Samakal:
2025-09-23@16:56:21 GMT

ভারত-পাকিস্তানের যত সংঘাত

Published: 7th, May 2025 GMT

ভারত-পাকিস্তানের যত সংঘাত

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এসব সংঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধ। কাশ্মীর নিয়ে দেশ দুটি একাধিকবার সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়েছে। তাছাড়া দেশ বিভাগ, ধর্ম ও আদর্শিক পার্থক্য দেশ দুটিকে বারবার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিলে এই যুদ্ধ হয়। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। 

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’ শুরু করে। দেশটির সেনারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করলে দুই দেশ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি হয়।

১৯৭১ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ করে। ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে এবং ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীর উপত্যকায় সশস্ত্র লড়াই হয়। পাকিস্তানের সমর্থনে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের উত্থানের ফলে সংঘাত বাড়ে। ভারতীয় সেনারা নৃশংস প্রতিক্রিয়া দেখালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক সংঘর্ষ তীব্রতর হয়।

১৯৯৯ সালের যুদ্ধটি কার্গিল যুদ্ধ নামে পরিচিত। পাকিস্তানি সেনা ও বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে অনুপ্রবেশ করে। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ লাইন ব্যাহত করতে কৌশলগত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারত অনুপ্রবেশকারীদের হটাতে ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করলে তীব্র লড়াই হয়।

২০০১ সালে দিল্লির সংসদে হামলা হয়। সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলেও বড় সংঘর্ষ হয়নি। ২০১৬ সালে উরিতে সেনাঘাঁটিতে হামলার পর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারত ‘অপারেশন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ পরিচালনা করে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর বালাকোটে বিমান হামলা করে ভারত। পাকিস্তানও জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে।

সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার জেরে গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে ভারত। হামলায় ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার দাবি করে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ১০ জন নিহত হয় বলে দাবি করে ইসলামাবাদ। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থী সুজা

কেউ কেউ শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যায়, আবার কেউ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ছুটে চলে অদম্য সাহসে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম সুজা উদ্দিন সেই অদম্য সাহসী মানুষদের একজন।

পরিবারে অভাব ছিল না, কারণ বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সুজার মনে বাসা বেঁধেছিল ভিন্ন এক তৃষ্ণা; স্বপ্ন নিজের কিছু গড়ে তোলার, উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই তো ২০২০ সালে অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।

আরো পড়ুন:

১০ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অকৃতকার্য ইবি উপাচার্য

চাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে যা জানা গেল

একজন বন্ধুর কাছে দেড় হাজার এবং এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া দেড় হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় অনলাইনে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে, আজ অরগানিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের বিশ্বস্ত মাধ্যমে রূপ নিয়েছে।

গত ৪ বছর ধরে শুধু অনলাইনেই চলেছে এই পথচলা। এরপর একদিন সাহস করে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি টেবিলে কয়েকটি পণ্য সাজিয়ে বসেন তিনি। সেই টেবিলই হয়ে উঠল তার স্বপ্নের অফলাইন রূপ। আজ সেটা সবার কাছে পরিচিত ‘সুজাস ফুড হেভেন’ নামে।

শুরুতে তার পড়াশোনা আর ব্যবসা সামলানো ছিল অনেক কঠিন। অর্ডার হাতে পেলে ক্লাস বা পরীক্ষা না থাকলে নিজেই ডেলিভারি দিতেন যশোর শহর ও ক্যাম্পাসে। অন্য জেলায় পাঠাতেন কুরিয়ারে। ধীরে ধীরে দোকানে অংশীদার ও কর্মচারী যুক্ত হয়, তাতে কিছুটা স্বস্তি আসে তার। তবে স্বপ্ন পূরণের টানে পড়াশোনার প্রতি আগের মতো সিরিয়াস হ‌ওয়া সম্ভব না হলেও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। কারণ তিনি জানতেন, ফলাফলে কিছুটা ঘাটতি হলেও স্বপ্ন পূরণের পথে অভিজ্ঞতা অর্জনই বড় সম্পদ।

বন্ধুদের সহযোগিতা তার পথচলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও পেয়েছেন প্রেরণা। ক্যাম্পাসে স্টল বসানোর সুযোগ কিংবা উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে করেছে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে আজ তিনি নিজের খরচ মেটাচ্ছেন, কর্মচারীর বেতন দিচ্ছেন এবং নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়। যদিও এখনো অর্থনৈতিক চাপ পুরোপুরি কাটেনি, তবে সুজা উদ্দিন দৃঢ় বিশ্বাসী- এই চাপই তাকে আরো শক্ত করবে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সুজা বলেন, “আমার পথচলা একেবারে সহজ ছিল না। প্রথম দিকে আমার দোকানে বসতে লজ্জা লাগত, কখনো কখনো বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখিও হয়েছি। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সবকিছু জয় করে এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি- আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। গ্রাহকদের ভালোবাসা ও সম্মান আমার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”

তার স্বপ্ন নিরাপদ খাদ্যের আউটলেট গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ইতোমধ্যে একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে তিনি মনে করেন, এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্যের সূচনা।

অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, “যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করুন। এমন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করুন, যা সম্পর্কে আপনি জানেন, ভালো সোর্স রয়েছে এবং যেটা নিয়ে কাজ করতে আপনি আনন্দ পান। এতে সময় সঠিকভাবে কাজে লাগবে, অভিজ্ঞতাও বাড়বে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সহজেই বড় পরিসরে শুরু করতে পারবেন।”

সুজা উদ্দিন হয়তো বড় ব্যবসায়ী নন, কিন্তু তার গল্প বড়। তিনি প্রমাণ করেছেন শুধু চাকরির স্বপ্ন দেখলেই জীবন বদলায় না। স্বপ্ন দেখতে হয় ভিন্নভাবে, সাহস করে শুরু করতে হয় ছোট থেকে। এটি তার সাহসের গল্প, স্বপ্নের গল্প, নিজেকে গড়ে তোলার গল্প।

‘সুজাস ফুড হেভেন’ শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি একটি প্রমাণ। চাইলে স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি লড়াই করার সাহস থাকে।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ