হিমাগারের গেটে টাঙানো ব্যানারে লেখা আলুর কেজি ২২ টাকা, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায়
Published: 28th, October 2025 GMT
সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল ২২ টাকা। সে অনুযায়ী রাজশাহীর হিমাগারগুলোর সামনে ব্যানারও টানানো রয়েছে। অথচ সেখানেই এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৯ থেকে ১১ টাকা।
আবার সরকারের একজন উপদেষ্টা ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু কেনার ঘোষণা দিলেও সে অনুযায়ী কাজ হয়নি। যদিও রাজশাহীর ৩৭টি হিমাগারে এখনো ২ লাখ ৫ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন আলুর মজুত রয়েছে।
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত আগস্টে সরকার হিমাগার গেটে ন্যূনতম ২২ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। সরকারি প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
সরকার কেন আলু কিনছে না, তা জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান গত রোববার প্রথম আলোকে জানান, সরকার হিমাগার পর্যায়ে ২২ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হবে, এটা বলেছে। কিন্তু হিমাগারগুলো থেকে ওই দামে আলু কেনার কোনো ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সরকার আলু কেনার ব্যাপারে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। যে বৈঠকগুলো হয়েছে, সেখানেও এ রকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। শুধু সাংবাদিকদের সামনে একজন উপদেষ্টা মৌখিকভাবে বলেছিলেন। সেটা বাস্তবায়ন করার কোনো নির্দেশনা জারি হয়নি।
এক কেজি আলুর উৎপাদন খরচ, হিমাগার ও পরিবহন ভাড়া এবং বস্তা ক্রয় মিলিয়ে ৩৫ টাকা পড়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। প্রতি কেজিতে ২২-২৫ টাকা লোকসান। দাম কম হওয়ায় খরচ উঠছে না। সে জন্য অনেকেই হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না।—আহাদ আলী, সভাপতি, রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি।আলুর দরপতনের ব্যাপারে শাহানা আখতার জাহান বলেন, বাজারে আলুর দরপতনের একটাই কারণ, তা হলো চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়েছে। যেমন রাজশাহী জেলায় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলুর আবাদ হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে, যা পরের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর; অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেশি হয়েছে। আগের বছর দাম বেশি পাওয়ায় পরেরবার কৃষকেরা বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন হয়েছে। এর মানে, গত বছরে আলুর উৎপাদন ৯১ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন বেড়েছে। একই সময় দেশের অন্য জেলাগুলোতেও চাহিদার তুলনায় আলু উৎপাদন বেশি হয়েছে। এটিই আলুর দাম কমার মূল কারণ।
হিমাগারের গেটে টাঙানো ব্যানারে লেখা আলুর কেজি ২২ টাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ট র ক টন ২২ ট ক আল র দ সরক র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়: আইএমএফ
বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে বেড়েছে, তা প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি এ-ও বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে, সেগুলো দেশের বিনিময় হার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা তারা মূল্যায়ন করবে।
গতকাল শুক্রবার হংকং থেকে আইএমএফের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক টমাস হেলব্লিং সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক এ সংবাদ সম্মেলনে টমাস হেলব্লিং বলেন, সংস্থাটির একটি দল চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরে আসবে। এ সময় সংস্থাটির সঙ্গে চলমান ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা করবে তারা।
হেলব্লিং বলেন, আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল রিজার্ভ বৃদ্ধি। এ লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবেই চলমান বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভ বেড়েছে বাংলাদেশের। তিনি বলেন, বৈদেশিক লেনদেনের ঝুঁকি কমাতে রিজার্ভ বৃদ্ধি করা ঋণ কর্মসূচির একটি মূল লক্ষ্য। সুতরাং রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাফল্য প্রশংসনীয়।
আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে এ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ বৃদ্ধি ঘটেছে মুদ্রা প্রবাহ বাড়ার কারণে, ব্যয় তুলনামূলক কম থাকায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজার থেকে ডলার কেনার ফলে।
২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আমদানি বৃদ্ধির কারণে রিজার্ভ হ্রাসের চাপে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ক্রলিং পেগ (একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা) বিনিময় হার ব্যবস্থা বজায় রাখার পর, ২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হার ব্যবস্থায় নমনীয়তা চালু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত টাকার মান কমেছে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমান অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ, বিশেষ করে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।