তনু হত্যার ৯ বছর: বিচার না পাওয়ার শঙ্কা মা–বাবার
Published: 20th, March 2025 GMT
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান ওরফে তনু হত্যা মামলায় তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ এ হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২০ মার্চ। দীর্ঘ এ সময়ে ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মকর্তা কারা, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে বের করতে পারেননি। এ কারণে ক্ষুব্ধ তনুর মা–বাবা, তাঁর পরিবারের সদস্য, সহপাঠীসহ কুমিল্লার সচেতন নাগরিক সমাজ।
তনুর পরিবারের সদস্যরা বলেন, ৯ বছরে চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া তদন্তে কোনো ধরনের অগ্রগতি দেখতে পাননি তাঁরা।
গতকাল বুধবার দুপুরে ক্ষোভের সঙ্গে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘তনুডা যহন আছিল, তহন আমরার জীবনডা আছিল চান্দের মতো। আর অহন আমরার জীবনডা পুরা আন্ধার (অন্ধকার)। আইজ ৯ বছর হইল আমার আদরের মাইয়াডা কবরে। খুনিরার চেহারা অহনো সামনে আইল না। বিচার কিতা পাইয়াম হেইডা বুইজ্জালাইসি। এই ৯ বছর খালি আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) পাল্টান ছাড়া আর কোনো কামই হইছে না। আমি সরকারের কাছে আইওদের বিচার আগে চাই। তাঁরার (তাঁদের) কারণে আমারা মাইয়ার খুনের বিচার হইতাছে না।’
এত দিন রাজনৈতিক সরকার ছিল। বিভিন্ন কারণে খুনিরা সামনে আসেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।তনুর বাবা ইয়ার হোসেনতনুর বাবা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী। চাকরির সুবাদে সেনানিবাসের কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকেন। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তনুর বাবা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার শুরুতে প্রথমে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং এরপর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। শেষে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দপ্তরে হস্তান্তর করে সিআইডি। প্রায় চার বছর মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআই সদর দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো.
তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রায় সাত মাস হলো তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ওই কর্মকর্তা একবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আমরাই তদন্ত কর্মকতা পরিবর্তনের তথ্য পেয়ে তাঁকে কল করেছি। প্রথমে কল রিসিভ করলেও বর্তমানে তিনি আমাদের কলও রিসিভ করেন না। আমার অসুস্থ মা ও বাবা তনুর জন্য কান্না করছে, কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত তদন্তের কোনো অগগ্রতি দেখছি না।’
মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগের তদন্ত কর্মকর্তারা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মামলার সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। প্রক্রিয়াটি শেষ হলে আমরা আবারও ঘটনাস্থলে যাব। সেটি ঈদের আগেও হতে পারে, পরেও হতে পারে।’
তনুর মা ও ভাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করার। আমাদের তদন্তে কোনো অবহেলা নেই। যখন প্রয়োজন, তখন ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। যোগাযোগ নেই, বিষয়টি সঠিক নয়।’
মেয়ের খুনিদের বিচার না হলে মরেও শান্তি পাবেন না বলে জানান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন রাজনৈতিক সরকার ছিল। বিভিন্ন কারণে খুনিরা সামনে আসেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র র সদস য র তদন ত ক আম দ র ৯ বছর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ বিএনপি
জুলাই জাতীয় সনদের যে সব বিষয় ঐকমত্য হয়েছে, তার আইনানুগ বাস্তবায়নে এবং যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অংশ নেওয়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না: আমীর খসরু
উপদেষ্টারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছেন: ফখরুল
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় আলোচনাক্রমে নিম্ন লিখিত প্রস্তাব গৃহিত হয়-
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ ও বিস্তারিত আলোচনা শেষে কতিপয় বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ যে সকল বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়েছে, আমরা তার অংশীদার হিসাবে সনদে বর্ণিত সকল বিষয়কে ধারণ করি এবং দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সর্বসম্মতভাবে গৃহিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রশ্ন কিংবা সংকট সৃষ্টির সকল অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী জনগণের শক্তিকে ধারণ করে বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ ১৬ বছরের অবিরাম লড়াই ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের সীমাহীন ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, দীর্ঘ আলোচনায় উপনীত ঐকমত্যকে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং কোনো মতেই নিত্য নতুন প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা সংকট সৃষ্ট করে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিতব্য নির্বচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করবে না।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ