কলেজছাত্র সিজু মিয়া (২৫) হত্যার বিচারের দাবিতে গাইবান্ধা শহরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী শহরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন হয়। এরপর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আধা ঘণ্টা তাঁরা একই স্থানে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় সড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সোয়া সাতটা পর্যন্ত পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন এবং কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

ঘেরাওয়ের কারণে পুলিশ সুপার তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) শরিফুল আলম সড়কে বেরিয়ে আসেন। তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই হত্যার বিচার আপনারা পাবেন।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের আশ্বাসে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ সুপার নিহত সিজু মিয়ার মা, বোন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে বিচারের আশ্বাস দেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে থানার সামনে একটি সালিস বৈঠক চলছিল। রাত ১০টার দিকে এক যুবক সাঘাটা থানার কম্পিউটার কক্ষে যান। তিনি প্রথমে কম্পিউটার অপারেটরকে অভিযোগ লেখার কথা বলেন। অপারেটর ওই যুবককে বাইরে থেকে লিখে আনার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই যুবক থানায় দায়িত্বরত কনস্টেবলের কাছ থেকে বন্দুক নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন দায়িত্বরত কনস্টেবল চিৎকার করলে পাশের রুমে থাকা উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মহসিন মিয়াসহ কয়েকজন এসে বন্দুক উদ্ধার করেন। এ সময় ওই যুবককে ধরার চেষ্টা করলে যুবকের কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে এএসআই মহসিনকে আঘাত করে পালিয়ে যান। পরে থানা ভবনের পার্শ্ববর্তী সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে যুবককে দেখা যায়। শুক্রবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ওই যুবকের লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করেন।

পুকুর থেকে রাতেই কেন সিজুকে তুললেন না, জানতে চাইলে সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সারা রাত আমরা সিজুকে পুকুরের পানি থেকে ওঠানোর জন্য চেষ্টা করেছি। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, “তুমি পানি থেকে উঠে আসো, সমস্যা নেই।” ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি না থাকায় গভীর পানি থেকে তাঁকে তোলেনি। পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল না।’

সিজু হত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারি ইউনিয়নের কলেজশিক্ষক শাহজাহান মিয়া, গিদারি ইউপি সদস্য রমজান আলী ও হিরু মিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান, সংগঠক অতনু সাহা ও জাহিদ হাসান, নিহত সিজু মিয়ার মা রিক্তা বেগম, বড় বোন খুশি বেগম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাঘাটা থানার ভেতরে ও পুকুরে সিজু মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু পুলিশ শুক্রবার প্রেস ব্রিফিং করে ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছে। তারা সাজানো নাটক প্রচার করে। সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলমের নির্দেশে থানার ভেতর সিজুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে দাবি করে বক্তারা বলেন, সিজু জীবন বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপ দিলে সেখানেও ওসির নির্দেশে পানির ওপর পেটানো হয়। পুকুরের পানিতে এই পেটানোর ভিডিও নিহতের স্বজনেরা হাতে পেয়েছেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিজু মিয়া একজন কলেজছাত্র। তিনি কয়েক দিন আগে ছয় হাজার টাকায় একটি স্মার্টফোন কিনেছিলেন। সেটি চোরাই বলে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোনটি ফিরিয়ে নেয়। মুঠোফোন নেওয়ার বিষয়টি জানতে সিজু ওই দিন বিকেলে সাঘাটা থানায় গিয়েছিলেন। কী অপরাধ ছিল সিজুর। মুঠোফোন কেনার অপরাধে কেন থানায় ডেকে নিয়ে এবং পুকুরের ভেতর কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। ঘটনার পর থেকে সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলম দীর্ঘ সময় গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। শুক্রবার রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও গাইবান্ধার পুলিশ সুপার নিশাত এ্যাঞ্জেলা ওসি বাদশা আলমকে বাঁচানোর জন্য শুক্রবার সাঘাটা থানায় গিয়েছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক রব র হত য র

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে ‍শিবচর থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।

মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন