Prothomalo:
2025-10-26@13:29:57 GMT

ছবিতে মেট্রোরেলের দুর্ঘটনা

Published: 26th, October 2025 GMT

২ / ৫নিচে পড়ে যাওয়া বিয়ারিং প্যাড।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরায় নতুন বিপদে কক্সবাজারের জেলেরা

২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই কক্সবাজারের জেলেদের সামনে হাজির হয়েছে নতুন বিপদ—বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে গভীর নিম্নচাপ। এর প্রভাবে সাগর এখন উত্তাল, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কাও রয়েছে। প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও জেলেরা তাই সাগরে নামতে পারছেন না। এতে হতাশ ট্রলারের মালিক ও জেলেরা।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টায় সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। আজ রোববার ভোর থেকে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিলেও নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় সব প্রস্তুতি থমকে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আজ সকাল ছয়টায় নিম্নচাপটির অবস্থান ছিল কক্সবাজার থেকে প্রায় ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এটি উত্তর–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ২৮ অক্টোবর রাত অথবা ২৯ অক্টোবর সকালে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। কক্সবাজার উপকূলে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গতকাল মধ্যরাতে। জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদর, পেকুয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জেলে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। জেলায় ছোট–বড় মিলে পাঁচ হাজারের বেশি ট্রলার রয়েছে। কিন্তু সাগর উত্তাল হওয়ায় কেউই নামতে পারছেন না।’

মো. দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, কক্সবাজারের জেলেদের বিপদ পিছু ছাড়ছে না। গত ছয় মাসে সাগরে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। আগস্টে ছয়বার ও সেপ্টেম্বরে তিনবার নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এসব কারণে জেলেরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন দুর্যোগ কেন হচ্ছে, তা নিয়েও গবেষণা দরকার।

জেলেপল্লিতে হাহাকার

আজ সকালে শহরের নুনিয়াছড়া ফিশারি ঘাটের বাঁকখালী নদীর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক ট্রলার নোঙর করে রাখা। জেলেরা ট্রলারে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ গল্প করছেন।

মহেশখালীর কালারমারছড়ার জেলে আবদুল মজিদ (৪৫) বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় ঘরে বসে কাটিয়েছি। দোকান থেকে বাকিতে চাল–ডাল কিনে সংসার চলেছে। বলা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা শেষেই সাগরে গিয়ে ইলিশ ধরব, তখন বাকি পরিশোধ করব। কিন্তু এখন নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ও নাকি আসবে। কী করব বুঝতে পারছি না।’

আরেক জেলে সাইফুল করিম (৪৫) বলেন, তাঁর ট্রলারে ২১ জেলে আছেন। সরকারি চাল সহায়তা পাননি তাঁরা। তিনি বলেন, ‘২২ দিন কোনো আয় ছিল না। এখন আবার নিম্নচাপের কারণে সাগরে যেতে পারছি না। ইলিশ না ধরতে পারলে পরিবার চালানো কঠিন হবে।’

ট্রলারের মাঝি ঈমান হোসেন (৫৫) জানান, ইলিশ ধরতে হলে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গভীর সাগরে যেতে হয়। এক ট্রিপে খরচ পড়ে আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। দুর্যোগে ট্রলার ফেরত এলে খরচের অর্ধেকটাই জেলেদের গুনতে হয়।

আরও কয়েকজন জেলে বলেন, গত ছয় মাসে সাগরে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি, অন্য সামুদ্রিক মাছও কমেছে। জেলেপল্লিতে এখন অভাব ও হাহাকার চলছে। অনেকে এক বেলা খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছেন। ট্রলারের মালিকেরা লোকসানে পড়ে জেলেদের অগ্রিম টাকা দিতেও অনিচ্ছা দেখাচ্ছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ হাজার ২৮০ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। জেলার নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৪।

মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কক্সবাজার জেলায় ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৪০ হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) ইলিশ ধরা পড়েছে মাত্র ৭৯৯ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন, যা মাসে গড়ে ২৬৬ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২ হাজার মেট্রিক টন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ