চিত্র, শব্দ ও সংলাপ একসঙ্গে তৈরি করছে বাইদুর এআই মডেল মিউজস্টিমার
Published: 6th, July 2025 GMT
লিখিত প্রম্পট থেকে বাস্তবধর্মী ভিডিও তৈরিতে গুগল ও ওপেনএআইয়ের সঙ্গে দৌড়ে শামিল হয়েছে চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোও। এরই মধ্যে চীনা সার্চ ইঞ্জিন বাইদু চালু করেছে তাদের প্রথম এআই ভিডিও তৈরির মডেল ‘মিউজস্টিমার’।
চিত্র, সাউন্ড ইফেক্ট ও চীনা ভাষায় সংলাপ তিনটি উপাদান একসঙ্গে তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে মিউজস্টিমার মডেলের। সব উপাদান একে অপরের সঙ্গে সিঙ্ক করে তৈরি হওয়ায় ভিডিওর গুণগত মান হয় উচ্চমাত্রার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞাপন, বিপণন বা কনটেন্ট নির্মাণের মতো খাতে এ প্রযুক্তি সময় ও খরচ বাঁচিয়ে দিতে পারে। মূলত ব্যবসায়িক ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে তৈরি এই এআই মডেল স্থিরচিত্র থেকে স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এ ছাড়া বাইদু তাদের সার্চ প্রযুক্তিতেও এনেছে পরিবর্তন। নতুন সংস্করণে সার্চ হয়েছে আরও স্মার্ট, মাল্টিমোডাল ও ব্যবহারকারীভেদে পারসোনালাইজড।
মিউজস্টিমার একটি ‘ভিশন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ বা ভিএলএম। এ ধরনের মডেল কম্পিউটার ভিশন ও প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা একসঙ্গে কাজে লাগায়। ফলে ছবি ও লেখার সমন্বিত বিশ্লেষণ করে এমন কাজগুলোতে এই মডেল ব্যবহার করা যায়, যেগুলোতে মাল্টিমোডাল বোঝাপড়ার প্রয়োজন পড়ে। ১০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ফুল এইচডি (১০৮০পি) ভিডিও তৈরি করতে পারে মিউজস্টিমার, যেখানে দৃশ্য, সংলাপ ও শব্দ একসঙ্গে এবং সঠিকভাবে সমন্বিত থাকে। প্রাথমিকভাবে যাঁরা এই মডেল ব্যবহার করেছেন, তাঁরা বলছেন, আউটপুট দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মিউজস্টিমার দিয়ে তৈরি কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে মডেলটির চিত্রনির্মাণ ও সাউন্ড ডিজাইনের সক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাইদু তিনটি স্তরে মিউজস্টিমার চালু করেছে। এগুলো হলো টার্বো, প্রো ও লাইট। প্রতিটি স্তরই মূলত এন্টারপ্রাইজ বা করপোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি। গুগলের ভিও থ্রি কিংবা ওপেনএআইয়ের সোরা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি হলেও বাইদুর মিউজস্টিমার সেখানে পরিপূর্ণভাবে ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিউজস্টিমারের মাধ্যমে চীনের জেনারেটিভ এআই খাতে প্রতিযোগিতা আরও জোরালো হলো। এরই মধ্যে বাইটড্যান্স, টেনসেন্ট ও আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠান এই খাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এদিকে গত মে মাসে গুগলের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলন ‘গুগল আই/ও’তে ‘ভিও থ্রি’ মডেল উন্মোচন করা হয়, যা এর হাইপাররিয়ালিস্টিক ভিডিও তৈরির দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হয়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় দপ্তরের দায়িত্বভার একজনের কাঁধে
একসঙ্গে ছয় জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা মো. হুসাইন শওকত। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক), খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক, নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপের প্রশাসক, খুলনার স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এবং জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন এই কর্মকর্তা।
একসঙ্গে ছয় দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে তিনি কোথাও পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না। এক দপ্তরের ফাইল নিয়ে ছুটতে হচ্ছে অন্য দপ্তরে। নিয়মিত সব অফিসে যেতে না পারায় দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজে ফাঁকি, ধীরগতিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এজন্য জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে অন্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে স্থানীয় সরকার সচিবকে চিঠি দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
২০২৪ সালের ২৮ জুলাই অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) হিসেবে খুলনায় বদলি হন ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা হুসাইন শওকত। দক্ষ ও উদ্ভাবনী কাজের জন্য সুনাম রয়েছে তাঁর। এজন্য স্থানীয় সরকার পরিচালক পদ শূন্য হলে তাঁকে ওই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ১৯ আগস্ট খুলনাসহ ৮ বিভাগীয় শহরের জেলা পরিষদে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারদের (সার্বিক) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী হুসাইন শওকত জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ শেষ হলে দীর্ঘদিন পদ ফাঁকা ছিল। এতে কার্যক্রম পরিচালনায় জটিলতা দেখা দিলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে খুলনা বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালককে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন তিনি।
ফেব্রুয়ারি মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপ দখল করে নেন কিছু ব্যবসায়ী। সংগঠনে অচলাবস্থা দেখা দিলে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (সার্বিক) ব্যবসায়ী সংগঠনটির প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশনাটি তিনি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছিলেন। পরে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে ৩ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় পদাধিকবারবলে জেলা পরিষদের প্রশাসককে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী হুসাইন শওকত রেড ক্রিসেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ মাসে ১০ দিনও জেলা পরিষদে অফিস করেননি প্রশাসক। আগে জরুরি সভাগুলোও বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে হতো। তিন মাস ধরে সভাগুলো জেলা পরিষদে হচ্ছে। নিয়মিত ফাইলগুলো অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে কোনো ফাইল আটকে থাকে না।
খুলনা ওয়াসা থেকে জানা গেছে, মাসে ৫-৬ দিন তিনি অফিসে যান। ওয়াসার ফাইলও কমিশনারের দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্বাক্ষর করে পরদিন কর্মচারীরা নিয়ে আসেন। ফাইল আটকে না থাকলেও প্রশাসক নিয়মিত অফিস না করায় অধিকাংশ কর্মচারী নিয়মিত অফিসে থাকেন না। বিশেষ করে পাম্প অপারেটররা অধিকাংশই সময়মতো দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতার অফিসে প্রায়ই বিশৃঙ্খলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নৌপরিবহন মালিক গ্রুপ ও রেড ক্রিসেন্টেও হাতেগোনা কয়েকদিন তিনি অফিস করেছেন। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে বসেই এসব কাজ করেন তিনি।
খুলনায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার রয়েছেন ৪ জন। একজনের কাঁধে স্থানীয় সরকার পরিচালকসহ এত দায়িত্ব কেন– জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, ‘আমি যোগ দেওয়ার আগে থেকেই তিনি দায়িত্বে রয়েছেন। দক্ষ কর্মকর্তাদের ওপর ভরসা বেশি থাকে। তারপরও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব কীভাবে ভাগ করে দেওয়া যায়, ভাবছি।’
মো. হুসাইন শওকত বলেন, ‘ছয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন কষ্টকর হলেও কোনো ফাইল তাঁর কাছে পড়ে থাকে না। নিয়মিত কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। ওয়াসায় এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ হয়ে গেলে চাপ কমে যাবে। নৌপরিবহন মালিক গ্রুপেও নির্বাচনী বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের পর নতুনরাই দায়িত্ব পালন করবেন।’ তিনি জানান, কিছুদিন আগে মন্ত্রিপরিষদ ও স্থানীয় সরকার সচিবের সঙ্গে একটি সভায় দেখা হলে একসঙ্গে এত দায়িত্ব পালনের জটিলতার বিষয় তুলে ধরেন। তারা দ্রুত এটি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।