ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি হয়ে আছে এক কলঙ্কময় দিন। সেদিনের দাঙ্গা শুধু রক্ত আর ধ্বংস বয়ে আনেনি, বয়ে এনেছিল এক টুকরো শৈশব স্মৃতিও। যা ছিল নেইমারের স্বাক্ষর করা একটি ফুটবল।

এই বলটি ছিল কেবল একখণ্ড চামড়ার গোল বস্তু নয়; তা ছিল সান্তোস ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের প্রতীক, যেটা নেইমার নিজ হাতে স্বাক্ষর করে তা উপহার দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য মার্কো মাইয়াকে, ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল। বলটি পরে জায়গা করে নেয় ব্রাজিলের জাতীয় কংগ্রেস ভবনের জাদুঘরে স্মারক হিসেবে।

কিন্তু ইতিহাস কখনও শুধু স্মৃতি নয়, তা মাঝে মাঝে দুঃখও হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালের সেই দাঙ্গার সময়, যেখানে হাজারো বলসোনারো সমর্থক ক্ষোভ উগরে দেন রাষ্ট্রীয় ভবনগুলোতে। সেখানে এক ফুটবল-ভক্তের আবেগও যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়। ৩৪ বছর বয়সী নেলসন রিবেইরো ফন্সেকা জুনিয়র এক ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার, বলটি খুঁজে পান কংগ্রেস ভবনের ধ্বংসাবশেষে। তার দাবি অবশ্য এমনটাই।

আরো পড়ুন:

শেষ নৃত্যের অপেক্ষায় থাকা নেইমার ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে যা জানালেন

রূপান্তরের আভাস দিয়ে আনচেলোত্তির ব্রাজিল দল ঘোষণা

তার হাতে সেই ঐতিহাসিক বল পৌঁছানোর ২০ দিন পর সোরোকাবার এক বলসোনারো সমর্থকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সেটি। তদন্তে উঠে আসে, শুধু বলই নয় রিবেইরোর বিরুদ্ধে ছিল আরও অনেক রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ।

শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টের রায়ে তার কপালে জোটে ১৫ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড। সঙ্গে আরও দেড় বছর ডিটেনশন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাকে জরিমানাও গুনতে হবে প্রায় ৬৬ হাজার ব্রাজিলিয়ান রিয়াল। যা প্রতিদিন তার আয়ের এক তৃতীয়াংশ হারে গণনা হবে ১৩০ দিন ধরে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, নেইমারের একটি সই করা বল যা হয়তো একসময় নেলসনের মতো একজন ফুটবলপ্রেমীর চোখে ছিল ‘ভক্তির স্মারক’, সেটিই এখন তার ১৭ বছরের একাকী শাস্তির কারণ। স্মৃতির বল এখন পরিণত হয়েছে নিয়তির শৃঙ্খলে।

তবে শুধু নেলসন একা নন। সেই সহিংস ঘটনার জেরে দেশজুড়ে অভিযুক্ত হন আরও ৫০০ জনের বেশি। জাতীয় সম্পদের ক্ষতির দায়ে তাদের কাছ থেকেও প্রায় ৩০ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান রিয়াল ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক আলেক্সান্দ্রে ডি মোরায়েস।

এদিকে, নেলসনের শাস্তির মেয়াদ নিয়ে বিভক্ত মত রয়েছে দেশটির উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রীদের মাঝে। কেউ ১৫ বছরের সাজাকেই যথাযথ বলে মেনে নিলেও, কেউ কেউ তা খাটো করার পক্ষে। লুইজ ফাক্স নামের এক মন্ত্রী তো বলেই বসেছেন, সম্পদ ক্ষতিসাধনের অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক!

একটি ফুটবল, একখণ্ড সই, একখানা দাঙ্গা আর এক ভক্তের ভেঙে যাওয়া ভবিষ্যৎ। এই সবকিছু মিলে তৈরি হয়েছে এমন এক অধ্যায়, যা ফুটবলের বইয়ে নয়, বরং ন্যায়বিচারের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল ন লসন

এছাড়াও পড়ুন:

বাবরের শেষ সেঞ্চুরির পর ৪ অধিনায়ক বদল, ৩ কোচ বরখাস্ত

গত এক দশকে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটারদের তালিকায় শীর্ষ নাম বাবর আজম। এক সময় বিরাট কোহলিও তাকে সব ফরম্যাটে বিশ্বের সেরা ব্যাটার হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালের আগস্টে নেপালের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর যেন সবকিছু বদলে গেল। এরপর থেকে দুই বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো সেঞ্চুরি নেই তার নামে। ফর্মে ভাটা পড়েছে, গড় কমেছে সব ফরম্যাটে। এমনকি এবার এশিয়া কাপ ২০২৫-এর দল ঘোষণায়ও জায়গা হয়নি বাবরের।

দুই বছরে পাকিস্তান ক্রিকেটে কত কিছুই না ঘটে গেছে। বাবরের শেষ শতক (২০২৩ এশিয়া কাপে নেপালের বিপক্ষে) থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্রিকেটে যা যা ঘটেছে তা যেন এক অশান্ত অধ্যায়।

৪ অধিনায়ক পরিবর্তন: ২০২৩ সালের আগস্টে যখন বাবর সেঞ্চুরি করেছিলেন, তখন তিনিই ছিলেন সব ফরম্যাটের অধিনায়ক। এরপর ২০২৩ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিলেও ফল হয়নি ভালো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নেতৃত্ব গেল শাহিন আফ্রিদির হাতে। নিউ জিল্যান্ড সিরিজ শেষে তাকেও সরিয়ে আবার বাবরকে দেওয়া হলো দায়িত্ব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতা অর্থাৎ গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিলো পাকিস্তান। বাবরকেও হারাতে হলো অধিনায়কত্ব। এবার দায়িত্ব গেল সালমান আলি আগার হাতে। এরপর ওয়ানডে ফরম্যাটেও বাবর হারালেন নেতৃত্ব, জায়গা পেলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।

আরো পড়ুন:

বাবর আজমের অন্যরকম সেঞ্চুরি

কোহলিকে পেছনে ফেলে দুইয়ে বাবর

৩ কোচের বিদায়: কেবল অধিনায়ক নয়, কোচের পদও হয়েছে অস্থিরতার শিকার। ২০২৪ সালে বড় আশা নিয়ে গ্যারি কারস্টেন (রেড-বল) ও জেসন গিলেস্পিকে (হোয়াইট-বল) আনা হয়েছিল। শুরুতে মনে হচ্ছিল সঠিক পথে হাঁটছে পাকিস্তান। কিন্তু শিগগিরই ভাঙতে থাকে সম্পর্ক। কারস্টেন পদত্যাগ করেন নির্বাচনী ঝামেলার কারণে। আর কিছুদিন পরেই গিলেস্পিও অনুসরণ করেন একই পথ।
এরপর অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে আসেন আকিব জাভেদ। কিন্তু ফল আরও বাজে হলে তাকেও বিদায় জানায় পিসিবি। শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মাইক হেসনের হাতে।

টানা ৩ টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়: বাবরের শেষ সেঞ্চুরির পর পাকিস্তানের আইসিসি টুর্নামেন্ট যাত্রা বলতে গেলে একটাই গল্প— ব্যর্থতা। ২০২৩ বিশ্বকাপ সম্ভাব্য ফেভারিট হিসেবে শুরু করলেও গ্রুপ পর্বেই থেমে যায় অভিযান। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই কাহিনি, গ্রুপেই বিদায়। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও একই পরিণতি, গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিতে হয়।

এক সময় যাকে ঘিরে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছিল পাকিস্তান ক্রিকেট, সেই বাবর আজমের সময়টা যেন থমকে গেছে। সেঞ্চুরিহীন দুই বছরে পাল্টে গেছে অধিনায়ক, কোচ, এমনকি দলের ভাগ্যও। এখন প্রশ্ন একটাই— এই দুঃসময় থেকে বাবর আজম কবে ঘুরে দাঁড়াবেন?

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবরের শেষ সেঞ্চুরির পর ৪ অধিনায়ক বদল, ৩ কোচ বরখাস্ত
  • ভাঙা সড়ক মেরামতে ৫০০ কোটি টাকা চান চসিক মেয়র
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতি এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে
  • বাংলাদেশের মেয়েদের সাফের বৃত্ত পূরণের পালা
  • যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুতিনকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে না
  • সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হামলা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা