প্রতিযোগিতামূলক সংবাদ ব্রিফিং, ভিন্ন ভিন্ন দাবি এবং পরস্পরবিরোধী বর্ণনা। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে (৭ মে) পাকিস্তান ও পাকিস্তান–শাসিত কাশ্মীরে ভারতের হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী সম্ভাব্য যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। এর মধ্য দিয়ে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আর তা হলো তথ্য নিয়ে।

ভারতের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি দাবি আসতে শুরু করে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উভয় দেশই চায় নিজেদের পক্ষে জনমত গড়তে।

উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তান বলেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারত এখনো এ দাবির আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, তিনটি যুদ্ধবিমান ভারতশাসিত কাশ্মীরে ভূপাতিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো ভারতীয় না পাকিস্তানি, তাঁরা সেটিও নিশ্চিত করেননি।

দেখে নেওয়া যাক, দুই দেশ কী কী দাবি করেছে এবং কীভাবে অতীতেও তারা পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়ে নিজেদের বিজয়ী হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। এমন পরস্পরবিরোধী তথ্যে সত্য যাচাই করা কঠিন হয়ে ওঠে।

হামলার লক্ষ্য কী ছিল

ভারত বলেছে, তারা পেহেলগামে গত মাসে সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ৯টি জায়গায় ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। হামলায় ২৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হন। ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রমাণ দিতে বলেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে শুধু গোলাবারুদ নয়, চলছে তথ্যের যুদ্ধও—যেখানে সত্য নির্ধারণ করাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ইসলামাবাদ বলেছে, গতকাল বুধবার (মঙ্গলবার দিবাগত রাতে) ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের ছয়টি শহর ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।

পাকিস্তানের দাবি, এসব হামলায় ৩১ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে তিন বছর বয়সী এক কন্যাশিশুও রয়েছে।

তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারতীয় বাহিনী কোনো বেসামরিক নাগরিককে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, এ হামলায় ‘বড় ক্ষতি’ হয়নি এবং এটি ছিল ‘সুনির্দিষ্ট’।

নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনারা কি সাদা পতাকা তুলেছেন

পাকিস্তানের সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টে বলা হয়, ভারতীয় সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) একটি সামরিক পোস্টে সাদা পতাকা উড়িয়েছেন, যা সাধারণত আত্মসমর্পণের প্রতীক।

এক্সে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারারও একই রকম দাবি করে বলেন, ‘প্রথমে তারা তদন্ত (পেহেলগামে হামলার ঘটনায়) থেকে পালিয়েছে, এবার তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও পালিয়েছে।’

ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ চলছে না, তাই নয়াদিল্লি আত্মসমর্পণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে কেন, সেটা পরিষ্কার নয়।

যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে কয়টি, সেগুলো কার ছিল

পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভারতীয় ভূখণ্ডেই ভূপাতিত হয়েছে এবং কোনো পক্ষই অন্যের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি।

ভারত-পাকিস্তানের ৭৭ বছরের পুরোনো সংঘাতে তথ্যের নিয়ন্ত্রণ উভয় পক্ষের জন্য একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ হয়ে আছে।মাধিহা আফজাল, ওয়াশিংটন ডিসির ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক

ভারতীয় নিরাপত্তা সূত্র আল–জাজিরাকে জানায়, তিনটি যুদ্ধবিমান ভারত–নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভূপাতিত হয়েছে। তবে সেগুলো কোন দেশের ছিল, স্পষ্ট নয়।

যদিও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে চীনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার দাবিকে ‘মিথ্যা তথ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

পরস্পরবিরোধী দাবির ইতিহাস

আগেও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় একইভাবে ভিন্ন ভিন্ন দাবি ও পাল্টা অভিযোগ উঠে এসেছে, যা পর্যবেক্ষকদের বিভ্রান্ত করেছে। কারও দাবিই পুরোপুরি সত্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে।

পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান–শাসিত কাশ্মীরে ভারতের বিমান হামলা, পাল্টাপাল্টি দাবি এবং সামাজিক মাধ্যমে নানা বিবরণ—দুই দেশের এই সংঘাতে এবারও মূল অস্ত্র ‘তথ্য’।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত বলেছিল, পাকিস্তান–শাসিত কাশ্মীরের বালাকোটে জেইএম (জইশ-ই-মুহাম্মদ) এর ‘সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক, শীর্ষ নেতা ও সশস্ত্র দলের’ বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের ৪০ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন।

আরও পড়ুনভারতের হামলায় পাকিস্তানে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হলো২২ ঘণ্টা আগে

২০০০ সালে গঠিত জেইএম অনেকবারই ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে সংগঠনটির নেতা মাসুদ আজহার পাকিস্তানে অবাধে চলাফেরা করছিলেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থানের বিষয়ে জানা নেই।

ভারতের হামলার পর পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করছেন সেনাসদস্যরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ প ত ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীনভাবে চলতে মামলামুক্ত হতে তৎপর হেফাজত

হেফাজতে ইসলামের গত শনিবারের ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে তোলা নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির প্রধান লক্ষ্য মামলা থেকে মুক্তি। ইতোমধ্যে পাঁচ জেলায় ২২০ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। সরকার মামলা প্রত্যাহারে রাজি হলেও ধীরগতিতে নাখোশ হেফাজত নেতাদের ভাষ্য, মুক্তভাবে কার্যক্রম চালাতে মামলা থেকে মুক্তি জরুরি। 

হেফাজতের আবেদনে ঢাকা জেলায় ৭৩ মামলার মধ্যে ৪৬টি প্রত্যাহারযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সরকারি কমিটির যাচাই-বাছাইয়ে। বাকি ২৭ মামলার যাচাই চলছে। নেতাদের ভাষ্য, ২০১৩ ও ২০২১ সালের সহিংসতার মামলা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করত। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মামলা প্রত্যাহার না হলে, নির্বাচনের সময়ে এই মামলাগুলো চাপের কারণ হতে পারে হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারও হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে মামলাগুলো ব্যবহার করতে পারে। 

মামলা প্রত্যাহারে হেফাজত নেতারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। সরকারের তরফে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হবে। যেসব মামলায় অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করেছেন, সেগুলোতে আইনি প্রক্রিয়াতেই মুক্ত হতে হবে। হেফাজত সূত্র জানিয়েছে, এতে রাজি নন সংগঠনটির নেতারা। তারা সব মামলাই প্রত্যাহার চান। আওয়ামী লীগ আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বহুবার মামলা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেননি। 
হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী সমকালকে বলেন, ২২০ মামলা চিহ্নিত করে প্রহ্যাতারের আবেদন করা হয়েছে। এর বাইরে ৫০টির মতো মামলা রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে।  

কত মামলা
হেফাজতের সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, ঢাকার ১৮ থানায় ৭৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮২, নারায়ণগঞ্জের তিন থানায় ২৮, মুন্সীগঞ্জের দুই থানায় ১১ এবং চট্টগ্রামে ২৬টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে। 
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ আমলে দায়ের করা গায়েবি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। আসিফ নজরুলের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৮ হাজার ২৯৪ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, মামলা প্রত্যাহারে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। যাচাই-বাছাইয়ে তা পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে মামলা হয়রানিমূলক বলে চিহ্নিত হলে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। 

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের আবেদনে ঢাকায় জেলায় ৯৬৯ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে কমিটি। মামলা দেখভাল করা হেফাজত নেতা মাওলানা শরিফ হোসাইন সমকালকে জানিয়েছেন, এর মধ্যে ১৬টি মামলা হেফাজত-সংক্রান্ত। এসব মামলায় বিএনপি, জামায়াতের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছিল।
হেফাজত সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় ৭৩ মামলার মধ্যে ৪৬টির বাছাই শেষ হয়েছে। মামুনুল হক ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জের এবং ঢাকার দুটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। প্রত্যাহারের আবেদন করা ২২০ মামলার মধ্যে কমবেশি ৩০টিতে চার্জশিট হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরিফ হোসাইন। 
হেফাজত এই মামলাগুলোরও প্রত্যাহার চাইলেও কীভাবে তা হবে– এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। 

মামলা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ
নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতায় ২০১০ সালে শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজত। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে আসে হেফাজত। ওই বছরের ৫ মে ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি করে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজত নেতাকর্মীরা। দিনভর সংঘাত, সংঘর্ষের পর দিবাগত রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে শাপলা চত্বরে অভিযান চালায়। 
সরকারি হিসাবে ৫ এবং ৬ মে সারাদেশে ৫৮ জন নিহত হন। গতকাল সোমবার হেফাজতের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ৯৩। ২০১৩ সালে ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় হেফাজত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছিল। 

২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে হেফাজত মাঠে নামলে আবার সরকার দমনপীড়ন চালায়। নিহত হন অন্তত ২১ জন। সেবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে আরও শ খানেক মামলা হয়। হেফাজত নেতাকর্মী ছাড়াও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এসব মামলায় আসামি হয়ে বছরের পর বছর আদালতে চক্কর কাটছেন। 

হেফাজতের একাধিক নেতা সমকালকে বলেছেন,  ২০১৩ সালের পর এই মামলাগুলোকেই ব্যবহার করে হেফাজতের অধিকাংশ নেতাকে নিয়ন্ত্রণে এনেছিল তৎকালীন সরকার। হেফাজত নেতারা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন নিয়ে প্রায়ই সাক্ষাৎ করতেন শেখ হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে। গণভবনেও যেতেন। আহমদ শফীও গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ থেকে  শেখ হাসিনাকে  ‘কওমি জননী’ খেতাব দেয় কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলায়া। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আহমদ শফীসহ হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতারাও ছিলেন সমাবেশে। ২০১৩ সালের মামলায় পড়ে কারাগারে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে জামিনে মুক্ত সংগঠনটির অনেক নেতাই শেখ হাসিনাকে সরাসরি সমর্থন দেন  আওয়ামী লীগ আমলে। 
হেফাজতসংশ্লিষ্ট ইসলামী ঐক্যজোট ২০১৭ সালে বিএনপির সঙ্গ ছাড়ে। এর পর আর দলটির নেতাদের মামলার চাপে পড়তে হয়নি। ২০২১ সালের জুলাইয়ে বিএনপির জোট ছাড়ে হেফাজতসংশ্লিষ্ট দুই দল খেলাফত মজলিস এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। পরের এক মাসে দল দুটির অন্তত ৬০ নেতা জামিন পান। 

আবার সক্রিয়, তবে মামলা প্রহ্যাতারে জোর
আওয়ামী লীগ আমলে শত শত মামলার কারণে চাপে পড়া হেফাজত আর কখনও ২০১৩ সালের মতো সক্রিয় হতে পারেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর, নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করা সংগঠনটি সক্রিয় হয়েছে। চার দাবিতে গত শনিবার তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে। 
রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা হচ্ছে, হেফাজতের সমাবেশ হয়েছে নারী কমিশনের বিরুদ্ধে। যদিও সংগঠনটি ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ৩ মে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। নারী কমিশন প্রতিবেদন দেয় ১৯ এপ্রিল। পরের দিন হেফাজত নারী কমিশন বাতিলের দাবি যুক্ত করে। 

শনিবারের মহাসমাবেশ থেকে হেফাজত আগামী তিন মাসে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ২৩ মে বিক্ষোভ করবে। তবে মামলা প্রত্যাহারে সরকারকে দুই মাসের আলটিমেটাম দিয়েছে। সংগঠনটির নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা প্রত্যাহার হলে, হেফাজত নেতারা কেন নিষ্কৃতি পাবেন না।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘ফ্যাসিবাদের আমলের মিথ্যা মামলা তুলে নিতে নেতারা ড. ইউনূসের সঙ্গে অনেকবার সাক্ষাৎ করে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করেছেন। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি হেফাজতের মামলা প্রত্যাহার না হয়, তাহলে যা করতে হয় তাই করবে হেফাজত।’

রাজনীতির পথেও বাধা মামলা
হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলনের নেতারা হেফাজতেরও নেতা। যেমন বাংলাদেশ খেলাফতের আমির মামুনুল হক হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব।  

হেফাজতসংশ্লিষ্ট দলগুলো আগামী নির্বাচনকে সামানে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে চেষ্টা করছে। এ উদ্যোগে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও রয়েছে। যদিও  দলটির নেতারা সরাসরি হেফাজতে নেই। এই দলগুলো ঘোষণা দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনাই লক্ষ্য। নেতারা সমকালকে জানিয়েছেন, এ ঐক্যে হেফাজতও নিয়ামক শক্তি। 
একটি রাজনৈতিক দলের যুগ্ম মহাসচিব সমকালকে বলেছেন, ইসলামী দলের মোর্চা আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইছে। আদর্শিক বিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোট হলে, ইসলামপন্থিদের আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুরোনো মামলা গলার কাঁটা হতে পারে। 
এই নেতা সমকালকে বলেন, অতীতে দেখা গেছে, হেফাজত যখনই নড়াচড়া করার চেষ্টা করেছে, তখনই মামলার চাপে ফেলা হয়েছে। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, মামলা প্রত্যাহার পিছিয়ে গেলে নির্বাচনের পর নতুন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা এসব মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তাই রাজনৈতিক মামলার সঙ্গে হেফাজতের মামলাও প্রত্যাহার করা হোক।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে চাপে ফেলতে ভারতের কৌশলগত চাল এই ‘পুশইন’: রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
  • স্বাধীনভাবে চলতে মামলামুক্ত হতে তৎপর হেফাজত
  • রাজুতে ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতিটি ‘শেখ হাসিনার’, ‘জাগ্রত জুলাইয়ের’ ছয় দফা ঘোষণা
  • শাপলা চত্বরে হেফাজত নেতাকর্মীদের হত্যার বিচার চায় ছাত্রশিবির