রাজশাহীতে চাঁদাবাজির মামলার বাদীকেই গ্রেপ্তারের দাবি বিএনপির
Published: 27th, July 2025 GMT
রাজশাহীতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলার বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মহানগর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।
গত বুধবার রাজশাহীর আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এতে রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানি, বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০ জনকে।
মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, মোস্তাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন। অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (সুইট) বলেন, ‘পুলিশ-প্রশাসন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর ও প্রতারকদের হাতে হাত মিলিয়ে এখনো তাদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে এবং রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা নিচ্ছে। যাঁরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বা জড়িত থাকবেন, তাঁদের বিচার আমরা এই বাংলার মাটিতে করব।’
বক্তারা বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান একজন প্রতারক ও জালিয়াত চক্রের হোতা। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে বহু গ্রাহকের অর্থ নিয়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেননি। আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানেও প্রতারণামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন হবে। তাঁরা আরও বলেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দলের নিরীহ নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। প্রতারক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও প্রতারণার একাধিক মামলা থাকলেও প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম, বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) বিএনপির সভাপতি শামসুল হোসেন, ছাত্রদলের নেতা এমদাদুল হক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন, মহানগর যুবদলের সদস্য মাসুদুল হক মৃধা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক সৈকত পারভেজ, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, মেরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ত ফ জ র রহম ন য বদল র স ছ ত রদল র কর ম দ র ব এনপ র ল ইসল ম সদস য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ভুক্তভোগী নারী, হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিবেশী কয়েকজনের মারধর ও জখমের শিকার হন নীলা রানী (৪৪)। এতে তাঁর চোখের ভ্রুর ওপর পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে, ভেঙে গেছে একটি দাঁত। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের ব্যথায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন ওই নারী।
গত বুধবার মারধরের ঘটনার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন সন্ধ্যায় নীলা রানীর ছেলে বাদী হয়ে বোচাগঞ্জ থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। পুলিশ একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় লোকজন। ভুক্তভোগী নীলা রানী বোচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের প্রয়াত অনিত্র চন্দ্র রায়ের স্ত্রী।
মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলাম (৫৫), শরিফুল ইসলাম (৪০), তরিকুল ইসলাম (৪২) ও মুন্না ইসলাম। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ আসামি বাবুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। পরদিন শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নীলা রানী ও আসামিরা পরস্পরের প্রতিবেশী। পূর্বশত্রুতার জেরে ঝগড়া লেগেই থাকে। বুধবার সন্ধ্যায় আসামিরা বাড়ির পাশে মনিপুর মসজিদের সামনে নীলার পথ রোধ করে তাঁকে মারধর করেন। পরে নীলাকে সঙ্গে নিয়ে ছেলে এনাফ চন্দ্র থানায় অভিযোগ করার উদ্দেশে রওনা করেন। এ সময় দ্বিতীয় দফায় আসামিরা তাঁদের ওপরে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। আসামিদের আঘাতে নীলা রানীর বাঁ চোখের ভ্রুর ওপরে গুরুতর জখম হয়। পরে তাঁকে প্রথমে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের পাশে বসে বড় ছেলে হৃদয় চন্দ্র বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী শেফালী রানীর সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে তাঁর মায়ের ঝগড়া চলছিল। পরে সামান্য বিষয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে শেফালীর কথা–কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এ নিয়ে শেফালী রানী বিচার দেন সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলামের কাছে। পরে সালিস ডাকেন বাবুল ইসলাম। কিন্তু সেখানে কোনো ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য উপস্থিত না থাকায় তাঁরা উপস্থিত হননি। তখন বাবুল তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর জেরে সন্ধ্যায় তাঁর মায়ের পথ রোধ করেন তাঁরা। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে হামলা করে গুরুতর জখম করেন। তিনি বলেন, পুলিশ আসামি ধরার পর ছাড়া পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জাহিদ সরকার বলেন, ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০৭ ধারাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়। আসামির জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ হাসান বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন। দ্রুত থানা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। আসামি গ্রেপ্তারও হন। শুনেছেন তিনি পরে জামিন পেয়েছেন। ঘটনা যেহেতু জমিসংক্রান্ত, তাই সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধননীলা রানীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ দুপুরে বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে বিধান দত্ত, বিপ্লব কুমার সিংহ, উত্তম কুমার, শ্রীকান্ত রায়সহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নীলা রানীর ওপর দেশি অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করা হয়। বর্তমান তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও তিনি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। বর্তমানে নীলার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার কথাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা তদন্তসাপেক্ষে আসামিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।