স্বজন ভেবে লাশ নিয়ে এলেন, গোসল করালেন, এরপর যা ঘটল
Published: 23rd, June 2025 GMT
সিলেটের জকিগঞ্জে ভুল করে এক ব্যক্তিকে নিজেদের স্বজন মনে করে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল পরিবার। তবে দাফনের আগে খবর আসে—যাকে মৃত মনে করা হচ্ছিল, তিনি জীবিত। পরে জানা যায়, ভুলে অন্য একজনের মরদেহকে নিজেদের স্বজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। পুলিশি অনুমতি নিয়ে পরে ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়। গতকাল রোববার জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি। পরে তাঁর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা বাবুল আহমদ মরদেহ দেখে সেটিকে তাঁর ভাই সাবু আহমদ (৫৫) বলে শনাক্ত করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি তাঁর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার রাতে বাবুল আহমদ ও তাঁদের মামাতো ভাই উজির উদ্দিন মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন। গতকাল সকালে দাফনের প্রস্তুতির সময় গোসলের ঠিক পরপরই গঙ্গাজল এলাকা থেকে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানান, সাবু আহমদ জীবিত এবং তিনি গঙ্গাজল বাজারে অবস্থান করছেন। বিষয়টি জানার পর উজির উদ্দিন গঙ্গাজল বাজারে গিয়ে সত্যি তাঁর ভাই সাবুকে জীবিত দেখতে পান।
উজির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু তাঁদের পরিবার নয়, যাঁরা লাশটি দেখেছেন, সবাই বলেছিলেন, এটা সাবু আহমদ। কিন্তু মূলত তাঁদের ভাই বেঁচে ছিলেন। তিনি ভবঘুরে অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে করতে গঙ্গাজল এলাকায় গিয়েছিলেন। এরপর তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরে নিহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ফিরিয়ে দিতে গেলে সেটি আর নিতে চাননি। এরপর দুপুরে স্থানীয় এতিছানগর কবরস্থানে তাঁরাই নিহত ব্যক্তির লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, তাঁদের ভাই সাবু আহমদ গতকাল রাতেও বাড়িতে ছিলেন। আজ সোমবার সকালে আবার বাড়ি থেকে বের হয়েছেন।
সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শামীম আহমদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ওই ব্যক্তির লাশকে ভুল করে সাবু আহমদ ভেবে বাড়িতে আনা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, সাবু আহমদ বেঁচে আছেন। বিষয়টি এলাকায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দাফনের ব্যবস্থাও তাঁরাই করেছেন।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ ছিল, এমন তথ্য পুলিশকে জানানো হয়েছিল। তবে পুলিশ নিহত ব্যক্তির মরদেহ নিতে গেলে জানানো হয়, পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, যাঁরা লাশটি শনাক্ত করেছিলেন, তাঁদের সেই স্বজন বেঁচে আছেন। এরপর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মরদেহ তাঁরাই দাফনের ব্যবস্থা করেছেন। তবে এ নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনা ও সাবেক ৩ ইসির বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএনপি। এতে তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯ জন এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ সময় তার সঙ্গে বিএনপির আরও তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক সমকালকে বলেন, আজ রোববার বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল থানায় এসে তিন দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এতে তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯ জন এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে রকিব, হুদা ও আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানাতে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দেয় বিএনপি। সেইসঙ্গে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোট পরিচালনাকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে দলটি।
গত ১৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জানা যায়, বিতর্কিত এবং একতরফা নির্বাচন না করতে বরং সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির দাবি জানিয়েছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এমনকি ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর সারা দেশে বেপরোয়া হামলা এবং আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এসব হামলা বন্ধে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল বিএনপি। তৎকালীন নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ তো নেয়নি, বরং বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করেছিল পুলিশ।
বিতর্কিত ওই তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী সাবেক তিন সিইসি ঢাকাতেই নিজ বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।