সরাসরি: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরো আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান মালয়েশিয়ার
Published: 23rd, June 2025 GMT
ইসরায়েলের ‘উস্কানিমূলক ও সহিংস আচরণ’ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আরো কঠোর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
সোমবার (২৩ জুন) আলজাজির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “যখন তারা ইরানের জনগণের ওপর হামলা চালায় এবং হত্যা করে, তখন প্রতিক্রিয়া আসাটা স্বাভাবিক। আমাদের অবস্থান হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।”
আরো পড়ুন:
ইরানে মার্কিন হামলার সমর্থন অস্ট্রেলিয়ার, তীব্র নিন্দা উত্তর কোরিয়ার
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ‘ভয়াবহ’ ধ্বংস হয়েছে: ট্রাম্প
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “গাজায় এখনো নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এখন তারা ইরানেও হামলা চালাচ্ছে এবং ইরান প্রতিরোধ করছে। বাইরের শক্তি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়া পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রশ্ন হলো, যদি ইরানকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে না দেওয়া হয়, তাহলে ইসরায়েলকে কেন বারবার এমন আগ্রাসনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে?”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
জেসি ওয়েন্স: হিটলারের দর্পচূর্ণ করা এক ‘বুলেট’
২০১২। স্টুয়ার্ট ওয়েন র্যানকিন একটা কাজে গিয়েছেন জার্মানিতে। কাজ-টাজ শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে বের হলেন একটু উদ্যাপন করতে। ইউরো চলছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে গ্রিসকে ৪-২ গোলে হারিয়ে জার্মানদের ইউরো-উৎসব চাঙা রেখেছেন ওজিল-লামরা। মুখে জার্মান পতাকা এঁকে রাতের পার্টিতে মজতে মজতে ৪৫ বছর বয়সী মানুষটি হুট করে একটা ধাক্কা খেলেন।
‘কী অদ্ভুত, একেবারে স্যুরিয়াল! জার্মানিতে বসে, আমি জার্মান দলের পক্ষে গলা ফাটাই। কী অদ্ভুত, যেন চক্রপূরণ!’
র্যানকিন তাঁর নানার পরিচয় কোথাও জাহির করেন না। কিন্তু সেদিন সম্ভবত মনের মধ্যে ওই উপলব্ধিটুকুর জন্যই বলে ফেললেন।
সবার চোখে অবিশ্বাস। আমার অবশ্য সয়ে গেছে। ওরা জানতে চাইল, ‘লুজ লংকে চেনো? আমি বললাম, অবশ্যই।’
আড্ডার মধ্যে একটি মেয়ে মুঠোফোনের কন্ট্যাক্ট থেকে জুলিয়া লুইজি লংকে খুঁজে বের করে বলল, ‘আমি লুজ লংয়ের নাতির বন্ধু।’
তারপর কী ঘটেছে, সেটা জানা গেল গত বছর সিএনএনে র্যানকিনের জবানিতে। জুলিয়া লংয়ের সঙ্গে ডিনারে গিয়েছিলেন র্যানকিন। তাঁর ভাষায়, ‘খুব বিশেষ একটা মুহূর্ত। বিশেষ কিছু কথাবার্তাও হয়। অলিম্পিয়ানের নাতি হতে কেমন লাগে, তা নিয়ে কথা বলেছি।’
র্যানকিন নিশ্চয়ই সেদিন টের পেয়েছিলেন, চোখের সামনে অলিম্পিকের একখণ্ড ‘ক্ল্যাসিক’ ইতিহাসের চক্রপূরণ হতে দেখতে কেমন লাগে!
র্যানকিনের নানা জেসি ওয়েন্স।
জুলিয়ার দাদা লুজ লং।
দুজনই অলিম্পিক কিংবদন্তি। ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে বন্ধু।
অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি রাজনীতির পাঠে নিগ্রো রক্তের সঙ্গে আর্য রক্তের ধারক জার্মানদের বন্ধুত্ব ভালো চোখে দেখা হয়নি। লুজকে সে জন্য অনেক কিছুই সইতে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেসব যন্ত্রণা-টন্ত্রণা থেকে লুজ চিরমুক্তি নিয়ে নেওয়ার পর গল্পটা আর এগোয়নি।
সেই সাক্ষাতে র্যানকিন ও জুলিয়ার মনে তাই রোমাঞ্চ না জেগে পারে না। তাঁরা-ই তো ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ! আড্ডায়-আলাপে নিশ্চয়ই তাঁদের মন খুঁজে নিয়েছিল অদেখা সেই বার্লিন অলিম্পিকে। অলিম্পিয়াস্তাদিওনে সাদা-কালো সেই সময়ে আশপাশে ছোট-বড় স্বস্তিকা চিহ্ন, গ্যালারিতে উঁচু আসনে অ্যাডলফ হিটলার, চারপাশে নাৎসিজমের প্রচার আর মাঠে ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রসববেদনায় কাতর ইতিহাস।
সেই ইতিহাসের জন্মেই তো হিটলারের জাতিগত অহম রাইনের বুকে টুকরা টুকরা বরফ খণ্ডের মতো ভেঙে খান খান হলো!
সোনাঝরা দিনে দর্পচূর্ণ১৯৩৩ সাল। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে দুটি ঘটনা ঘটল। তিন বছর পর সে দুটি ঘটনার পথরেখা এসে মিলল অলিম্পিয়াস্তাদিওনে।
সে বছর শিকাগোয় ন্যাশনাল হাইস্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ গজ (৯১ মিটার) দৌড় ৯.৪ সেকেন্ডে শেষ করে বিশ্ব রেকর্ড ছুঁল ওয়েন্স। ২২০ গজ (২০১ মিটার) দৌড়ে ভাঙল ন্যাশনাল হাইস্কুল (২০.৭ সেকেন্ড) রেকর্ড আর লং জাম্পে পাড়ি দিল ২৪ ফুট ৯.৫ ইঞ্চি। সে বছরই জার্মানির চ্যান্সেলর হলেন হিটলার।
জার্মানরা যে জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ, তা বিশ্বের সামনে প্রমাণে তিন বছর পর বার্লিন অলিম্পিক হলো হিটলারের লক্ষ্যবস্তু। নাৎসিজমের একটা ডিসপ্লেও বিশ্বকে দেখানোর মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলো। অতীতে আর কোনো অলিম্পিক গেমস টিভিতে বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয়নি। ১৯৩৬ বার্লিনই টিভিতে বিশ্বব্যাপী প্রচার পাওয়া প্রথম অলিম্পিক।
আমি হিটলারের সঙ্গে করমর্দন করতে বার্লিন অলিম্পিকে যাইনি। দৌড়াতে গিয়েছিলাম এবং সেটাই করেছি।জেসি ওয়েন্সজার্মানদের জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ প্রমাণে মরিয়া হিটলারের জার্মানি দল থেকে ইহুদি ক্রীড়াবিদেরা বাদ পড়লেন। নাৎসিদের চেতিয়ে তোলা হবে, এই ভয়ে কিছু দেশ ইহুদি ক্রীড়াবিদদের বহরে রাখল না। নাৎসিবাদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বহিষ্কৃত হলো লিথুয়ানিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে প্রশ্ন উঠল, হিটলারের গেমসে অংশ নেওয়া ঠিক না বেঠিক? সেখানে কৃঞ্চাঙ্গদের সংগঠন এনএএসিপির সচিব ওয়াল্টার ফ্রান্সিস হোয়াইট বার্লিন অলিম্পিকে অংশ না নিতে ওয়েন্সকে খুব করে বোঝালেন। আমেরিকান অলিম্পিক কমিটির প্রধান আভেরি ব্রান্ডেজ ঘোষণা করলেন, গেমস রাজনীতি নয়, অ্যাথলেটদের জায়গা। ওয়েন্সের জায়গা থেকে দেখলে, বার্লিন গেমস নিয়ে চারপাশে যা শুনছিলেন, সেই অভিজ্ঞতাগুলো তাঁর জন্য নতুন না।
শুধু গায়ের রংটা যে মানুষের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাকের কারণ, ওয়েন্সকে সেটা অল্প বয়সেই বুঝতে হয়েছিল। ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তৃতীয় বর্ষে অলিম্পিক দলে সুযোগ পেলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের প্রিমিয়ার অ্যাথলেট হয়েও স্কলারশিপ পাননি। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পেয়েছেন সেই নামটি ‘দ্য বাকায় বুলেট।’ পড়াশোনার খরচ জোগাতে কী করেননি! যুক্তরাষ্ট্রের একজন কৃঞ্চাঙ্গ নাগরিক হিসেবে তাঁর সিভিতে যেন কর্মদক্ষতার কমতি ছিল না; গ্যাস পাম্প, লিফট অপারেটর, টেবিলের ওয়েটার!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড দলের অধিনায়ক, তবে (প্রথম) কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার জন্যই সম্ভবত ক্যাম্পাসে থাকার সুযোগ পাননি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে শ্বেতাঙ্গ সতীর্থরা যেসব রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন, তাঁর সেসব জায়গায় অনুমতি ছিল না।
ওয়েন্স বার্লিনে গেলেন।
কেন গিয়েছিলেন, আর হিটলার তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন কি না—এ দুটি প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে পাওয়া যায় অনেক পরে ওয়েন্সের বলে যাওয়া একটি কথায়। ২০১৬ সালে ‘বিল্ড’কে বলেছিলেন তাঁর মেয়ে মার্লিন ওয়েনস র্যানকিন, ‘তিনি সব সময় বলতেন, “আমি হিটলারের সঙ্গে করমর্দন করতে বার্লিন অলিম্পিকে যাইনি। দৌড়াতে গিয়েছিলাম এবং সেটাই করেছি।”’
এসএস ম্যানহাটান জাহাজে চেপে যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক দল জার্মানিতে পৌঁছাল।
অলিম্পিক ভিলেজে ওয়েন্সের সঙ্গে দেখা হলো অ্যাডিডাসের প্রতিষ্ঠাতা এডি ড্যাসলারের। হুট করে সাক্ষাৎ নয়, ড্যাসলার রথ দেখার সঙ্গে কলাও বেচলেন; ওয়েন্স তাদের জুতা পরতে রাজি হন। কোনো আফ্রিকান-আমেরিকান অ্যাথলেটের সেটাই প্রথম স্পনসর।