ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিনি এডি আলেক্সান্ডার তাঁর ছেলেসহ গাজায় থাকা অন্য জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার এক সাক্ষাৎকারে এই বাবা বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের উচিত তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা এবং আমার ছেলে, চার মার্কিন জিম্মির মৃতদেহ ও অন্য সবার জন্য কী করা যায়, সেটা দেখা।’

আলেক্সান্ডারের ছেলের নাম এডান। বয়স ২১ বছর। এডান ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে হামাস যে কয়েকজনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়, তাঁদের একজন এডান।

আলেক্সান্ডারের বিশ্বাস, তাঁর ছেলে এখনো বেঁচে আছে। যদিও হামাস বলেছে, তারা আলেক্সান্ডারের ছেলের বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না।

জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থবির হয়ে গেছে বলেও মনে করেছেন এই বাবা। আলেক্সান্ডার বলেন, ‘সবকিছু আটকে গেছে এবং আমরা অনেকটা এক বছর আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছি। এটা সত্যি উদ্বেগজনক।’

হামাস এর আগে এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছিল। সম্ভবত হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন জিম্মিদের মধ্যে এডানই একমাত্র জীবিত আছেন। এডানের সঙ্গে আরও চার মার্কিন জিম্মির মৃতদেহ ফেরত দেওয়ারও কথা ছিল।

এডান ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বেড়ে উঠেছেন। এডি আলেক্সান্ডার বলেছেন, তাঁর ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য বাচ্চাদের মতোই, খুব ভালো খেলোয়াড় ও চমৎকার ছেলে। সে ভুল সময়ে ভুল জায়গায় ছিল।

হামাস সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে এডানকে দেখা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আলেক্সান্ডার বলেন, ‘সে আতঙ্কের মধ্যে আছে বলেই আমাদের মনে হয়েছে। খুব, খুবই ভয়ংকর ভিডিও।’

গাজায় এখনো ৫৯ জন জিম্মি রয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের অর্ধেকের বেশি আর বেঁচে নেই বলে বিশ্বাস করা হয়।

এ বছর জানুয়ারির শেষ দিকে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। প্রায় এক মাসের ওই যুদ্ধবিরতিতে হামাস বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেয়।

কিন্তু প্রথম ধাপের পর ওই যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা আর সামনে অগ্রসর হয়নি। মার্চে গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গত দুই দিনে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৯২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল–জাজিরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধে সেখানে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ক স ন ড র ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

বন বিভাগের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়

বাংলাদেশে বন্য হাতির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশে মাত্র ২৬৮টি হাতি টিকে আছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় রয়েছে ৩৫-৪০টি। অথচ গত ১০ বছরে শুধু বাঁশখালীতেই ১৭টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। এখানে আমাদের বন ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। হাতি রক্ষায় বন বিভাগ কার্যকর কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বিষয়টি হতাশাজনক।

হাতি মৃত্যুর কারণগুলো নতুন কিছু নয়। রোগব্যাধিতে মৃত্যু হওয়া ছাড়াও অবৈধ বিদ্যুতের ফাঁদ পাতাসহ নানাভাবে শিকার করা হচ্ছে হাতি। করিডর সংকুচিত হয়ে যাওয়া, খাদ্যের অভাব এবং হাতির আবাসস্থলে জনবসতি গড়ে ওঠায় হাতির মৃত্যু আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বন বিভাগ এসব মৃত্যুর পর কেবল মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করেই নিজেদের দায় সারছে। নেই কার্যকর কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, নেই প্রশিক্ষিত জনবল বা চিকিৎসাব্যবস্থা।

২০১৩-১৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) যে ১২টি হাতির করিডর চিহ্নিত করেছিল, সেগুলোর অধিকাংশই এখন বাধাগ্রস্ত। চুনতি-সাতগড় করিডর প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের কারণে। করিডরের মধ্যে গড়ে উঠেছে বসতি, হয়েছে চাষাবাদ, এমনকি কিছু স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। হাতির প্রাকৃতিক চলাচল ব্যাহত হওয়ায় একই স্থানে হাতির প্রজননেও সংকট তৈরি হয়েছে।

যেখানে হাতি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল, সেখানে বন বিভাগ বছরের পর বছর ধরে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। সম্প্রতি ‘হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প’ অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানানো হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের আগপর্যন্ত বন্য হাতি রক্ষার কী হবে? প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তার বাস্তবায়ন হবে কি না এবং কার্যকারিতা কতটুকু হবে—তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

প্রতিটি হাতি হত্যার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, এ ব্যাপারে আর কোনো অবহেলা আমরা দেখতে চাই না। তবে এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা দরকার। হাতি চলাচলের করিডরগুলোর পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। হাতির আক্রমণ ঠেকাতে এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে স্থায়ী রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে। হাতি রক্ষায় ইতিবাচক ধারণা দিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারণা চালাতে হবে এবং সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা, খাদ্য উপযোগী বনায়ন ও জলাধার তৈরি করতে হবে, যাতে হাতি লোকালয়ে না আসে। পাশাপাশি বনের মধ্যে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির মতো পরিবেশবিরোধী গাছ কেটে ফেলতে হবে। এসব গাছের কারণে হাতি খাদ্যসংকটে পড়েছে। আশা করি, হাতি সুরক্ষায় বন বিভাগের বোধোদয় হবে এবং তারা আরও বেশি তৎপর হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ