এই কুয়ার নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি অলৌকিক ঘটনা আছে। কুয়াটি খনন করা হয়েছিল প্রাক্-ইসলামি যুগে। সে সময় এক ইহুদি কৃষককে বলা হতো আরিস। আরিস শব্দের অর্থ কৃষক। কুয়াটির নাম যদিও আরিস, তবে এটি ‘আংটির কুয়া’ নামে বেশি পরিচিত। কারণ, এই কুয়ার সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর আংটির একটি ঘটনা জড়িয়ে আছে।
মহানবী (সা.) একটি রুপার আংটি ব্যবহার করতেন, যাতে নিচের দিক থেকে ওপরে তিনটি শব্দ লেখা ছিল, ‘মুহাম্মদ-রাসুল-আল্লাহ’। আংটিটি পরবর্তী সময়ে খলিফা আবু বকর (রা.
উসমান (রা.)-এর শাসনামলে একদিন আংটিটা কুয়ায় পড়ে যায়। তিন দিন ধরে আংটিটি খোঁজার পরও তা পাওয়া যায়নি। নবীজির মোহরাঙ্কিত আংটিটি চিরতরে হারিয়ে যায়। এরপর থেকে কুয়াটি ‘বিরে আরিস’ বা ‘আংটির কুয়া’ নামে পরিচিতি পায়।
হাদিসে আছে, একদিন মহানবী (সা.) এই কুয়ার মুখে বসে কুয়ার ভেতর নিজ পা দুটো ঝুলিয়ে দেন। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আসেন এবং তাঁর ডানে বসেন। তিনিও নবীজির মতো নিজের পা কুয়ার ভেতর ঝুলিয়ে দেন। এরপর উমর (রা.) এসে বসেন নবীজির বাঁয়ে এবং অন্য দুজনের মতো কুয়ার ভেতর পা ঝুলিয়ে দেন। পরে উসমান (রা.) আসেন, কিন্তু তিনি কুয়ার মুখে আর জায়গা না পেয়ে তিনজনের দিকে মুখ করে এক পাশে বসেন। রাসুল (সা.) তিনজনকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন।
একসময় কুয়াটি কালো পাথর দিয়ে নির্মিত ছিল। কুয়ার গভীরতা ছিল তখন প্রায় ৬.৩ মিটার, চওড়া ২.২ মিটার এবং পানির স্তর ছিল ১.৩ মিটার। বৃষ্টিপাতের ফলে পানির স্তর ওঠানামা করত। ১৩১৭ খ্রিষ্টাব্দে (৭১৪ হিজরি) কুয়ার তলদেশে নামার জন্য একটি সিঁড়ি তৈরি করা হয়। উসমানি শাসনামলে কুয়ার ওপর জিপসাম দিয়ে একটি গম্বুজ তৈরি করা হয় এবং এর দক্ষিণে আরেকটি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়।
১৯৬৪ সালে (১৩৮৪ হিজরি) মদিনা পৌরসভা কুয়াটির গম্বুজ দুটো ভেঙে ফেলে এবং কুয়াটি মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়। তবে স্থানটি চিহ্নিত করে রাখতে একটি বর্গক্ষেত্রের মধ্যে একটি গোলক এঁকে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপিসহ বিভিন্ন দল স্বাগত জানিয়েছে
জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে নির্দিষ্ট করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলেছে, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে যে দোদুল্যমানতা ছিল, সেটি কেটে গেছে।
তবে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে দলটির একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণায় বিএনপির চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।’
এরপর রাতে রাজধানীর গুলশানের কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দলের পক্ষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন, ‘আজকে প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাচ্ছি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে যথাসময়ে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে যে একটি দোদুল্যমানতা ছিল, তা আর রইল না। এখন সারা জাতি নির্বাচনমুখী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আগামী দিনের নির্বাচন ইনশা আল্লাহ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত একটা নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করি। সেই লক্ষ্যে সমগ্র জাতিকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগে কোনো রকমের অনিশ্চিত পরিবেশ আর থাকবে না। সবকিছু সচল হবে এবং গতিশীলতা পাবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গতকাল রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এক অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করেছেন, সেখানে বিএনপির চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। এটি নিশ্চিত করেই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে রকম বলেছিলেন, সে রকমই তো করলেন। চিঠিও হয়তো কাল নির্বাচন কমিশনে দিয়ে দেবেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যেটা বলেছেন সেটা থেকে সরে যাবেন, বিষয়টা এমন হতে পারে না। সব বিবেচনায় রোজার ঈদের আগে নির্বাচন করা ভালো পদক্ষেপ।’
পবিত্র রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে এবি পার্টি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে দলটি।
নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বিচার, সংস্কার, জনজীবনের নিরাপত্তা ও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দিকে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য জাতীয় নির্বাচন অত্যাবশ্যক, এর সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা জনজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আমরা মনে করি।’
বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের দুই নেতা বলেন, ‘এই নির্বাচন যাতে একটা টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে তৈরি করতে পারে, তার জন্য আমরা আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে করার দাবি জানাচ্ছি। এই নির্বাচনে গঠিত সংসদ একই সঙ্গে একটা যৌক্তিক সময়ের ভেতরে সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ করবে। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাতে রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য অবিলম্বে নির্বাচনে সবার সম–সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’