অপারেশন সিঁদুর: ভারতীয় সেনাদের প্রশংসা করে কংগ্রেসের ঐক্যের ডাক
Published: 7th, May 2025 GMT
পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর (পিওকে) থেকে সন্ত্রাসবাদের সব উৎস নির্মূল করার জন্য ভারতের আপোষহীন নীতির প্রশংসা করেছে দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো।
হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গর্বিত। জয় হিন্দ!”
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অভিযানের নাম ‘সিঁদুর’ কেন?
সন্ত্রাসবাদের প্রতি বিশ্বকে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্স-এ এক পোস্টে লিখেন, “পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে উদ্ভূত সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের একটি অটল জাতীয় নীতি রয়েছে। আমরা আমাদের ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য খুবই গর্বিত, যারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রত কাশ্মীরের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছে। আমরা তাদের দৃঢ় সংকল্প এবং সাহসকে সাধুবাদ জানাই।”
খাড়গে বলেন, “পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার দিন থেকে, কংগ্রেস স্পষ্টভাবে সীমান্ত পার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেকোনো সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনী এবং সরকারের সাথে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “এখন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রয়োজন। কংগ্রেস সশস্ত্র বাহিনীর পাশে রয়েছে। জাতীয় স্বার্থ আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা একই রকম মন্তব্য করেছেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেছেন।
যাদব বলেন, “ভারত, ভারতবাসী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে কখনো সহ্য করেনি এবং কখনো করবেও না।”
তিনি বলেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনী সমসময় মায়েদের গর্ভ, বোনের কব্জি এবং তাদের কপালে সিঁদুর রক্ষা করেছে।”
যাদব বলেন, “আমরা সত্য, অহিংসা ও শান্তিতে বিশ্বাসী মানুষ। আমরা ভারতীয়রা কখনও অন্যায় করি না, কিন্তু যদি কেউ আমাদের সাথে অন্যায় করে তবে আমরা তা সহ্য করি না। যারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করে তারা যদি আমাদের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ করে, তাহলে আমরা জানি কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হয় এবং উপযুক্ত জবাব দিতে হয়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে ১৪০ কোটি ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সরকারের পাশে রয়েছে।”
সশস্ত্র বাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ কে স্বাগত জানিয়েছেন সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানে সন্ত্রাসী আস্তানাগুলোতে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে আমি স্বাগত জানাই। পাকিস্তানকে অবশ্যই একটি কঠিন শিক্ষা দিতে হবে যাতে আরেকটি পহেলগাম আর কখনো না ঘটে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসী অবকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে হবে। জয় হিন্দ!”
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মঙ্গলবার রাতে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলা করেছে, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সশস ত র ব হ ন র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধীদের হাতে
চট্টগ্রাম নগরে থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র-গুলি ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচায় পুলিশেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। সে সময় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ অস্ত্র-গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। তবে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
গত ২১ জুলাই নগরের চান্দগাঁওয়ে ‘সন্ত্রাসী’ ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পো ও শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইসার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। পরে পুলিশ বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকায় সন্ত্রাসী শহিদুলের আস্তানার সন্ধান পায়। সেখানে লুট হওয়া দুটি গুলি ও গুলির খোসা পাওয়া যায়।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুলের দখল করা একটি ফ্ল্যাট থেকে গুলি ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ফ্ল্যাটটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ-হাটহাজারী থানার সীমানাসংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় মাসুদ কায়সার ও মো. আনিস নামে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি গুলির খোসা (শটগানের কার্তুজ) উদ্ধার করা হয়। সেগুলোও লুট করা গুলির খোসা বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
নিহত আনিসের স্ত্রী শামিম আকতারের অভিযোগ, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ পুলিশের গুলি ব্যবহার করে তাঁর স্বামীসহ দুজনকে খুন করেছেন। তবে সাজ্জাদ কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ৩ মার্চ সাতকানিয়ায় পিটুনিতে দুজনের মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ যে পিস্তল উদ্ধার করে, সেটিও থানা থেকে লুট হওয়া।
১৭ এপ্রিল নগরের ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর আস্তানা থেকে একটি পিস্তল ও ৫০টি গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ স্বীকার করেন, এসব অস্ত্র-গুলি থানা থেকে লুট করা। তিনি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করেন।
গত ২৫ জানুয়ারি ডবলমুরিং থানার ঝরনাপাড়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬টি গুলি, ১টি রাবার বুলেটসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানার চৌমুহনী এলাকার চারিয়াপাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, এসব অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-গুলি লুট হওয়া এবং গ্রেপ্তার ছয়জনই ছিনতাইকারী।
১৭ জুন নগরের মেরিন সড়ক থেকে পিস্তল-গুলিহ মো. রুবেল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পিস্তলটি থানা থেকে লুট হওয়া বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এদিকে পিস্তলটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২১ মার্চ মো. রিয়াদ নামের পুলিশের এক কনস্টেবলসহ ছয়জনকে পতেঙ্গা ও বাকলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রিয়াদসহ তিনজন আদালতে অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র, গুলি উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা না করলে কিংবা মনোযোগ না দিলে জননিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে।