রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের
Published: 30th, June 2025 GMT
রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি হ্রাসে জোর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করায় সংস্থাটি বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। আবার এ–ও বলেছে, ভবিষ্যতে বিনিময় হার পরিপূর্ণভাবে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফের কার্যালয় থেকে গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মিশনপ্রধান পাপাজর্জিও এসব কথা বলেন। উপমিশনপ্রধান আইভো ক্রিজনার ও আইএমএফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জয়েন্দু দে এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আইএমএফ বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হচ্ছে বাংলাদেশ। এ সময়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা দরকার। আরও দরকার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ, শাসনব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ ও তথ্যের মানোন্নয়ন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ একটু বেড়েছে। ২০২৬ সালের বদলে এটা শেষ হবে ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে এবং বাকি সময়ে আরও ৮০ কোটি মার্কিন ডলার বাড়তি ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হলেও ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে মোটামুটি সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ।
আইএমএফ আরও বলেছে, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ও এনবিআর পৃথককরণ নিয়ে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক। মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বাংলাদেশ কীভাবে কার্যকরভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াবে, সে লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে। চলমান আন্দোলনের পরিস্থিতিতে তা কি অর্জন করা সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে পাপাজর্জিও বলেন, ‘কঠিন পরিস্থিতির কথা স্বীকার করছি। তবে লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও তা অর্জনযোগ্য। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব সংগ্রহের অনুপাতের দিক থেকে বিশ্বে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থার উত্তরণ দরকার।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথমবারের মতাে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দু’দিন বাকি থাকতেই ৩০ বিলয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২৮ জুন পর্যন্ত বৈধ চ্যানেলে এসেছে ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬৩০ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এর আগে করোনার প্রকোপ শুরুর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার এসেছিল। এতদিন সেটিই ছিল অর্থবছরের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এদিকে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২৮ মাস পর ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের ২৮ দিনে প্রবাসীরা ২৫৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২৩৭ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ জালিয়াতি বন্ধ ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হুন্ডি চাহিদা কমেছে। যে কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে।
রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। এর পর ওই মাসের ১৫ তারিখ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এ ছাড়া সব সময়ই এখনকার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল। গত মে মাসে ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার। তবে বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ প্রবাহের কারণে ডলার দীর্ঘদিন ধরে ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে।
২০২৩ সালে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালুর পর থেকে রিজার্ভের তিনটি হিসাব হচ্ছে। ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণসহ গ্রস রিজার্ভের হিসাব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ঋণ বাদ দিয়ে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল এবং আগামী এক বছরে সরকারি পরিশোধের হিসাব বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব করা হচ্ছে। গতকাল বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে এই পদ্ধতিতে হিসাব প্রকাশ শুরুর পর যা সর্বোচ্চ। ওই মাসে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া গতকাল নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় যেখানে জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এর মানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নিট রিজার্ভ বেশি রয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। অর্থ পাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর
আগের সরকারের ৩৭০ কোটি ডলারের বকেয়া পরিশোধ করেছে। এর পরও গত ১০ মাসে রিজার্ভ বেড়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।