সৌরজগতে বিভিন্ন গ্রহ বিকাশের সময় সেগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক ছিল। সে সময় বিশাল সূর্যের আকর্ষণে অনেক গ্রহই সূর্যের দিকে এগিয়েছে বা দূরে সরে গেছে। সৌরজগতে সূর্যের কাছাকাছি পৃথিবীর অবস্থান। আর তাই পৃথিবী বিকাশের সময় সূর্য আমাদের গ্রহকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তখন পৃথিবীকে রক্ষা করেছিল বৃহস্পতি গ্রহ। যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় জানিয়েছেন, আকারে বড় বৃহস্পতি গ্রহ সৌরজগতের প্রাথমিক সময়কার গ্রহ তৈরির বলয়ে ফাঁকা স্থান তৈরি করেছিল। ফলে পৃথিবীর উপাদান সূর্যের দিকে চলে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে পৃথিবীকে রক্ষার এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় সৌরজগৎ বিকাশের শুরুর সময় বৃহস্পতি গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাব জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, বৃহস্পতি যখন আকারে বড় হতে থাকে, তখন গ্রহটি অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের দিকে গ্যাস ও ধূলিকণার প্রবাহকে বাধা দেয়। বৃহস্পতির শক্তিশালী মহাকর্ষশক্তি শুধু অভ্যন্তরীণ গ্রহের কক্ষপথকে স্থিতিশীল করতেই সাহায্য করেনি, বরং পুরো সৌরজগতের কাঠামোকেই প্রভাবিত করেছিল।

রাইস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী আন্দ্রে ইজিডোরো জানিয়েছেন, বৃহস্পতি না থাকলে পৃথিবী সম্ভবত আজকের মতো হতো না। সৌরজগতের বিভাজন ও উল্কাপিণ্ডের চলাচলকে বৃহস্পতি নিয়ন্ত্রণ করে। বৃহস্পতি নিজে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সৌরবলয়ের মধ্যে একটি প্রশস্ত ফাঁকা স্থান তৈরি করে। এতে সৌরজগৎ অভ্যন্তরীণ ও বাইরের অঞ্চলে বিভক্ত হয়। এই বিভাজন দুটি অংশের উপাদানের মিশ্রণকে বাধা দেয়। ফলে উল্কাপিণ্ডের স্বতন্ত্র আইসোটোপিক স্বাক্ষর সংরক্ষিত থাকে অনেক বছর ধরে।

গবেষণার তথ্যমতে, বিশাল গ্রহ গঠনের সময় চারপাশের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। সেই হিসেবে বৃহস্পতি গ্রহের প্রভাব সৌরজগতে এখনো বিদ্যমান। চিলির অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার-সাবমিলিমিটার অ্যারে টেলিস্কোপের মাধ্যমে বৃহস্পতি গ্রহের আদি প্রভাবের বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স রজগত র গ রহ র কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শনি ও ইউরেনাস গ্রহের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে বলয়, কারণ কী

আমাদের সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনির কথা উঠলেই চোখের সামনে উজ্জ্বল বলয়বেষ্টিত এক গ্রহের ছবি ভেসে ওঠে। হাজার বছর ধরে কোটি কোটি বরফকণা আর ছোট পাথরের টুকরার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এই বলয়। এবার শনি ও ইউরেনাস গ্রহের মধ্যবর্তী বরফময় মহাজাগতিক বস্তু কাইরনকে ঘিরে নতুন বলয় তৈরির ঘটনা শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই আবিষ্কারের ফলে মহাজাগতিক বস্তুর চারপাশে বলয় তৈরি ও বিবর্তনের বিস্তারিত তথ্য জানার সুযোগ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, আনুষ্ঠানিকভাবে কাইরন একটি ক্ষুদ্র গ্রহাণু বা মাইনর প্ল্যানেট, যা সেন্টর নামে পরিচিত বিশেষ শ্রেণির বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। এটি শনি ও ইউরেনাসের কক্ষপথের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এর ব্যাস প্রায় ২০০ কিলোমিটার ও এটি প্রায় ৫০ বছরে একবার কক্ষপথে আবর্তন সম্পন্ন করে। কাইরনকে ঘিরে চারটি স্বতন্ত্র বলয় শনাক্ত করা হয়েছে এবং সেখানে ছড়িয়ে থাকা বস্তুকণা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

১৯৭৭ সালে আবিষ্কারের পর থেকে বিজ্ঞানীরা কাইরনকে নিয়মিত বিরতিতে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২০২৩ সালে ব্রাজিলের পিকো দস দিয়াস অবজারভেটরি থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ২০১১, ২০১৮ ও ২০২২ সালের তথ্য একত্র করে নতুন একটি স্পষ্ট চিত্র তৈরি করা হয়েছে। কাইরন কেন্দ্রের থেকে প্রায় ২৭৩ কিলোমিটার, ৩২৫ কিলোমিটার ও ৪৩৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত তিনটি ভেতরের বলয় দিয়ে পরিবেষ্টিত। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দূরবর্তী আরেকটি বলয় প্রথমবার শনাক্ত করা হয়েছে।

কাইরনের ভেতরের বলয় ঘূর্ণমান ধূলিকণার একটি ডিস্কের মধ্যে রয়েছে। সেখানে জটিল ও গতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি-পারানার বিজ্ঞানী ব্রাগা রিবাস বলেন, কাইরন সেন্টর ক্যারিক্লো ও নেপচুনের ওপরে থাকা বরফময় জগৎ হাউমেয়া ও কুয়াওআরের সঙ্গে বলয়যুক্ত চারটি পরিচিত ছোট সৌরজগতের বস্তুর নির্বাচিত গ্রুপে যোগ দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালে কাইরন আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী চার্লস কোয়াল। এটিই প্রথম আবিষ্কৃত সেন্টর। প্রথমে এটিকে একটি গ্রহাণু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। তবে এর কক্ষপথ ও ধূমকেতুর আচরণ এটিকে পরবর্তী সময় ধূমকেতু ও গ্রহাণুর হাইব্রিড হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি একটি ধূমকেতুর মতো একটি ক্ষীণ কোমা বা ধূলিকণার মেঘ তৈরি করতে পারে, যদিও এটি ধূমকেতুর মতো নিয়মিত লেজ তৈরি করে না।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শনি ও ইউরেনাস গ্রহের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে বলয়, কারণ কী
  • ভিন নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা অতিথির মুখোমুখি মহাকাশযান