আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সংযুক্ত করতে চায় বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। একইসঙ্গে প্রতিটি মেডিকেল কলেজে আসন পূরণ নিশ্চিতকরণে স্বচ্ছ, কার্যকর ও ডিজিটালাইজড ভর্তি নীতিমালা প্রণয়নসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সংগঠনটির নেতারা। 

আগামী বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিপিএমসিএ-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনটির নির্বাচন ঘিরে এমন সব পরিকল্পনার কথা জানান প্রার্থীরা।

এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও মুন্নু মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান আফরোজা খানম রিতা ও অন্য প্যানেলের সভাপতি পদে ঢাকার আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ডা.

শেখ মহিউদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সিরাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. এম. এ. মুকিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিপিএমসি নির্বাচনে ১১০ সদস্য ভোট দিয়ে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করবেন। দুই প্যানেলই ইতোমধ্যে ভোট ও সমর্থন প্রত্যাশা করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে।

প্যানেলটির সভাপতি প্রার্থী মুন্নু মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান আফরোজা খানম রিতা বলেন, মেডিকেল কলেজগুলো স্বাবলম্বী করতে অনুমোদিত কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ন্যূনতম ১০০টিতে উন্নীত করাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। একইসঙ্গে ভর্তি প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচন করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিক্যাল এডুকেশন স্বীকৃতি অর্জনে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানে সরকারের সঙ্গে একযোগে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাবউদ্দিন।

তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে বর্তমানে আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা বিদ্যমান রয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে এসব সংকট নিরসন এবং মেডিকেল শিক্ষার মান বিশ্বমানে উন্নীত করার চেষ্টার করবো। ভর্তি প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করা, আসন সংখ্যা বৃদ্ধি ও বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে সহায়ক নীতি গ্রহণসহ ১০টি অগ্রাধিকার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সহযোগিতা নয়, সহঅংশীদারিত্ব ভিত্তিতে মেডিক্যাল কলেজের উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। বর্তমানে মেডিকেল ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি কারণে এ বছরও ৪৫২টি সিট খালি রয়েছে। আগামীতে এত সংখ্যা আসন যেতে খালি না থাকে সে জন্য অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল না করে কীভাবে গতিশীল করা যায় সেই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।

মহিউদ্দিন-মুকিত পরিষদ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঢাকার বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজের ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর। তিনি সমকালকে বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে অটোমোশন পদ্ধতি যুগোপযোগী করা হবে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি কিস্তিতে প্রদানের ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের একক সমন্বিত পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু, পরিচালনা পর্ষদে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহের অন্তর্ভুক্তি বাতিল, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার করবো।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ম ড ক ল কল জ র ব যবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি, সবাই বিজয়ী হয়েছেন: চাকসুর নতুন ভিপি

চাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেছেন, ‘এ নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি। সবাই বিজয়ী হয়েছেন। আমরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমরা নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীকে সৃজনশীল চিন্তা প্রকাশ করতে দেখেছি। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় চাকসু সারা দেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে ক্যাম্পাসে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন।

ইব্রাহিম বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের প্রতি। তাঁরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা তাঁদের কাছে গিয়েছি। তাঁদের কথাগুলো জানার চেষ্টা করেছি। তাঁরাও আমাদের অসম্ভব সম্মান করেছেন। ভালোবেসেছেন। যে দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ আমাদের জন্য আমানত। আমরা চাই, যে আমানত তাঁরা আমাদের ওপর দিয়েছেন, তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যেন পালন করতে পারি।’

সবার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘যদি আমাদের ব্যাপারে বা আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমাদের অবশ্যই বুদ্ধি–পরামর্শ দেবেন। সমালোচনা করবেন।’

এর আগে চাকসুর নবনির্বাচিত জিএস সাঈদ বিন হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।’

চাকসুতে ফিরল শিবির

দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নেতৃত্বে ফিরেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা ভিপি-জিএসসহ ২৪টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ভিপি (সহসভাপতি) পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্যানেলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।

জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।

চাকসুতে ২৬টি পদে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। একই পদে ছাত্রশিবিরের সাজ্জাত হোছেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এ ছাড়া সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন তামান্না মাহবুব। তিনি বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।

চাকসু নির্বাচনে শিবিরের সর্বশেষ জয় এসেছিল ১৯৮১ সালে। ওই নির্বাচনে ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার আর জিএস হন আবদুল গাফফার। দুজনই ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন নেতা। এরপর দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা সেই নেতৃত্বের আসনে ফিরলেন।

দীর্ঘ এক দশক পর

আশির দশক থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সরকারের আমলে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ হারায় সংগঠনটি।

এরপর প্রায় এক দশকের নীরবতা কাটিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফেরে ছাত্রশিবির। তাদের এই প্রত্যাবর্তনের এক বছর না যেতেই চাকসু নির্বাচনে এমন বিজয় ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার— ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৯০ এবং এবার ২০২৫ সালে। ১৯৮১ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির পেয়েছিল প্রথম জয়। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’র কাছে হেরে যায় তারা।

এর পরের দীর্ঘ তিন দশক চাকসু নির্বাচনই হয়নি। বন্ধ ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম। নতুন প্রজন্মের ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে চাকসু। প্রথমবার ভোট দেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি; কিন্তু চাকসুতে দিয়েছি—এটাই আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার শুরু।

গতকাল পাঁচটি অনুষদ ভবনে ১৫টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৭০০টি বুথে শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। প্রত্যেক ভোটার একসঙ্গে ৪০টি ভোট দেন—চাকসুর ২৬টি পদ ও ১৪টি হল সংসদের জন্য। ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫১৬ জন। শুরুতে নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে ভোরে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার সময় বলা হয়, ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি, সবাই বিজয়ী হয়েছেন: চাকসুর নতুন ভিপি
  • ৪৪ বছর পর চাকসুর নেতৃত্বে ফিরল ছাত্রশিবির
  • ইয়াংওয়ান করপোরেশন পেল ডব্লিউসিডি ভিশনারি অ্যাওয়ার্ডস
  • ইলুমিনাতি স্যাটানিজম বা শয়তানবাদ সম্পর্কে কতটুকু জানেন?