Samakal:
2025-11-09@19:52:07 GMT

ভারত-পাকিস্তানের যত সংঘাত

Published: 7th, May 2025 GMT

ভারত-পাকিস্তানের যত সংঘাত

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এসব সংঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধ। কাশ্মীর নিয়ে দেশ দুটি একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়েছে। তাছাড়া দেশ বিভাগ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য দেশ দুটিকে বারবার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিলে এই যুদ্ধ হয়। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। 

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ শুরু করে। দেশটির সেনারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করলে দুই দেশ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি হয়।

১৯৭১ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ করে। ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে এবং ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীর উপত্যকায় সশস্ত্র লড়াই হয়। পাকিস্তানের সমর্থনে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের উত্থানের ফলে সংঘাত বাড়ে। ভারতীয় সেনারা নৃশংস প্রতিক্রিয়া দেখালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক সংঘর্ষ তীব্রতর হয়।

১৯৯৯ সালের যুদ্ধটি কার্গিল যুদ্ধ নামে পরিচিত। পাকিস্তানি সেনা ও বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে কৌশলগত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারত অনুপ্রবেশকারীদের হটাতে ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করলে তীব্র লড়াই হয়।

২০০১ সালে দিল্লির সংসদে হামলা হয়। সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলেও বড় সংঘর্ষ হয়নি। ২০১৬ সালে উরিতে সেনাঘাঁটিতে হামলার পর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারত ‘অপারেশন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ পরিচালনা করে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর বালাকোটে বিমান হামলা করে ভারত। পাকিস্তানও জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে।

সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার জেরে গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে ভারত। হামলায় ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার দাবি করে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ১০ জন নিহত হয় বলে দাবি করে ইসলামাবাদ। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মামদানিকে ঠেকাতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা, তা কি সম্ভব

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়রের পদে বসছেন জোহরান মামদানি। শহরটিতে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মেয়রও হচ্ছেন তিনি। এটি মোটেও মেনে নিতে পারছেন না মামদানির রিপাবলিকান নিন্দুকেরা। যেকোনো মূল্যে তাঁর মেয়র পদে বসা ঠেকাতে চাচ্ছেন তাঁরা। তাই এবার মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন।

নির্বাচনের আগে থেকে মামদানিকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ৩৪ বছর বয়সী এই মুসলিমকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এমনকি হুমকি দিয়ে এ–ও বলেছেন, মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেবেন।

ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে রিপাবলিকান কয়েকজন আইনপ্রণেতা মামদানির নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। কয়েকজন আবার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার কথা বলেছেন। এই আইনপ্রণেতাদের অভিযোগ মামদানি কমিউনিস্ট এবং ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যদিও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তাঁরা।

মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে মামদানির নাগরিকত্বের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য অ্যান্ডি ওগলেস। পরে গত ২৯ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘মামদানি যদি নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত নথিপত্রে মিথ্যা বলে থাকেন, তাহলে তিনি নাগরিক থাকতে পারবেন না। আর অবশ্যই নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান।

মামদানিকে কমিউনিস্ট ও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ওগলেস আরও বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সমাজতন্ত্র বা সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করতে হয়। আমার সন্দেহ আছে তিনি (মামদানি) এগুলো প্রকাশ করেছিলেন কি না। আমার এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে উগান্ডায় যাওয়া প্রথম ফ্লাইটেই তাঁকে ফেরত পাঠান।’

মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন প্রতিনিধি পরিষদে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সদস্য রেন্ডি ফাইন। ফাইন ও ওগলেস—দুজনের কাছেই তাঁদের বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছিল মার্কিন ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট। তবে কোনো জবাব দেননি তাঁরা। আর মামদানি তাঁর নাগরিকত্বের আবেদনে মিথ্যা বলেছিলেন—এমন কোনো তথ্যও পায়নি ওয়েবসাইটটি।

জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালের মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকত্ব পেতে একজন বিদেশি প্রাপ্তবয়স্ককে অবশ্যই আইন মেনে টানা পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে। আর মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দেশটিতে অন্তত তিন বছর টানা বসবাস করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল শুধু দেশটির আদালত করতে পারেন। মামদানির নাগরিকত্বের আবেদন দিয়ে ওগলেস ও ফাইন যে অভিযোগ এনেছেন, তার পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখছেন না অভিবাসী আইনবিশেষজ্ঞরা। অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী জেরেমি ম্যাককিনলে বলেন, ‘মামদানি নাগরিক হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় অযোগ্য ছিলেন বা নথিতে কোনো কিছু লুকিয়েছেন—এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমার চোখে পড়েনি।’

মামদানি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। তিনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট অব আমেরিকা নামের একটি সংগঠনের সদস্যও।রিপাবলিকানদের অভিযোগ পুরোনো

গত গ্রীষ্মে মামদানি যখন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন থেকে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন রিপাবলিকানরা। গত জুনে পাম বন্ডিকে লেখা একটি চিঠিতে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ওগলেস। তিনি বলেছিলেন, মামদানি হয়তো ‘নাগরিকত্ব গ্রহণের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য বিকৃত করেছিলেন বা সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের কথা গোপন করেছিলেন।’

‘হোলি ল্যান্ড ফাইভের’ প্রতি সমর্থন জানিয়ে মামদানির লেখা একটি র‍্যাপ সংগীতের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন ওগলেস। হোলি ল্যান্ড ফাইভের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে মুসলিম দাতব্য সংস্থা ‘হোলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশনের’ পাঁচ ব্যক্তিকে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতি সমর্থনের জন্য ২০০৮ সালে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যদিও ওই মামলায় উপস্থাপন করা প্রমাণ ও গুজবের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন কয়েকজন আইনজীবী।

নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বিরল হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তা প্রায়ই ঘটছে বলে উল্লেখ করেছেন নিউইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক ইরিনা মান্ত্রা।মা, বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে জোহরান মামদানি

সম্পর্কিত নিবন্ধ