্ষতি হবে স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ এবং একমাত্র আশপাশের একটি ছোট এলাকা ছাড়া কোনো বিস্তৃত তেজস্ক্রিয় ঝুঁকি তৈরি হবে না।

রয়টার্স জানায়, ইরানের ভূগর্ভে নির্মিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম একমাত্র প্রচলিত অস্ত্র হচ্ছে মার্কিন ‘বাঙ্কার-ব্লাস্টার’ বোমা। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়লে সংঘাত পরিস্থিতিতে অনেকের মনেই প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আসলেই ইরানের সন্দেহভাজন পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনায় শক্তিশালী বাঙ্কার-ব্লাস্টার বোমা ফেলে, তাহলে এর পরিণতি কী হবে? 

বিকিরণ ঝুঁকি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই বোমা মাটির নিচের বাঙ্কার ধ্বংস করে ফেললেও এর ব্যাপক বিকিরণ দূষণের আশঙ্কা কম।

ইরানের ‘ফোরডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্লান্ট’ নামের এই রহস্যময় স্থাপনা পাহাড়ের গুহায় নির্মিত এবং এখানে ইউরেনিয়াম আইসোটোপ প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এতে এখানে ইউরেনিয়াম সাধারণত ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড নামক গ্যাস আকারে থাকে।

এ গ্যাস অণু তুলনামূলক বড় ও ভারী হওয়ায় এটি অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম বলে জানান আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য পদার্থবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ এমিলি ক্যাফ্রি। তিনি আরও বলেন, হামলার ফলে বিকিরণ বা দূষণ ওই স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ