আমরা যুদ্ধের মধ্যে নেই, কিন্তু আমরা শান্তিতেও নেই। অন্য কথায়, বিশ্বের সব দেশ এখন যুদ্ধে লিপ্ত নয়, কিন্তু সব দেশের মানুষ শান্তিতে আছে, এমন কথা বলা যাবে না। শান্তিতে না থাকার একটি প্রধান কারণ কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক নেই, স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন ২০২৫’–এর কেন্দ্রীয় মঞ্চে অনুষ্ঠিত শেষ দিনের প্রথম অধিবেশনে এমন কথা বলা হয়। সম্মেলনের এই অধিবেশনের শিরোনাম ছিল, ‘শান্তি ও স্বাস্থ্য: বৈশ্বিক স্থিতি ও মঙ্গলের জন্য সেতুবন্ধ’।

দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এই অধিবেশনে মূলত আলোচনা হয়েছিল রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেনের হাসপাতাল, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ওষুধ সরবরাহ, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মতো বিষয় নিয়ে। গাজায় ইসরায়েল কী করেছে, তা নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি। শুধু বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অধ্যাপক সাদি সালেহ বলেছিলেন, গাজার মানুষের জন্য এখন দরকার ‘ট্রমা কেয়ার’ ও ‘রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি’। গাজায় দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুনর্গঠন করতে হবে। স্বাস্থ্যের তথ্য-উপাত্ত, নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা অথবা অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির মতো বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বটে। তবে এখন তা জরুরি নয়। সাদি সালেহ জোর দিয়ে বলেছিলেন, গাজার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা জরুরি, আর জরুরি তাঁদের হাত, পা, মুখমণ্ডল ঠিক করা।

স্বাস্থ্যের আলোচনায় এ ধরনের অধিবেশনগুলোর শিরোনাম হয় সাধারণত ‘দ্বন্দ্ব ও স্বাস্থ্য’ (কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হেলথ)। দ্বন্দ্বের পরিবর্তে শান্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে গাজার মানুষের বিষয়ে গুরুত্ব না থাকায় অধিবেশন শেষে অনেককেই অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষ এতে রাজনীতির গন্ধ পেয়েছেন।

স্বাস্থ্য রাজনীতির বিষয়। ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর, তিন দিন ধরে চলা সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে এই রাজনীতির কথা বেশ কয়েকবার উচ্চারিত হয়েছে। সম্মেলনে একটি স্মরণিকা দেওয়া হয়। এর শিরোনাম ছিল, ‘হেলথ: এ পলিটিক্যাল চয়েজ’ (স্বাস্থ্য: একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত)। তাতে বলা হয়, স্বাস্থ্য গবেষণা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে সরকার কীভাবে অর্থায়ন করবে, অপ তথ্য বা ভুল তথ্য থেকে রক্ষা করে জনগণকে সরকার কীভাবে সঠিক তথ্য দেবে—এসবই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। মহামারির জন্য প্রস্তুতি অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, বৈজ্ঞানিক সত্য ও গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। স্মরণিকায় একটি প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোষ্ঠীর বিজ্ঞানবিরোধী প্রচারণার বিশ্বায়ন নিয়ে তীব্র সমালোচনা রয়েছে। তবে পুরো সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু রাজনীতি বা স্বাস্থ্য রাজনীতি ছিল না।

ফাটল ধরা বিশ্বে স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেমব্লি’ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন আয়োজন করে। এই সম্মেলন মূলত সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জন্য আয়োজন করা হয়। অনেকে মনে করেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আয়োজনের বাইরে বার্লিনের এই স্বাস্থ্য সম্মেলন সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলনে প্রায় চার হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রায় ১০ হাজার নিবন্ধিত মানুষ অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। সম্মেলন আয়োজনে জার্মান সরকার, গেটস ফাউন্ডেশন, ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ, গ্লোবাল ফান্ড, গ্যাভি, রকফেলার ফাউন্ডেশন, গুগল ফর হেলথ, ইউটিউব হেলথসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করে। ওষুধ ও চিকিৎসাযন্ত্র কোম্পানিগুলোর মধ্যে আয়োজনে যুক্ত ছিল সিমেন্স, এবোট, বায়ার, রোস, জিএসকে, লিলি, নভো নরডিস্ক, ফাইজার, স্যানোফির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান।

সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ছয়টি—বৈশ্বিক স্বাস্থ্য স্থাপত্যের ক্রান্তিকাল, অসংক্রামক রোগ, শান্তি ও স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এই ছয় বিষয়ের ওপর ছয়টি অধিবেশন বসে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় মঞ্চে। এই ছয় বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আরও ২৫টি প্যানেল আলোচনা ও ২০টি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, মানুষ এখন ভুল তথ্য, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ুর সংকট, প্রসারমান বৈষম্য, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা এক জটিল ও ফাটল ধরা বিশ্বের মুখোমুখি। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার দায়িত্ব শুধু সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের নয়। নাগরিক সংগঠন ও প্রাইভেট সেক্টরের এ ক্ষেত্রে সমান দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রতিটি সমাজ, প্রতিটি স্থানীয় সংস্থা, প্রতিটি দেশের সরকার এবং প্রতিটি বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানকে তাদের অবস্থান অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত থাকা জরুরি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে নাটকীয় পরিবর্তন আসার পর এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়েছে। বহুপক্ষীয় সহযোগিতা দুর্বল হচ্ছে, চাপের মধ্যে আছে। এরই মধ্যে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতের ক্ষমতাকাঠামোতে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের বিশ্বাসে ঘুণ ধরেছে। এসবই বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের অগ্রগতিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। স্বাস্থ্য সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট এক্সেল আর প্রিসের মতে, এ পরিস্থিতিতে ঐকমত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঐকমত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার অর্থ হচ্ছে গবেষণার স্বাধীনতা, বিজ্ঞান যোগাযোগের উন্নতি ও সম্মিলিত দায়িত্বশীলতার পুনর্জাগরণ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেন শত্রু না হয়

সম্মেলনের শুরুর দিন একই সময়ে সাতটি সমান্তরাল অধিবেশন বসেছিল। একটি অধিবেশনের বিষয় ছিল টেকসই উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বশীল ব্যবহার। এই অধিবেশনসহ তিন দিনের সম্মেলনে মোট পাঁচটি অধিবেশন বসেছিল স্বাস্থ্য খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে। প্রতিটি অধিবেশনেই আগ্রহী মানুষের ভিড় দেখা গেছে, হলরুম সব সময় পূর্ণ থেকেছে।

স্বাস্থ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে, একইভাবে নানা ঝুঁকিও আছে। ঝুঁকি বেশ কয়েক ধরনের। প্রথমত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান বৈষম্যকে আরও বাড়াতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রয়োগ সঠিক না হলে রোগ নির্ণয়ের মতো কাজে ভুল হতে পারে। তৃতীয়ত, একবার ভুল হলে ব্যবহারকারী (মূলত চিকিৎসক) এবং সুবিধাভোগী (মূলত রোগী) দুই পক্ষেরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর আস্থা বা বিশ্বাস নষ্ট হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আস্থা নষ্ট হলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন।

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার থেমে নেই। জার্মান সরকার ইতিমধ্যে ৭০টি দেশের ৪০০ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ছোট বা বড় আকারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করেছে। কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক ব্যবহারও শুরু হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শহর ও গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার পার্থক্য কিছু ক্ষেত্রে কমানো সম্ভব হয়েছে। কিছু ক্যানসার ও আলঝেইমার রোগ শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

একটি বড় প্রশ্ন উঠছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোনো ভুল করলে তার দায়িত্ব কার? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত বা চিকিৎসায় ভুল হলে দায়িত্ব কি সরকার নেবে, নাকি কোনো প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নেবে, নাকি দায়িত্ব সেই চিকিৎসকের যিনি সরাসরি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। তবে এ ধরনের বহু প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন বিজ্ঞানী, গবেষক, চিকিৎসক ও নীতিনির্ধারকেরা।

শুরুর অধিবেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক এলেন ল্যাবরিক বলেন, প্রতিটি দেশে একটি স্পষ্ট রেগুলেটরি এনভায়রনমেন্ট থাকতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই ব্যবস্থা বৈশ্বিক পর্যায়, আঞ্চলিক পর্যায় ও জাতীয় পর্যায়ে থাকতে হবে। বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য খাতে মোটাদাগে দুটি ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হচ্ছে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায়। প্রতিটি অধিবেশনের আলোচকেরা বলার চেষ্টা করেছেন, ব্যবস্থাপক বা চিকিৎসকের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হবে সহায়ক টুল বা হাতিয়ার।

এমনই একটি অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রে একজন চিকিৎসক দাবি করেন, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার সহায়তা নিয়ে মানুষের কণ্ঠস্বর শুনে বলে দেওয়া সম্ভব ওই মানুষের ফুসফুসে কোনো সমস্যা আছে কি না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এই কাজে দক্ষ করে তুলতে বহু ডেটা ইনপুট দেওয়ার প্রয়োজন হয়। যত বেশি ডেটা দেওয়া যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তত নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলোয় মানুষের বা রোগীর ডেটার পর্যাপ্ততা আছে। এশিয়ার ও আফ্রিকার অনেক দেশে তা নেই।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার চেয়ে চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার জটিল ও কঠিন। নতুন ওষুধের মতো কোনো রোগ চিকিৎসায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হওয়া উচিত। কেউ কেউ প্রস্তাব করেন, একটি বৈশ্বিক নীতিমালা থাকা দরকার, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা দরকার। ওষুধ কোম্পানি যেমন বাজারে থাকা খারাপ ওষুধ চিহ্নিত করে, সেগুলো আইনসম্মতভাবে প্রত্যাহার করে নেয়, একই ধরনের ব্যবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও থাকা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, এসব ব্যাপারে প্রতিটি দেশের নীতিনির্ধারকদের কতটা জ্ঞান আছে, তা পরিমাপ করা এবং প্রয়োজনমতো তাদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ভুল ব্যবহারে রোগীর ঝুঁকি বাড়ছে ইতিমধ্যে এমন নজির সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞানী ও নায়িকা

বরাবরের মতো এবারের বার্লিন স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বখ্যাত জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট–এর সম্পাদক রিচার্ড হর্টন একটি অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় মূল মঞ্চ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ল্যানসেটের পক্ষ থেকে ওই অধিবেশনে বৈশ্বিক রোগ পরিস্থিতি প্রতিবেদন (২০২৩) প্রকাশ করা হয়।

রিচার্ড হর্টন বলেন, এমডিজি, এসডিজির জন্য শত শত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্বাস্থ্যকে নানাভাবে বিভক্ত, খণ্ডিত, আংশিক করে ফেলা হয়েছে। এটা চলতে পারে না। চলতে দেওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্য ও নারী—দুটি আলাদা বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। নারীকে স্বাস্থ্য থেকে পৃথক করা হচ্ছে। অথচ নারীর প্রতি সুবিচার করতে হলে নারী আর স্বাস্থ্যকে আলাদা করে দেখা চলবে না। এসব কারণে এখন স্বাস্থ্যের আলোচনায় সম্পূর্ণ নতুন ফ্রেমওয়ার্ক দরকার। যে নতুন ফ্রেমওয়ার্কের কথা ভাবা হচ্ছে ওয়ান হেলথ দৃষ্টিভঙ্গি তার অনেকটাই ধারণ করে। কারণ, ওয়ান হেলথ অনেকটাই অন্তর্ভুক্তিমূলক।

সম্মেলনকে আকর্ষণীয় করার নানা আয়োজন থাকে। পৃথিবীর সব অঞ্চলের স্বাস্থ্যের বিজ্ঞানী, গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা এতে অংশ নেন। তাঁদের বড় অংশই পণ্ডিত ও সুবক্তা। এ ধরনের আয়োজনে এবার ইউএনএফপিএর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের চলচ্চিত্র নায়িকা কৃতি শ্যানন।

কৃতি শ্যানন কথা বলেছিলেন নারী স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি অধিবেশনের ঠিক মাঝখানে। তাঁর আগে ও পরে পাঁচজন করে মোট ১০ জন বিশেষজ্ঞ কথা বলেছিলেন। কিন্তু দর্শক-শ্রোতার মন কেড়েছিলেন এই বলিউড তারকা। নারী স্বাস্থ্যের আলোচনা সাধারণত মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃপুষ্টি, মাতৃমৃত্যু, বাল্যবিবাহ, কিশোরী স্বাস্থ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এসব বিষয়কে অস্বীকার না করে নারী স্বাস্থ্যের নতুন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।

কৃতি শ্যানন বলেন, বৈশ্বিকভাবে নারী স্বাস্থ্যের সিদ্ধান্ত হয় আলোচনার টেবিলে নারীকে না রেখেই। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা, নীতি আলোচনা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নারী প্রতিনিধিত্ব কম। ওষুধ ও চিকিৎসা প্রযুক্তি তৈরিকে পুরুষের শরীরকেই বেছে নেওয়া হয়। যে ওষুধ পরীক্ষা করা হয়েছে পুরুষের শরীরে সেই ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখা হয় নারীর জন্য। এগুলো ছোটখাটো বিষয় নয়, এগুলো পদ্ধতিগত ব্যর্থতা। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি দুর্ঘটনায় তীব্র জখম ও মৃত্যু পুরুষের চেয়ে নারীর যথাক্রমে ৪৭ শতাংশ ও ১৭ শতাংশ বেশি। এর একটি প্রধান কারণ দুর্ঘটনা পরীক্ষায় ব্যবহৃত ডামিগুলো সব সময় পুরুষের হয়ে থাকে। এমনকি গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে ৬২ শতাংশ নারীর সিট বেল্ট মাপমতো থাকে না।

আগামী বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি বার্লিনে আবার হবে এই সম্মেলন। এ বছর অনেক রাজনীতিবিদ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন এবারের সম্মেলনে। ধারণা করা যায়, এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন পরিস্থিতি জানা যাবে আগামী বছরের সম্মেলনে।

শিশির মোড়ল প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র জন ত ক র জন ত র পর স থ ত বল ছ ল ন ব যবস থ চ ক ৎসক র জন য র অন ক পর য য় দরক র সরক র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

রেমিট্যান্স: ২৬ দিনে ২৬ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম

২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবর মাসের ২৬ দিনে দেশে বৈধ পথে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যা ২৬ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে এক হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানো হবে: উপদেষ্টা

সন্দ্বীপে ৭ প্রবাসীর দাফন সম্পন্ন

তথ্যমতে, অক্টোবরের ২৬ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা আগের বছর একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক এক শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালে অক্টোবরের ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচারে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ কারণে হুন্ডি সহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, আগস্ট মাসে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার, জুলাই মাসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার, ডিসেম্বর মাসে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং জুন মাসে ২৮২ কোটি ১২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

ঢাকা/নাজমুল/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ