আবেগে নেইমারের স্বাক্ষর করা বল নিয়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ড
Published: 3rd, July 2025 GMT
ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি হয়ে আছে এক কলঙ্কময় দিন। সেদিনের দাঙ্গা শুধু রক্ত আর ধ্বংস বয়ে আনেনি, বয়ে এনেছিল এক টুকরো শৈশব স্মৃতিও। যা ছিল নেইমারের স্বাক্ষর করা একটি ফুটবল।
এই বলটি ছিল কেবল একখণ্ড চামড়ার গোল বস্তু নয়; তা ছিল সান্তোস ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের প্রতীক, যেটা নেইমার নিজ হাতে স্বাক্ষর করে তা উপহার দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য মার্কো মাইয়াকে, ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল। বলটি পরে জায়গা করে নেয় ব্রাজিলের জাতীয় কংগ্রেস ভবনের জাদুঘরে স্মারক হিসেবে।
কিন্তু ইতিহাস কখনও শুধু স্মৃতি নয়, তা মাঝে মাঝে দুঃখও হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালের সেই দাঙ্গার সময়, যেখানে হাজারো বলসোনারো সমর্থক ক্ষোভ উগরে দেন রাষ্ট্রীয় ভবনগুলোতে। সেখানে এক ফুটবল-ভক্তের আবেগও যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়। ৩৪ বছর বয়সী নেলসন রিবেইরো ফন্সেকা জুনিয়র এক ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার, বলটি খুঁজে পান কংগ্রেস ভবনের ধ্বংসাবশেষে। তার দাবি অবশ্য এমনটাই।
আরো পড়ুন:
শেষ নৃত্যের অপেক্ষায় থাকা নেইমার ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে যা জানালেন
রূপান্তরের আভাস দিয়ে আনচেলোত্তির ব্রাজিল দল ঘোষণা
তার হাতে সেই ঐতিহাসিক বল পৌঁছানোর ২০ দিন পর সোরোকাবার এক বলসোনারো সমর্থকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সেটি। তদন্তে উঠে আসে, শুধু বলই নয় রিবেইরোর বিরুদ্ধে ছিল আরও অনেক রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ।
শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টের রায়ে তার কপালে জোটে ১৫ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড। সঙ্গে আরও দেড় বছর ডিটেনশন। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাকে জরিমানাও গুনতে হবে প্রায় ৬৬ হাজার ব্রাজিলিয়ান রিয়াল। যা প্রতিদিন তার আয়ের এক তৃতীয়াংশ হারে গণনা হবে ১৩০ দিন ধরে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, নেইমারের একটি সই করা বল যা হয়তো একসময় নেলসনের মতো একজন ফুটবলপ্রেমীর চোখে ছিল ‘ভক্তির স্মারক’, সেটিই এখন তার ১৭ বছরের একাকী শাস্তির কারণ। স্মৃতির বল এখন পরিণত হয়েছে নিয়তির শৃঙ্খলে।
তবে শুধু নেলসন একা নন। সেই সহিংস ঘটনার জেরে দেশজুড়ে অভিযুক্ত হন আরও ৫০০ জনের বেশি। জাতীয় সম্পদের ক্ষতির দায়ে তাদের কাছ থেকেও প্রায় ৩০ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান রিয়াল ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক আলেক্সান্দ্রে ডি মোরায়েস।
এদিকে, নেলসনের শাস্তির মেয়াদ নিয়ে বিভক্ত মত রয়েছে দেশটির উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রীদের মাঝে। কেউ ১৫ বছরের সাজাকেই যথাযথ বলে মেনে নিলেও, কেউ কেউ তা খাটো করার পক্ষে। লুইজ ফাক্স নামের এক মন্ত্রী তো বলেই বসেছেন, সম্পদ ক্ষতিসাধনের অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক!
একটি ফুটবল, একখণ্ড সই, একখানা দাঙ্গা আর এক ভক্তের ভেঙে যাওয়া ভবিষ্যৎ। এই সবকিছু মিলে তৈরি হয়েছে এমন এক অধ্যায়, যা ফুটবলের বইয়ে নয়, বরং ন্যায়বিচারের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল ন লসন
এছাড়াও পড়ুন:
ইইউর বাইরের দেশে নতুন ৫ লাখ কর্মভিসা দেবে ইতালি
শ্রমিকসংকট মোকাবিলায় বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির কৌশলের অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বহির্ভূত দেশগুলোর নাগরিকদের প্রায় ৫ লাখ নতুন কর্মভিসা দেবে ইতালি।
২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এ ভিসা দেওয়া হবে বলে গতকাল সোমবার ইতালির মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী বছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০টি ভিসা দেওয়া হবে। পরে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জনকে বৈধপথে কর্মভিসা নিয়ে ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
ডানপন্থী জোটের প্রধান হিসেবে প্রায় তিন বছর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার এ ধরনের উদ্যোগ নিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তাঁর সরকার ইতিমধ্যে অভিবাসীদের জন্য সাড়ে ৪ লাখের বেশি পারমিট ইস্যু করার কথা জানিয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব পারমিট দেওয়া হচ্ছে।
ইতালির জর্জিয়া মেলোনি সরকার ইতিমধ্যে অভিবাসীদের জন্য সাড়ে ৪ লাখের বেশি পারমিট ইস্যু করা শুরু করেছে। ২০২৩ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসব পারমিট দেওয়া হচ্ছে।নতুন শ্রমিক নেওয়ার পাশাপাশি, মেলোনি অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া দ্রুত করা ও ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারকারী দাতব্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
গতকালের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শ্রম ও শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এবং গত কয়েক বছরে জমা পড়া প্রকৃত কর্মভিসার আবেদন যাচাইয়ের ভিত্তিতে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে; যাতে ব্যবসার প্রয়োজন মেটানো যায় ও কার্যক্রমটি বাস্তবসম্মত হয়।’
বয়স্ক জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও নিম্ন জন্মহার ইউরো অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালিতে বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। ইতালিতে ২০২৪ সালে নতুন শিশু জন্মের চেয়ে ২ লাখ ৮১ হাজার বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট জনসংখ্যা ৩৭ হাজার কমে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজারে নেমে গেছে। এক দশক ধরেই দেশটিতে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
ইতালির কৃষি-পেশাজীবীদের সংগঠন কোলদিরেত্তি সরকারের এ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি মাঠে শ্রমিকের সহজলভ্যতা ও দেশের খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনবে।মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি, ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীগত রোববার স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকাকে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, ‘বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনবে।’
চলতি জনসংখ্যার হ্রাস ঠেকাতে এবং বর্তমান জনসংখ্যার স্তর ধরে রাখতে ইতালিকে ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত ১ কোটি অভিবাসী গ্রহণ করতে হবে—ওসেরভাতোরিও কন্তি পাব্বলিচি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনইতালির ভিসা ভোগান্তিতে ৬০ হাজার কর্মী ১৫ অক্টোবর ২০২৪আরও পড়ুনসম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ইতালিতে কর্মী কম যাচ্ছেন, কারণ কী ১০ মে ২০২৫