প্রথম আলো :

গত শতকের ষাট দশককে বলা হয় আধুনিক বাংলা গানের জাগরণের সময়। এরপর দ্রুত এর সংস্কার হলেও এই একুশ শতকে এসে বাংলা আধুনিক গান তার কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে আসতে পেরেছে?  

সুবীর নন্দী: নিশ্চয়ই আসতে পেরেছে। বিন্দুমাত্র সন্দেহ এতে নেই। ষাট দশক ছিল আধুনিক বাংলা গানের উত্তরণের সময়। ওই সময় আমাদের দেশে ছিল ভারতীয় বাংলা গানের একচ্ছত্র প্রভাব। আর এই প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পী তাঁদের সংগীত প্রতিভা, জ্ঞান এবং ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছিলেন আধুনিক বাংলা গানের নতুন অধ্যায়। এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে সবার আগে যাঁর নামটি আসে, তিনি আবু বক্কর সিদ্দিকী। আরও ছিলেন শ্রদ্ধেয় আব্দুল আলিম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, কামাল হোসেন, আলাউদ্দিন প্রমুখ। তাঁরা আমাদের নিজস্ব গীতিকার, সুরকার নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে গান করে আধুনিক বাংলা গানকে একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে দেন। স্বাধীনতার পর তৈরি হলো আরেকটা ধারা। তখন গানের মধ্যে ফোক গানের প্রভাব পড়ে। ওই সময় এর কান্ডারি ছিলেন আজম খান, ফিরোজ সাঁই প্রমুখ।

প্রথম আলো :

আপনার দীর্ঘ সংগীতজীবন। এই জীবনে কোন শিল্পীর গান আপনাকে বেশি প্রভাবিত করেছে?

সুবীর নন্দী: নিজের অজান্তে ছোটবেলা থেকে গান শুনতে শুনতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী পঙ্কজ মল্লিক, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, জগজিৎ সিংয়ের ভক্তে পরিণত হয়েছিলাম। তাঁদের গান এখনো আমি শুনি, যা তখন আমাকে প্রভাবিত করেছে।

প্রথম আলো :

আজকের সুবীর নন্দী হয়ে ওঠার পেছনে বড় অবদান কার?

সুবীর নন্দী: এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। কেননা, আমার সংগীতজীবনে অনেকের অবদান আছে, একজনকে আলাদা করে বলা কঠিন। কারণ, আমি অনেকের কাছে গানের তালিম নিয়েছি। ওস্তাদ ছিলেন। স্কুলে গান করতে কেউ কেউ শিখিয়েছেন।

১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় সুবীর নন্দীর জন্ম। সুবীর নন্দীর সংগীতে হাতেখড়ি মা পুতুল রানীর কাছে। পরে ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। সিলেট বেতারে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৬৭ সালে।

প্রথম আলো :

৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে যাঁদের বয়স, তাঁদের একটা বড় অংশ কিন্তু এখন গান শুনছেন না। এখন গান শুনছে তরুণ প্রজন্ম। তাঁদের বয়স¦১৪ থেকে ২২-এর মধ্যে। এর কারণ কী?

সুবীর নন্দী: আসলে সংগীত ব্যাপারটা সময়নির্ভর। একটা নির্দিষ্ট ধারার ওপর ভর করে এর চলন, বলন, আকারের পরিবর্তন ঘটে। আগে ভালো যা ছিল, এখনো আছে। এখনো তৈরি হচ্ছে শ্রুতিমধুর গান। তবে এখন মানুষের সময় খুব সীমিত হয়ে গেছে। মানুষ এখন দুপুরে ভাতের ঝামেলা এড়ানোর জন্য একটি বার্গার খেয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। এই ‘বার্গার’ সংস্কৃতির সময় অনেকে হয়তো বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার সময় গাড়িতে গান শোনা ছাড়া অন্য কোনো সময় বের করতে পারে না। আবার জ্ঞানী শ্রোতার মধ্যে একটা দর্শন কাজ করে।¦তাঁরা মনে করেন, ভারতীয় গান না শুনলে জ্ঞানী শ্রোতা হওয়া যাবে না।

‘মনেরও রঙে রাঙাব’ অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব র নন দ প রথম আল র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ঠান্ডা মাথায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের বার্তা মমতার

পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যুদ্ধের ডামাডোলে ঐক্যের ডাক দিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের জোরালো বার্তা দিলেন  ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেছেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের একত্রিত থাকতে হবে। এই সময় আমাদের মধ্যে যেন কোনো বিভেদ না আসে।” 

বুধবার (৭ মে) রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে এসে ঐক্যের বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, “রাজ্যের নাগরিক হিসেবে, সংবাদমাধ্যমের কর্মী হিসেবে আপনাদের দায়বদ্ধতা আছে; এই সময়টা শান্ত এবং সংযত থেকে মানুষকে সঠিক সত্য পরিবেশন করার, যাতে কোনো অশান্তি তৈরি না হয়, কোনো প্ররোচণামূলক পরিস্থিতি তৈরি না হয়, কোনো সহিংসতা না ছড়ায় বা কোনো সন্ত্রাস না ছড়ায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করার জন্য আবেদন করছি।” 

আরো পড়ুন:

মোদিকে মমতা: দাঙ্গায় নয়, সীমান্ত সুরক্ষায় নজর দিন

পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতার বিষয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য নাকচ ভারতের

এদিন বিকালেই পাকিস্তান, নেপালের পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে থাকা ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। 

দিল্লীতে ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, উত্তরাখন্ড, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রাজ্যগুলোর মুখ্য সচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি, লাদাখের লেফটেনেন্ট গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন। যদিও তাদের অনেকেই অন্য রাজ্য থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠকের বিষয়ে মমতা বলেন, “আজকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তবর্তী কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন; বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।” 

তিনি বলেন, “সমস্ত রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কর্মকর্তাদের ডেকে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। পহেলগামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছে, আমরা সকলেই তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। এই সময় আমাদের মধ্যে যাতে কোনো বিভেদ না হয়। আমরা সবাই দেশের পক্ষে। এই মানসিকতা নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

মমতা বলেন, “আমরা দেশটাকে ভালোবাসি। আমাদের বাংলা চিরকাল দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। কাজেই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কোনো রকম ভয় না পেয়ে একদম ঠান্ডা মাথায় সবটা আগলে রাখতে হবে।” 

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “আমাদের সকলের সাথেই যোগাযোগ থাকবে, মনিটারিং চলবে। যদিও চিন্তার কিছু নেই, আতঙ্কিত হওয়ারও কোনো কারণ নেই। যদি সেরকম কিছু হয় তথ্য থাকলে আগাম জানিয়ে দেওয়া হবে।” 

ফেসবুক, ইউটিউবসহ ডিজিটাল মিডিয়া, গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য পরিবেশনের আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অন্যথায় কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে এটা টিআরপি বাড়ানোর সময় নয়, এটা দেশ রক্ষার সময়।” 

গুরুতর কোনো তথ্য থাকলে রাজ্য সরকারের প্রদেয় নির্দিষ্ট নম্বরে তথ্য জানানোর আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কলকাতা আমাদের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। আজকের বৈঠকে উত্তরবঙ্গেও চালু করার কথা বলা হয়েছে। পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট জেলার শাসক, পুলিশ সুপারদের সতর্ক করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মোবিলিটি বাড়বে,  ভিজিলেন্স থাকবে। এখন সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে।” 

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বেসরকারি এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষকে ছুটি ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাজ্যে সরকারি স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি পড়ে গেছে। বেসরকারি এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোকে আহ্বান জানাব, তারাও যাতে এই পরিস্থিতিতে ছুটি ঘোষণা করে। ৯ এপ্রিল শুক্রবার রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন থেকে ছুটি ঘোষণা দিলে ভালো হয়। বাচ্চারা যত বাড়িতে থাকে ততই ভালো।”

এরকম এক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো জিনিসের দাম বাড়াতে না পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বৃহস্পতিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন সেই ১৯৭১ সালে শেষ যুদ্ধ হয়েছিল। এরপর কার্গিলের যুদ্ধ কাশ্মীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, পরবর্তীতে বালাকোট বা পুলওয়ামাতেও যে ঘটনা ঘটেছিল, তার রেশ এদিকে আসেনি। আজকের যে পরিস্থিতি... যদিও এখানকার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, তবু যেহেতু আমাদের সঙ্গে অনেকগুলো দেশের সীমান্তে রয়েছে, পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত রয়েছে; তাই সবাইকে একসাথে ভালো করে চলতে হবে, শান্তিতে রক্ষা করতে হবে।” 

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ