অটোরিকশায় তল্লাশি চালিয়ে বাজারের ব্যাগে অস্ত্র পেল পুলিশ
Published: 20th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীর হাজিক্যাম্প এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তল্লাশিচৌকিতে (চেকপোস্ট) নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। দ্রুতগতির একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। পরে সেটি দাঁড় করান তাঁরা। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বাজারের ব্যগে পাওয়া যায় দুটি দেশীয় অস্ত্র।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ সময় বেলাল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পাহাড়তলী থানা-পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বেলাল ফেনীয় ছাগলনাইয়া থানার মৃত আলমগীর হোসেনের ছেলে। সে সীতাকুণ্ড ওই জেলার জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বাসিন্দা। সকালে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশিকালে দুটি দেশীয় অস্ত্রসহ বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। একটি বাজারের ব্যাগে ছিল অস্ত্র দুটি।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্রগুলোর বিষয়ে বেলালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বকরি ঈদের গেরান
বকরি ঈদের চান উঠনের ১০ দিনের দিন বকরি ঈদ। মাগার যার আওকাত আছে, অর বাড়িতে হাটে যায়া গরু-বকরি দ্যাখন, দাম দস্ত্তুরকরণ শুরু অয়া যায় ঈদের এক হপ্তা আগে থেকা। আগে অহনকার মথন ঘরে ঘরে গরু কোরবানি অইতো না।
মাগার যে বাড়িতেই বকরি ঈদে গরু আহুক, মহল্লার সব পোলাপান ঐ গরু লিয়া দিন-রাইত পেরেশান থাকতো, আর বকরি ঈদের খুশি কেউর কম পড়তো না। যারা কোরবানি দ্যায়, অগো পোলাপান ঈদের নয়া কাপড়লত্তার ধার ধারে না, অগো গরু অইলেই চলে। অহন তো গরুর লগে ফ্রিজ কিননের ধুম লাইগা যায় যারা কোরবানি না দ্যায় অগো ভিতরে বি। বকরি ঈদে কেউ কোরবানি না দিলে বি গোশত থাকে আঢালা সব বাড়িতে। বকরি ঈদে যারা কোরবানি দ্যায়, অরা আপনা এ্যাগানা সবতের কোরবানির গোশত বাইটা চিরা খায়।
আগে ঢাকাইয়া গো ভিতরে বকরি ঈদে মাইয়ার হৌড় বাড়িতে আলাম গরু পাঠানের রেওয়াজ আছিলো না। যার উপরে কোরবানি দেওয়ার ওয়াজিব, ওই আপনা ট্যাকায় কোরবানি দিবো– এইটাই হুকুম। ঐসমে বিয়াই বাড়িতে কোরবানির রান পাঠানের রেওয়াজ আছিলো, অহন তক এই রেওয়াজ আছে। ঢাকাইয়ারা খালি মাইয়ার হৌড় বাড়িতে গরুর রান পাঠায় না, পোলার হৌড় বাড়িতে বি গরুর আলাম রান পাঠায়। মাগার কিছু নয়া পয়সাআলারা বিমাইরা এক হড়িপিতে নাইমা মাইয়ার হৌড় বাড়িতে আনাম গরু পাঠায়া নিজের আওকাত বুঝানের কোশিস করে। এইসব ফুটানি নয়া পয়সাআলারা দ্যাখায়। ঢাকাইয়া রহিস ঘরানার মাইনষে এইসব বাইলা ফুটানির বাতে নাই।
ঢাকাইয়ারা বকরি ঈদের এন্তেজার করে বহুত দিলে জাহাসে। এইটার মূল ওয়াজা অইছে কোরবানির গোশতের বহুত খোশবুদার কোর্মা। হাড্ডি ছাড়া বড়ো বড়ো গোশতের টুকরা চর্বিতে ডুবায়া ভুনা ভুনা কইরা বহুত দিন রাইখা দেওনের পন্থা জানে ঢাকাইয়ারা। বকরি ঈদে কোরবানির গোশত গরমকরনের সমে যে গেরান বাইর অহে, ঐটার গেরান পুরান ঢাকার গল্লি কুনছির বাতাসে ঘুইরা মাইনষের নাক দিয়া মগজ তক যায়া হান্দাইতো। ঐ কোর্মার মজাদার খোশবুতে সব ঢাকাইয়া মাতোয়ারা। আর ঐ কোর্মার ঝুরি গোশত ঝুরঝুরা মুচমুচা ঝুরি গোশতের লগে খাস্তা নিমসুকা রুটি, আহা! ঐটার সামনে বেহেস্তি খানা ক্যায়া চিজ? আমি কইবার পারুম না। বকরি ঈদের বাদে গোশত খতম অহন না তক সবতে ঐ গোশত খাওনে ডুইবা থাকতো। আমি ঐ কোর্মার কথা কয়া খতম করবার পারুম না। গরম গরম ভাত আর ঐটার লগে কোর্মার এক টুকরা গোশতের লগে কাঁচা পিঁয়াইজ আর কাঁচামরিচ বা ত্যালে টালা হুকনা মরিচ, ঐটাই কাফি, আর কিছু লাগে না।
ঐ কোর্মা পোলাও, খিচুড়ি, ভাত, রুটি পারাটা, নান, নিমসুকা রুটি দিয়া খায়। যতোই খাও, প্যাট ভইরা যাইবো, মাগার জি ভরবো না। যুদি কুনু ঢাকাইয়া কেউ কইবো আমি ঐ কোর্মা খাই না, তাইলে আমরা কমু ওই সরাসর মিছা কথা কইতাছে, আর অরে আমরা ঢাকাইয়া বইলা স্বীকার করুম না। যারা কোরবানির গোশতের কোর্মা একবার খাইছে, ওই মরতে দমতক ঐ কোর্মার গেরান আর স্বাদ ভুলবার পারবো না। যুদি বি বকরি ঈদে মাইনষের ঘরে ঘরে গোশত দিয়া নানান কিসিমের কালিয়া কোপ্তা, কোয়াব, কাটলেট, কিমা, তরে তরে খানা তৈয়ার অহে, আর সবতে কবজি ঢুবায়া খানাপিনা করবো– এইটাই বকরি ঈদের রেওয়াজ।
ঈদের দিন আর ঈদের বাদের দিন আগুনে ঝলসাইনা গোশতের কোয়াবের জ্বল্লা জ্বল্লা গেরান এই দুইদিন তক বাতাসে ভাইসা বেড়ায়। আগে কেউ নেহারি বা গরুর পায়চা তৈয়ার করতো না, অহন ঈদের দিন রাইতেই নেহারির পাতিলা চুলায় চইড়া যায়। মাগার আগে যে কোর্মা বকরি ঈদে ঢাকাইয়া গো গরিব পয়সাআলা সবতের ঘরে ঘরে তৈয়ার অইতো, ঐটার কুনু জোয়াব নাই, এককথায় কইবার গেলে এক্কেরে লাজোওয়াব। অহন ঘরে ঘরে ফ্রিজের চল আহনে ঐ কোর্মা কেউ তৈয়ার করবার চায় না। মাগার অহন বি ময় মুরব্বিরা এই কোর্মা রান্ধনের হুকুম দ্যায়, আর কিছু বউ, মাইয়া তৈয়ার বি করবার পারে। আমি অহনতক চোখ বন্ধ করলে, আমার ছোট ওক্তের কথা খেয়াল করলে, কোরবানির গোশতের কোর্মার বেহেস্তি গেরান অহন বি মাহেসুস করি।
যে বাড়িতে গরু কোরবানি অইতো, অরা নিজে গো কোরবানির গোশত বাটতে বাটতে যুদি কিছু আপনা এ্যাগানার বাড়িতে দিতে কম পইড়া যাইতো, তাইলে অগো নিজের বাড়িতে কুনু বাড়ির হিস্যা অইলে ঐ গোশত বি বাইটা দিতো, যিমুন কেউ কইবার না পারে অমুকের বাড়ি থেকা এইবার গোশত আহেনি।
আমার ছোট ওক্তে দেখছি, ঢাকাইয়া গরিব পয়সাআলা সব বাড়ি বাড়িতে, বকরি ঈদে বাড়ির বউ-মাইয়ারা আগে মেন্দি বাইটা, বাদে নানান কিসিমের ময় মসলা পাটায় বাটন শুরু কইরা দিতো। বকরি ঈদের আগের দিন রাইতে সবতে হাতে মেন্দি পিন্তো, মাগার কাম কাজের ঠ্যালায় হাতে পানি লাগতে লাগতে সব রং ফ্যাদা অয়া যাইতো ঈদের দিন। ঈদের দিন মায়েরা বিহান থেকা লিয়া রাইত তক পেরেশান থাকতো, কোরবানির গোশত যিমুন কুনুমতেই পইচা না যায় একজারাসি গাফলতির লেগা। এল্লেগা মায়েগো পশিনার লগে কোর্মার গেরান একলগে মিলা-ঝুইলা সব একলগে আমাগো নাকে ধাক্কা দিতো। ঈদের বাদে মায়েরা যবে রোজ বিয়ালে লাকড়ির চুলায় গোশত গরম করতো, ঐসমে পোলাপানরা সবতে চুলার সামনে বয়া গরমা গরম গোশত পেয়ালা ভইরা লিয়া খাইতো। আগে ঘরে ঘরে ফ্রিজ আছিলো না বইলা বকরি ঈদের হপ্তা ভইরা গরিব পয়সাআলা ঢাকাইয়া গো ঘরে ঘরে গোশতের ঢলাঢলি আছিলো। দেইখা মনে অইতো, কোরবানির গোশতের বহুত বরকত। মাগার অহন সব বরকত ফ্রিজের ভিতরে যায়া হান্দে।
আগে যারা কোরবানি দিতো, অগো ঐ কোর্মার লগে মহরমের আশুরার দিন ঘরে ঘরে খিচুড়ি রাইন্ধা গরিব মাইনষের ভিতরে বাটনের রেওয়াজ আছিলো। যারা কোরবানি দিতো না, অরা বি তাব্বি নিজের ঘরে কোর্মা দিয়া খিচুড়ি রাইন্ধা বালবাচ্চা লিয়া খাইতো আশুরার দিন, নেকি পাওনের উম্মিদে। এই কোর্মা এক বচ্ছরের বি রাখন যায় চর্বিতে ঢুবায়া। ঢাকাইয়ারা অগো নিজে গো নানি-দাদি থেকা পাওয়া মুনশিয়ানায় অরা এইটা হিকা আইছে অগো আগের পোস্তানের খান্দিনী পরম্পরায়। এই পরম্পরা অহন বি আছে, মাগার সামনে থাকবো কিনা, আমি জানি না।
আখতার জাহান : সাহিত্যচর্চা করেন পুরান ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায়