দেবী-না-মানবী কিছু নেই মনে
আবিদ আনোয়ার
বশীকরণের মন্ত্র শিখিনি,
নীল খামে কোনো পত্র লিখিনি,
তবুও চেয়েছি মন বিকিকিনি
দীনহীন কিছু পদ্যে–
শব্দে-ছন্দে এই দূতিয়ালি
ব্যর্থ হয়েছে তবু খালি-খালি
এখনও বইছে ক্ষরণের কালি
ধমনি-শিরার মধ্যে।
উবে গেছে আশা হয়ে কর্পূর,
বাঁশি থেমে গেছে তবু বাজে সুর,
যত যায় দূরে ততই মধুর,
ঘোরে-পাওয়া এই সত্তা–
ঘুমের ভেতরে নিদ্রাবিহীন
শুনি সেই সুর সারানিশিদিন;
দেহ ক্ষয়ে গেছে, আছে শুধু চিন,
তারও নেই নিরাপত্তা।
আমার পৃথিবী বর্তুলাকার:
যে-রেখায় আমি ঘুরি চারিধার
কেন্দ্রে রয়েছে সেই সে-রেখার
একটি নিছক বিন্দু–
বুকে তার বল সেন্ট্রিপেটাল
টান খেয়ে যার হয়েছি নাকাল,
পেরিয়েছি খানাখন্দ ও খাল,
তেরো নদী-সাত সিন্ধু।
একদা কখন কবে কুক্ষণে
দেবী-না-মানবী কিছু নেই মনে
একা নদীতীরে নাকি নীপবনে
দেখা দিয়েছিল সত্যি–
নাকি আমি নিজে শুনে নিশিডাক
পথে নেমে এসে খাই ঘুরপাক;
এই গতিবিধি মিথ্যে বেবাক,
মানে নেই একরত্তি!
ছন্দের রান্নাঘর
টোকন ঠাকুর
ছন্দ আমাকে শিখতে হয়নি বলে
আমি বেঁচে গেছি আমি বেঁচে গেছি খুব
শুনেছি ছন্দের ঘর-বারান্দা আছে
আমারও আছে ভাবের মধ্যে ডুব
ছন্দবিহীন ছন্নছাড়া ভাষা
চৈত্র-ফেরা হাওয়ায় গুঁজে রাখি
মনে হলো যে, তোমাকে বলা যায়–
আমি একটি পাখির যমজ পাখি
পাখিরা তো ছন্দ জানে না
ব্যাকরণও পড়েনি বোধ হয়!
অভিধানও না-ঘেঁটে তাই ঘটে
পাখির সঙ্গে গাছের পরিচয়
গাছের কথা উঠল যখন বলি–
গাছ বলল, কবিতা না লিখে
বিষণ্ন এক মেয়ের কাছে যাও
তার কাছেই আজ ছন্দ আসো শিখে
এখন বিষণ্ন সেই মেয়ে কোথায় পাই
যার চোখে মেঘ, বৃষ্টি আসবে না
যার সঙ্গে যাওয়া হলো না বলে
তার মন আর কখনো হাসবে না
সেই মেয়েটিই ছন্দ-গুরু মা
পাখি আমি তাকেই খুঁজে ফিরি
না পেলে তো জানতে পারব না
কেমনে বহে হাওয়া ঝিরিঝিরি
কেমনে হয় ধুকপুকানি বুকে
জাপ্টে ধরার এক মুহূর্ত আগে
হরিণ পালায়, তার পেছনে ছুটে
কোন ছন্দে কবিতা লেখে বাঘে?
মানুষটা নেই তবু
বেনজির শিকদার
দূরে কিছু দেখা যায়, অদেখার ছলে;
মানুষটা নেই, তবু ছায়া পড়ে জলে।
মিশে গেছে তারকারা আকাশের বুকে
ঘরে ফেরা পাখিদের ভ্রম চোখে মুখে।
ছায়া থেকে চোখ ফেরে মায়াঘেরা মুখে
আনত একাকী কেউ ধুঁকছে অসুখে!
বাতায়ন ছোট হয়ে মরে গেছে স্বর;
অনেকেরই অচেনা আপনার ঘর।
ঘর যদি পর তবু ধরে থাকা স্মৃতি
ধরে থাকা শত ঢেউ সাগর-উদ্ধৃতি!
সব দেখে ফিরে আসে গতির জাহাজ;
আলগোছে ডেকে বলে– দেখে যাও আজ!
দেখে যাও এ কেমন ছলনার ছল;
মানুষটা নেই, তবু ছায়া টলমল।
সিলভিয়ার সঙ্গে
নিজাম বিশ্বাস
সিলভিয়ার সঙ্গে তোমার সখ্য
আমাকে আতঙ্কিত করে সন্ধ্যার মতো–
পোষা হাঁস যদি ঘরে না ফিরে
নীলচে মোরগটিও যদি পথ ভুলে যায়,
এ পথে সারারাত বনবিড়াল চষে বেড়ায়–
তুমি ওর সঙ্গে মিশবে না,
ও ডাকলে বলবে, এখন অনেক কাজ
লাল ফিতায় বাঁধতে হবে বেণি,
কাঁঠালের পাতায় মোমের কালি দিয়ে
কাজল পরতে হবে চোখে,
কবুতরের পালকে আলতা মেখে
আঁকতে হবে পা .
এমন এমন অজুহাত দিয়ে তুমি
বিকেলটা আমার সঙ্গে থেকে যেয়ো
সিলভিয়ার সঙ্গে একদম মিশবে না,
ও যদি কোথাও যেতে বলে, যাবে না,
সিলভিয়ার সঙ্গে তুমি কোথাও যাবে না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফাউন্ডেড স্কলারশিপ পেলেন বেরোবি শিক
বিশ্বের স্বনামধন্য চার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান মেহেদী।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মৃত মো. মোস্তাফিজার প্রধান ও কল্পনা দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি।
তিনি এসএসসিতে জিপিএ ৫.০০ ও এইচএসসি জিপিএ ৪.৫০ পেয়েছেন। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন নিজ বিভাগেও। তিনি স্নাতকে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৬৪ পেয়েছেন। পরে ৭ স্কোর পেয়ে আইইএলটিএস সম্পন্ন করেন তিনি। এ পর্যন্ত তার ১২টি গবেষণাপত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে টিটিসি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ
পঞ্চগড়ে যুবক খুন: জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
এছাড়া আন্তর্জাতিক ও ন্যাশনাল সম্মেলনে পোস্টার উপস্থাপনা করেছেন চারবার। বেরোবি শিক্ষক অধ্যপক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের গবেষণ সহকারী কর্মরত তিনি।
তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি, মালেশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ তেরেঙ্গানু,থাইল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ থাম্মাসাত এবং টেস্ট টোকিও স্কলাশিপের অধীনে থাইলান্ডের ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফাউন্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন। তবে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি জন্য ভর্তি হয়েছেন থাইল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ থাম্মাসাতের বায়োকেমিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে।
এ বিষয়ে মাহামুদুল হাসান বলেন, “আমি মুলত তৃতীয় বর্ষ থেকে গবেষণার কাজ শুরু করি। এত কঠিন পরিশ্রমের পর যখন সফলতা এসেছে, তখন তো সবাই খুশি থাকে। শুক্রবার যখন নামাজ পড়ে ল্যাপটপটা চেক করে দেখি আমার স্কলারশিপের মেইল আসছে। তখনকার অনুভূতি বলে প্রকাশ করার মতো না।”
বেরোবি শিক্ষক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি খুবই খুশি। সে কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমিও তাকে সাহায্য করেছি। এর ফলে সেই স্কলারশিপ পেয়েছে।”
উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী বলেন, “প্রথমে তাকে অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি এ রকম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ুক। এটা আমি প্রত্যাশা করি।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী