দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ দেশ মালদ্বীপেও ছড়িয়ে পড়েছে মরণ নেশা ইয়াবার কারবার। অন্তত তিন বছর ধরে চালান যাচ্ছে সেখানে। এর সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি অংশ জড়িত। তারা দেশে এসে ফেরার সময় লাগেজে লুকিয়ে ইয়াবা নিয়ে যায়। পরে সেখানকার মাদকসেবীদের কাছে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। সম্প্রতি ঢাকায় চক্রের একজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এসব তথ্য জানা যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) বিমানবন্দর সার্কেলের পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান সমকালকে বলেন, মালদ্বীপে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজল নামে যাত্রীকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বহির্গমনের চেকইন চলাকালে তার লাগেজ স্ক্যানিংয়ের সময় ইয়াবার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তল্লাশি করে মেলে ৮ হাজার ৪০০ পিস। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।
মিয়ানমারে তৈরি ইয়াবার বড় বাজার বাংলাদেশ। তবে বিগত বছরগুলোয় দেখা যায়, এখান থেকে আরও কয়েকটি দেশে এই মাদক পাচার করা হচ্ছে। গত ২৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইস্কান্দারপুত্রি জেলা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে ইয়াবা, অন্য মাদকসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায়। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি, অপরজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। তারা পাচারকারী চক্রের সহযোগী।
এর আগে সৌদি আরবে ইয়াবা পাচারের তথ্য জানা যায়। এ ঘটনায় ঢাকায় এবং সে দেশে আলাদা অভিযানে কয়েক কারবারিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেলের মাধ্যমে ইয়াবা পাচারের অপচেষ্টার ঘটনাও ধরা পড়েছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার কাজলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালদ্বীপে ইয়াবার কারবার সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। কুমিল্লার কয়েক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ওই দেশে থাকে। তারা কেউ গাড়িচালক হিসেবে কাজ করে, কেউ অন্য কাজের পাশাপাশি হুন্ডির সঙ্গে জড়িত। তারা বছরে কয়েকবার দেশে আসে। ফেরার সময় লাগেজে লুকিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে যায়। তারা কুমিল্লা থেকেই এগুলো সংগ্রহ করে। মিয়ানমারে তৈরি হলেও বেশ কিছুদিন ধরে কুমিল্লা, ফেনীসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারত থেকে ইয়াবা আসছে দেশে। সেগুলোর একটি অংশ যাচ্ছে মালদ্বীপে।
ডিএনসি-ঢাকা মহানগর উত্তরের এক কর্মকর্তা জানান, মালদ্বীপে গত কয়েক বছরে ইয়াবার চাহিদা তৈরি হয়েছে। মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিরাই এর ক্রেতা। এর আগে মালদ্বীপগামী যাত্রীর কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার হলেও তখন দেশটিতে এই মাদকের বিস্তৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ফোনের চার্জারে ১ হাজার ৭৯১ পিস ইয়াবাসহ আল আমিন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে দাবি করেছিল, পরিচিত এক ব্যক্তি চার্জারটি মালদ্বীপে পৌঁছানোর জন্য তাকে দিয়েছিল। এর পরও মালদ্বীপগামী যাত্রীর কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে। তখন ধারণা করা হয়েছিল, নিজের বা ঘনিষ্ঠ কারও আসক্তির কারণে তারা ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছিল। তবে এবার জানা যাচ্ছে ভয়ংকর তথ্য। সেখানে প্রবাসীদের মধ্যে ইয়াবায় আসক্তি পৌঁছেছে মারাত্মক পর্যায়ে। এর সুযোগ নিচ্ছে কারবারিরা। এর সঙ্গে সে দেশের কিছু লোকের জড়িত থাকার আশঙ্কাও রয়েছে।
ডিএনসি কর্মকর্তা আরও জানান, কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এ চক্রের ব্যাপারে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইয়াবা পাচারে জড়িত কয়েকজনের তথ্য মিলেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজলের বিদেশ যাতায়াতের তথ্য জানতে ইমিগ্রেশন বিভাগে দেওয়া হয়েছে চিঠি। তবে গত জানুয়ারিতে সে শেষবার দেশে আসে। এর আগে অক্টোবরে এসেছিল বলে জানা যায়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরায় চোর সন্দেহে একজনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বেলা পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. ইসরাফিল (৪০)। তাঁর বাড়ি উপজেলা সদরের জাঙ্গালিয়া গ্রামে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ ভোরে জাঙ্গালিয়া গ্রামে তিনটি মুঠোফোন ও নগদ ১ হাজার ৬০০ টাকা চুরি হয়। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে এলাকাবাসী ইসরাফিলকে নিজ বাড়ি থেকে ধরে এনে মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
ইসরাফিলের পরিবারের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক দিন আগে পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের ইমরুল নামের এক ব্যক্তির মুঠোফোন চুরি হয়। সে সময় থেকেই ইসরাফিলকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। আজ এলাকায় আরও একটি চুরির ঘটনা ঘটলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করেন।
মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহমান বলেন, একরামুল নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে তিনটি মুঠোফোন ও টাকা চুরি হয়। ওই ঘটনায় ইসরাফিলকে অভিযুক্ত করে স্থানীয় লোকজন পিটুনি দেন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আগে কয়েকটি চুরির অভিযোগ থাকলেও বর্তমানে কোনো মামলা নেই। এ ঘটনায় তাঁর পরিবার থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।