দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্য ও সমঝোতা দরকার বলে মনে করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম এ কথা বলেন। ‘সংস্কার এবং নির্বাচনের সময় নির্ধারণ বিতর্ক: জাতীয় স্বার্থের নিরিখে’ শিরোনামে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই আলোচনার আয়োজন করে। হাসনাত কাইয়ুম এতে সভাপতিত্ব করেন।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সবার সরকার। যদিও এটির নাম আমরা অন্তর্বর্তী সরকার দিয়েছি, এটি কিন্তু আসলে জাতীয় সরকার। এ সরকার আমাদের সবার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। আমাদের সবার দরকার ছিল, ন্যূনতম সময়ের মধ্যে কতটুকু আমরা সংস্কার করতে পারব, সেটি আগে বসে ঠিক করে ফেলা। কিন্তু সরকারের অপ্রস্তুতির কারণে হোক বা অযোগ্যতার কারণে হোক বিচার, সংস্কার, নির্বাচন—এ তিনটি কাজে সরকার খুব সময়ক্ষেপণ করেছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’

এখনো কেউ কেউ পুরোনো বন্দোবস্ত ফেরত আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সত্তর, নব্বইয়ের মতো চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতে দিতে না চাইলে সর্বোচ্চ সমঝদারিত্বের রাজনীতি দরকার। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন কোনোটিই কোনোটির বিরোধী নয়, বরং পরিপূরক। এভাবে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া দরকার। নয়তো কপালে আবারও ফ্যাসিবাদ অপেক্ষা করছে।

আলোচনায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, কেউ কেউ নির্বাচন আগে চাইছেন। কেননা এতে তুলনামূলকভাবে তাঁদের জন্য সুবিধা বেশি। আবার কেউ সংস্কারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, মনে হচ্ছে তাঁরা নির্বাচন চান না। এ দুটো ভুল ধারণা। সংস্কার চাই কিন্তু নির্বাচন চাই না, এটা রাষ্ট্রব্যবস্থার কোনো গঠনগত প্রস্তাব নয়। আবার নির্বাচন চাই সংস্কার চাই না, সেটা বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। সুতরাং জাতীয় স্বার্থ যদি দেখেন, তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সর্বোচ্চ সংস্কারের পক্ষে দাঁড়িয়ে যতটা সম্ভব সংস্কার করা দরকার।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, অভ্যুত্থানের পর অনেক অংশীজনকে (স্টেকহোল্ডার) অপ্রাসঙ্গিক, বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অভ্যুত্থানের পক্ষের সবাইকে নিয়ে সংবিধান সংস্কার সভা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য জাতীয় স্বার্থে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে।

আলোচনা সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, বাসদের (মার্ক্সবাদ) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য গোলাম শফিক, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য শেখ নাসিরউদ্দীন, হাবীবুর রহমান রাজা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত সরক র দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান

‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।

‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’

ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।

জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’

করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা।

তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অনন্ত ফেল করিনি।’

সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ