যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি প্রথম প্রান্তিকে সংকুচিত, মন্দার আশঙ্কা
Published: 4th, May 2025 GMT
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সংকুচিত হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। সেই সঙ্গে এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্কের (যদিও স্থগিত করেছেন ৯০ দিনের জন্য) যে নীতি গ্রহণ করেছেন, তাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকেও সংকোচনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ মন্দার কবলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এই শঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়।
মন্দার শঙ্কা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে পিছু হটতে চান না ডোনাল্ড ট্রাম্প। এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, স্বল্প মেয়াদে মন্দা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন অর্থনীতি ভালো করবে।
এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস উইথ কার্স্টেন ওয়েলকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘ওয়াল স্ট্রিটের কিছু মানুষ বলছেন, ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো অর্থনীতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। আপনারা তাঁদের কথা তুলে আনেন না কেন? ওয়াল স্ট্রিটের এই মানুষেরা বলছেন, এটাই হবে ইতিহাসের সেরা জিনিস; এর চেয়ে ভালো কোনোকালে কিছু ঘটেনি।’ দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বল্প মেয়াদে মন্দা হলেও সমস্যা নেই বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, দেখুন, সবকিছুই ঠিক আছে। তবে আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে আমরা দারুণ কিছু করব।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাইডেনের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেখান থেকে এক ধাক্কায় সংকোচনের ধারায় চলে গেছে মার্কিন অর্থনীতি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি–মার্চে মার্কিন অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময় ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুত করেছেন। কমেছে ভোক্তাব্যয়। গত বুধবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য প্রকাশ করেছে। যদিও অর্থনীতিবিদেরা আশা করেছিলেন, প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি ভালো অবস্থায় থাকবে; কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের পর এই প্রথম কোনো প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি সংকুচিত হলো।
ট্রাম্প অবশ্য এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন। তিনি যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুন করে প্রণয়ন করছেন, তার জেরে অর্থনীতিতে কিছু ঝামেলা হতে পারে। এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পরে দেশে–বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেটি ৯০ দিনের স্থগিতের ঘোষণা দেন তিনি। যদিও চীনের পণ্যে উচ্চ শুল্ক বজায় রাখা হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের লোকেরা আগেই বলেছেন, পাল্টা শুল্কের কারণে অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়তে পারে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টক বেসেন্ট বলেছেন, বিষক্ষয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, নিশ্চিতভাবেই অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মন্দার কবলে পড়ছে কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি।
এদিকে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে রয়টার্সের এক জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নিয়ে বিশ্বের ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। যদিও তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ রয়টার্সকে বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতিসুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে।
সুর নরম করছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রও সুর নরম করতে শুরু করেছে, ট্রাম্প মুখে যত কথাই বলুন না কেন, তাঁর প্রশাসন ইতিমধ্যে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে এবং ট্রাম্পও ঘোষণা দিয়েছেন, চীনের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্যচুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে চীনও কিছু কিছু ছাড় দিচ্ছে। তারা যেসব মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, সেগুলোতে ছাড় দিতে শুরু করেছে। এমনকি গোপনে এই ছাড়ের তালিকা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম প র ন ত ক ট র ম প বল ন মন দ র বল ছ ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি প্রথম প্রান্তিকে সংকুচিত, মন্দার আশঙ্কা
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সংকুচিত হয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। সেই সঙ্গে এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্কের (যদিও স্থগিত করেছেন ৯০ দিনের জন্য) যে নীতি গ্রহণ করেছেন, তাতে দ্বিতীয় প্রান্তিকেও সংকোচনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ মন্দার কবলে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এই শঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়।
মন্দার শঙ্কা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে পিছু হটতে চান না ডোনাল্ড ট্রাম্প। এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, স্বল্প মেয়াদে মন্দা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন অর্থনীতি ভালো করবে।
এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস উইথ কার্স্টেন ওয়েলকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘ওয়াল স্ট্রিটের কিছু মানুষ বলছেন, ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো অর্থনীতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। আপনারা তাঁদের কথা তুলে আনেন না কেন? ওয়াল স্ট্রিটের এই মানুষেরা বলছেন, এটাই হবে ইতিহাসের সেরা জিনিস; এর চেয়ে ভালো কোনোকালে কিছু ঘটেনি।’ দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বল্প মেয়াদে মন্দা হলেও সমস্যা নেই বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, দেখুন, সবকিছুই ঠিক আছে। তবে আমরা এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে আমরা দারুণ কিছু করব।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাইডেনের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেখান থেকে এক ধাক্কায় সংকোচনের ধারায় চলে গেছে মার্কিন অর্থনীতি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি–মার্চে মার্কিন অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময় ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুত করেছেন। কমেছে ভোক্তাব্যয়। গত বুধবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য প্রকাশ করেছে। যদিও অর্থনীতিবিদেরা আশা করেছিলেন, প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি ভালো অবস্থায় থাকবে; কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের পর এই প্রথম কোনো প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি সংকুচিত হলো।
ট্রাম্প অবশ্য এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন। তিনি যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুন করে প্রণয়ন করছেন, তার জেরে অর্থনীতিতে কিছু ঝামেলা হতে পারে। এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পরে দেশে–বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেটি ৯০ দিনের স্থগিতের ঘোষণা দেন তিনি। যদিও চীনের পণ্যে উচ্চ শুল্ক বজায় রাখা হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের লোকেরা আগেই বলেছেন, পাল্টা শুল্কের কারণে অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়তে পারে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টক বেসেন্ট বলেছেন, বিষক্ষয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, নিশ্চিতভাবেই অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মন্দার কবলে পড়ছে কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি।
এদিকে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে রয়টার্সের এক জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নিয়ে বিশ্বের ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। যদিও তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ রয়টার্সকে বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতিসুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে।
সুর নরম করছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রও সুর নরম করতে শুরু করেছে, ট্রাম্প মুখে যত কথাই বলুন না কেন, তাঁর প্রশাসন ইতিমধ্যে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে এবং ট্রাম্পও ঘোষণা দিয়েছেন, চীনের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্যচুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে চীনও কিছু কিছু ছাড় দিচ্ছে। তারা যেসব মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, সেগুলোতে ছাড় দিতে শুরু করেছে। এমনকি গোপনে এই ছাড়ের তালিকা করা হচ্ছে।