খুলনায় শিশু জিসান হত্যা: এলাকাবাসীর আসামির বাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
Published: 12th, October 2025 GMT
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় আলোচিত শিশু জিসান হত্যা মামলায় আসামিদের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে স্থানীয়রা। এ মামলার প্রধান আসামি ফয়সালের মা ও বাবাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারাও এ মামলার আসামি।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে নিখোঁজের তিন দিন পর জিসানের (৭) লাশ মাটি খুড়ে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশু জিসানের বাবা আলমগীর হোসেন দেয়াড়ায় অবস্থিত জুট টেক্সটাইল মিলে (মন্ডল মিল) মেকানিক্যাল পদে চাকরি করেন।
আরো পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন
চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই: ৪ আসামি গ্রেপ্তার
আজ রবিবার (১২ অক্টোবর) সকালে দেয়াড়া গ্রামে ফয়সালের বাড়িতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হামলা করে। এ সময় তারা বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
হত্যার ঘটনায় জিসানের বাবা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে ফয়সাল, ফয়সালের মাহিনুর বেগম ও বাবা হান্নান শেখকে আসামি করে হত্যা ও গুমের অভিযোগ এনে দিঘলিয়া থানায় মামলা করেন।
মাহিনুর বেগম ও হান্নান শেখকে লাশ মাটির নিয়ে চাপা দিয়ে লাশ গুম করতে ছেলেকে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর দৌলতপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম শাহীন গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, জিসান হত্যার বিচারের দাবিতে রবিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় উপজেলার দেয়াড়া খেয়াঘাট মোড়ে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মনিবুর রহমান, শেখ আবু জাফর, শেখ মামুন আলম, মোল্লা নাজমুল হক, শেখ মিল্টন, মোল্লা রাজু আহমেদ, আব্দুল কাদের জনি, মোহাম্মদ আলী টুটুল, আনোয়ার হোসেন, মোল্লা মাহমুদুল হাসান মিঠু, হালিম খলিফা, সোহেল জাফর মঈন, রাজীব আহমেদ প্রমুখ।
দিঘলিয়া থানার ওসি এইচ এম শাহীন হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে গিয়ে বলেন, ‘‘গ্রেপ্তার যুবক ফয়সাল মাদকাসক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের অসংলগ্ন কথা বলছেন। কখনো বলছেন, তাকে গালি দেওয়ার কারণে ক্ষোভে তিনি হত্যা করেছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে তাদের মধ্যে পূর্বশত্রুতার তথ্য পাওয়া যায়নি।’’
ওসি আরো বলেন, ‘‘শিশু জিসানকে কুপিয়ে হত্যার পর হত্যাকারী ফয়সালকে বাঁচাতে তার মা-বাবা লাশটি মাটিতে পুতে গুম করতে সহযোগিতা করেন বলে তারা স্বীকার করেছেন। এ কারণে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায়ে জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন।’’
পুলিশ জানায়, গত ৯ অক্টোবর বিকাল থেকে শিশু জিসান নিখোঁজ হয়। তার খোঁজ না পেয়ে জিসানের বাবা দিঘলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজে পার্শ্ববর্তী দেয়াড়া গ্রামের হান্নান শেখের ছেলে ফয়সালের সঙ্গে জিসানকে সর্বশেষ তাকে দেখা যায়। ফয়সালকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন।
দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এইচ এম শাহিন বলেন, ‘‘ফয়সালকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জিসানকে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করেন। সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তের পর হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হবে।’’
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য এল ক ব স হত য র ন হত য
এছাড়াও পড়ুন:
ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করানোর অভিযোগ
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে একটি কারখানার বিরুদ্ধে মানববন্ধনে অংশ নিতে স্কুল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা চত্ত্বরে শতাধিক শিক্ষার্থীকে দাঁড় করানোর অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলা চত্ত্বরে শিক্ষার্থীদের দিয়ে এ মানববন্ধন করানো হয়। ক্লাস চলাকালে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাবাকে বাঁচাতে চান হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী
ভুল করে বিকাশে আসা ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিলেন শিক্ষার্থী মনির
জানা গেছে, উপজেলার খাগড়াবাড়িয়া এলাকায় এমএস মেটাল নামে একটি কারখানা বন্ধের দাবিতে কাশিয়ানী উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে পারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ থেকে ডেকে এনে স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় মানববন্ধনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয়।
প্রদর্শনের জন্য তাদের প্রত্যেকের হাতে ব্যানার-প্লেকার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়। ব্যানারে পারুলিয়া, মাহমুদপুর, ওড়াকান্দি, সাজাইল ইউনিয়নবাসীর প্রতিবাদ লেখা থাকলেও সেখানে এলাকাবাসীর উপস্থিত ছিল খুবই কম। তবে পারুলিয়া ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের ছোট ভাই তরিকুল ইসলাম।
নাম না প্রকাশ কারার শর্তে অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, চারটি ইউনিয়নের ব্যানার ব্যবহার করে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানো হল কেন? এর পেছনে স্থানীয় রাজনীতি বা স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন রয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার মূল্যবান সময় এভাবে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। ক্লাস চলাকালে তাদের দিয়ে এমন কাজ করানো শিক্ষানীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
পারুলিয়া ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেওয়া তরিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় মানববন্ধনে গিয়েছে।” তবে ইজিবাইক ভাড়া করার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।
শিক্ষার্থীদের ক্লাস থেকে বের করে আনার বিষয়ে পারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত চন্দ্র বিশ্বস বলেন, “শিক্ষার্থীরা ১০ টার সময় স্কুলে এসে ক্লাস করেছে। পরে তারা কার ইন্ধনে ক্লাস থেকে বেরিয়ে কাশিয়ানী উপজেলা সদরে গিয়ে মানববন্ধন করেছে, সেটা আমার জানা নেই।”
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম বলেন, “শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানোর কোনো নিয়ম বা অনুমতি নেই। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এমন কাজ করানো অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। তবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মানববন্ধনের বিষয়ে এমএস মেটাল ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক (অর্থ) মিজানুর রহমান বলেন, “ব্যাটারি এবং ব্যাটারির যন্ত্রাংশ তৈরিতে ধোঁয়া ও বর্জ্য পরিশোধনে আমাদের কয়েক স্তরে উন্নত পরিশোধন ব্যবস্থা রয়েছে। কারখানা থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয়, তা অত্যাধুনিক মেশিনে বিশুদ্ধ করা হয়। অত্যাধুনিক এয়ার ট্রিট প্লান্ট এটিপি এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ইটিপি ব্যবস্থা রয়েছে। একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “এমএস মেটাল ইন্ডাস্ট্রির এক ফোটা পানিও কারখানার বাইরে ফেলা হয় না। আর নদী বা খালে ফেলার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা চীনের তৈরি অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহার করি। চীনের ইঞ্জিনিয়াররা সেগুলো পরিচালনা করেন। পরিবেশের ব্যাপারে আমরা সচেতন।”
ঢাকা/বাদল/মেহেদী