ভুয়া পরিসংখ্যানের সেইসব বাজেট আর এবারের বাজেট
Published: 3rd, July 2025 GMT
২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। ২২ জুন বাজেটটি পাস হয়। এবারের বাজেটটি নেহাতই গতানুগতিক ধারা অনুসরণ করেছে। এরপরেও আমি অর্থ উপদেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি হাসিনা সরকার ভুয়া পরিসংখ্যান উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে যে ফোলানো-ফাঁপানো চিত্র উপস্থাপন করার ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল, সেটিকে সংশোধনের সাহসী প্রয়াসের জন্য।
২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত উপস্থাপিত প্রতিটি বাজেটে প্রায় প্রতিটি সামষ্টিক পরিসংখ্যানকে ‘অবিশ্বাস্য ডক্টরিং’–এর চরম দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন হাসিনার ২০০৯-১৮ মেয়াদের পরিকল্পনামন্ত্রী ও ২০১৯-২৪ মেয়াদের অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল। ওই সব ভুয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে পরবর্তী অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলীর উপস্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটও পরিত্রাণ পায়নি।
সে জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদকে অনেকগুলো তিক্ত বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন—১.
২.
দেশের জনগণের মাথাপিছু জিএনআই নির্ধারিত হয়েছে ২ হাজার ৮২০ ডলার, অথচ হাসিনা সরকারের উপস্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তা বেশি দেখানো হয়েছিল। হাসিনা সরকার মাথাপিছু জিএনআই বাড়িয়ে দেখানোর জন্য মোট জিডিপির পরিমাণকে মারাত্মকভাবে ফাঁপিয়ে দেখাত এবং জনসংখ্যাকে কমিয়ে দেখাত। ফলে অর্থনীতির প্রকৃত স্বাস্থ্য সম্পর্কে দেশে-বিদেশে মারাত্মক ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। বলা হচ্ছিল যে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়েছে। এই কল্পকাহিনির মাধ্যমে স্বৈরশাসক হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সফলতার মিথ্যা বয়ান সৃষ্টি করে গেছেন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিন তিনটি একতরফা ভোটের প্রহসনকে জনগণের দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এহেন ভুয়া দাবি অপব্যবহৃত হয়েছে হাসিনার স্বৈরশাসনের পুরো মেয়াদে।
৩.
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলিত হয়েছে ৩.৯৭ শতাংশ, অথচ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় বলা হয়েছিল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ শতাংশ। বলা বাহুল্য, ওই উচ্চাশা বাস্তবসম্মত ছিল না। অবশ্য ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের টালমাটাল দিনগুলোতে এবং পরবর্তী ৯ মাসের বিপর্যস্ত অর্থনীতির পালা পরিবর্তনের ধকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ৩.৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি একেবারে ফেল্না বলা যাবে না। এই প্রবৃদ্ধির হারকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশে উন্নীত করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। এই ঘোষিত প্রবৃদ্ধির হারকে অনেক বিশ্লেষক অতি উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিলেও আমি এর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করতে চাই না, আমি এই প্রস্তাবিত হার অর্জনে সরকারের সাফল্য কামনা করছি।
৪.
বিগত স্বৈরশাসনের শেষের দুবছর সরকারের ভাষ্য মোতাবেক দেশের মূল্যস্ফীতির হার মারাত্মকভাবে বেড়ে ১১ শতাংশ অতিক্রম করেছিল। প্রকৃতপক্ষে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল বলে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ মতপ্রকাশ করেছিলেন। সেখান থেকে ২০২৫ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৯.১৭ শতাংশে নামিয়ে ফেলেছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হারকে ৬.৫ শতাংশে টেনে নামানোর লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। অনেক বিশ্লেষক এই লক্ষ্যকেও উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়েছেন। আমি এটাকে অর্জনযোগ্য বিবেচনা করছি।
৫.
হাসিনা সরকার ঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। প্রকৃতপক্ষে ওই প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ অর্জিত হবে না বলে বাজেট ঘোষণার পর থেকেই ধারণা করা হয়েছিল। এবারের বাজেট বক্তৃতায় ঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত ও সম্পূরক বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ প্রাক্কলিত হয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বাজেট বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। অনেক বিশ্লেষক বলতে চান, এটা গত বছরের ঘোষিত বাজেট বরাদ্দ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এমনকি বলা হচ্ছে, পরবর্তী বছরের বাজেটকে আগের বছরের চেয়ে কমিয়ে ফেলা সংকোচনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। আমি তা মনে করি না; বরং আমি মনে করি, পরিসংখ্যানের ‘ইচ্ছাকৃত ডক্টরিং’ পরিহার করার সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে এই পরিসংখ্যানগত সংশোধন প্রকাশের মাধ্যমে।
৬.
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার প্রাক্কলিত হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মনে হতে পারে যে এখানেও সংকোচনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যাপকভাবে অপব্যবহৃত হতো ক্ষমতাসীন দল বা জোটের নেতা-কর্মীদের লুটপাটের খাই মেটানোর জন্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় প্রাতিষ্ঠানিক লুটপাট খানিকটা কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৭.
বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আয়ের টার্গেটকে বরং আমার কাছে উচ্চাভিলাষী মনে হচ্ছে, বর্তমান বাস্তবতায় ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় আহরণ সত্যিকারভাবে অর্জনযোগ্য মনে হয়নি আমার কাছে। বিশেষত, এনবিআরকে যে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার টার্গেট দেওয়া হয়েছে, সে টার্গেট পূরণ দুঃসাধ্য হবে। রাজস্ব আয়ের টার্গেট পূরণ না হলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ বাড়ানো ছাড়া সরকারের গত্যন্তর থাকবে না। এটাই বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে বোধকরি।
৮.
এবারের বাজেটে শিক্ষা খাত ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দকে বাজেটের শতাংশ হিসেবে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। আমি এটাকে সমর্থনযোগ্য মনে করি না। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের বাজেট বরাদ্দে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক দিকের পরিবর্তন যে প্রতিফলিত হলো না, সেটিকে আমি হতাশাজনক বিবেচনা করছি।
৯.
এবারের বাজেটের সবচেয়ে বড় খাত ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ। হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকায়। বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ বিলিয়ন ডলারে। হাসিনার সবচেয়ে বড় অপরাধ উন্নয়নের মিথ্যা বয়ান সৃষ্টির পাশাপাশি লুটপাটতন্ত্র কায়েম করে জাতিকে বিশাল ঋণের এই দুষ্টচক্রে বন্দী করা। এর ফলে আগামী বেশ কয়েক বছর সরকারকে বিপর্যস্ত করতেই থাকবে এই বিপুল ঋণ পরিশোধের দায়ভার।
১০.
এবারের বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আয়কর অব্যাহতির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় ২০২৬-২৭ অর্থবছর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এটা অর্থমন্ত্রীর ২০২৫-২৬ বাজেট বক্তৃতার এখতিয়ারে পড়ে না।
● মইনুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জ ট বক ত ত য় প রব দ ধ র হ র ব জ ট বর দ দ পর স খ য ন প রস ত ব সরক র র উপস থ প র হ রক মন ত র র জন য প রক ত হয় ছ ল কর ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
শীতের আগাম সবজি হিসেবে বাজারে এসেছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। মৌসুমের শুরুতে দাম স্বাভাবিকভাবে কিছুটা বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দাম ইতিমধ্যে কিছুটা কমেছে। খুচরা পর্যায়ে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি পিছ ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৪০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সরবরাহ বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এসব সবজির দাম আরও কমবে। ভরা মৌসুমে খুচরা পর্যায়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমে ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে নেমে আসে।
সরকারি তথ্য বলছে, দেশে গত তিন বছরে ফুলকপির উৎপাদন বেড়েছে ১৪ শতাংশ এবং বাঁধাকপির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। উৎপাদন বাড়লেও মৌসুমের শুরুতে সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকে। প্রথম দিকে যেসব ফসল আসে, সেগুলো সাধারণত আকারে ছোট হয়। তবে বাজারে সরবরাহও তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং আগাম সবজির বিষয়ে মানুষের আগ্রহ থাকায় দাম বাড়তি থাকে।
ফুলকপি শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। রান্না তরকারি, ভাজি, স্যুপ, হালকা সেদ্ধ কিংবা সালাদ হিসেবে এটি খাওয়া যায়। বাঁধাকপিও ভাজি, স্যুপ ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। শীত মৌসুমে স্বাদের দিক থেকেও এ দুটি সবজি অনেকেরই পছন্দ।
উৎপাদন কেমনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশে ১৩ লাখ ১২ হাজার টন ফুলকপি উৎপাদন হয়েছিল। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টন হয়। সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ফুলকপি উৎপাদন আরও বেড়ে ১৫ লাখ টনে ওঠে।
অন্যদিকে ২০২২–২৩ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টন বাধাঁকপি উৎপাদন হয়। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টন হয়। গত অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার টন হয়েছে। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরে টানা ফুলকপি ও বাঁধাকপির উৎপাদন বাড়ছে।
বাঁধাকপির চেয়ে বেশি জমিতে ফুলকপি চাষ হয়। যেমন, গত অর্থবছরে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছিল, যেখানে বাধাঁকপি চাষ হয়েছিল ৪৪ হাজার হেক্টরে। উৎপাদনের দিক থেকেও ফুলকপি এগিয়ে।
ফুলকপি-বাঁধাকপি চাষ ও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে গত দুই বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তাঁরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে এই সবজি দুটির চারা লাগিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, এ বছর শীত মৌসুমেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যাবে।
এখন আসছে আগাম ফলনকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সম্প্রসারণ) এইচ এম মনিরুজ্জামান জানান, সাধারণত আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বারি (শীতকালীন) ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ শুরু হয়। প্রথমে বীজ বপন করে চারা গাছ তৈরি করা হয়। ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর সেই চারা রোপণ করা হয়। সাধারণত চারা লাগানোর পরে তা বিক্রির উপযোগী হতে ৮০ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। অনেক সময় বাজারে দাম বাড়তি থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও (ছোট অবস্থায়) ফসল তুলে বিক্রি করেন কৃষকেরা।
আগস্টের শেষ কিংবা সেপ্টেম্বরে যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে আগাম ফসল। বর্তমানে এই আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে আসছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এসব আগাম সবজি বাজারে আসবে। এরপর মৌসুমের মূল সবজি আসা শুরু করবে।
সাধারণত মৌসুমের শুরুতে কোনো সবজি এলে (আগাম) সেগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এতে কৃষক, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ী—সবাই লাভবান হন। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও কৃষকেরা আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছেন।
আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারে কিছুটা ছোট হয়। বড় হওয়ার আগেই কৃষকেরা এগুলো তুলে বাজারে আনেন। যেমন, বর্তমানে যেসব ফুলকপি বাজারে আসছে, সেগুলোর ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে। ভরা মৌসুমে এক থেকে দেড় কেজি কিংবা তারও বেশি ওজনের ফুলকপি বাজারে আসে। বর্তমানে যেসব বাঁধাকপি আসছে, সেগুলোর ওজন ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের মধ্যে। পরবর্তী সময়ে দেড়–দুই কেজি আকারের বাঁধাকপি বাজারে আসবে।
চাষ কোথায় বেশিকৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপির সরবরাহ বেশি আসছে। ভরা মৌসুমে এসব এলাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ ও সাভারসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও সবজি দুটির সরবরাহ আসবে।
বিভিন্ন প্রজাতির ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ফুলকপির ভালো জাতগুলোর মধ্যে বারি ফুলকপি-১ (রুপা), বারি ফুলকপি-২, ৩ ও স্নো হোয়াইট উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া হোয়াইট ফ্লাশ ২০২০ ও অটাম জায়ান্ট হাইব্রিড জাতও রয়েছে। বাঁধাকপির জাতের মধ্যে আছে বারি বাঁধাকপি-১ ও বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)। আইপিএসএ বাঁধাকপি-১ গ্রীষ্মকালেও চাষ হয়।
ঢাকায় সরবরাহ ও পাইকারি দামগত শুক্র ও শনিবার রাতে কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আসছে।
কারওয়ানবাজারের আড়তদার আবদুল কাদির ভূইয়া প্রতিবছর শীত মৌসুমে ফুলকপির ব্যবসা করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাপারীর কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে প্রতি পিছ ফুলকপি কিনছেন তাঁরা। এরপর সেগুলো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। এই ফুলকপি আরও এক-দুই হাত ঘুরে খুচরায় ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপির দামও অনেকটা এমন।
অবশ্য অনেক কৃষক সরাসরি ঢাকায় ফুলকপি ও বাঁধাকপি নিয়ে আসছেন। যেমন, যশোর সদরের নোঙ্গরপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার এ বছর সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে দেড় বিঘা জমির আগাম বাঁধাকপি কেটে বিক্রি করেছেন। ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায় কম। সে কারণে গত মঙ্গলবার নিজেই ট্রাক ভাড়া করে বাঁধাকপি কারওয়ান বাজারে নিয়ে আসেন।
আবদুস সাত্তার বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতি পিছ বাঁধাকপি ৩৩ টাকা করে বিক্রি করেছি। এর সঙ্গে ট্রাক ভাড়া, শ্রমিক মজুরি যোগ হবে। তবে ব্যাপারীদের মাধ্যমে বিক্রি করলে দাম পাওয়া যেত মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা। সব মিলিয়ে আগাম বাঁধাকপি বিক্রি করে এখন ভালো দাম পাচ্ছেন তিনি। তাঁর আশা, ভরা মৌসুমেও মোটামুটি ভালো দাম থাকলে এ বছর মুনাফা করতে পারবেন; না হয় চাষের খরচ উঠে আয়-ব্যয় সমান সমান থাকবে।