প্রতিযোগিতামূলক সংবাদ ব্রিফিং, ভিন্ন ভিন্ন দাবি এবং পরস্পরবিরোধী বর্ণনা। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে (৭ মে) পাকিস্তান ও পাকিস্তান–শাসিত কাশ্মীরে ভারতের হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী সম্ভাব্য যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। এর মধ্য দিয়ে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আর তা হলো তথ্য নিয়ে।

ভারতের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি দাবি আসতে শুরু করে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উভয় দেশই চায় নিজেদের পক্ষে জনমত গড়তে।

উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তান বলেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারত এখনো এ দাবির আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, তিনটি যুদ্ধবিমান ভারতশাসিত কাশ্মীরে ভূপাতিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো ভারতীয় না পাকিস্তানি, তাঁরা সেটিও নিশ্চিত করেননি।

দেখে নেওয়া যাক, দুই দেশ কী কী দাবি করেছে এবং কীভাবে অতীতেও তারা পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়ে নিজেদের বিজয়ী হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। এমন পরস্পরবিরোধী তথ্যে সত্য যাচাই করা কঠিন হয়ে ওঠে।

হামলার লক্ষ্য কী ছিল

ভারত বলেছে, তারা পেহেলগামে গত মাসে সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ৯টি জায়গায় ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। হামলায় ২৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হন। ভারত এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রমাণ দিতে বলেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে শুধু গোলাবারুদ নয়, চলছে তথ্যের যুদ্ধও—যেখানে সত্য নির্ধারণ করাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ইসলামাবাদ বলেছে, গতকাল বুধবার (মঙ্গলবার দিবাগত রাতে) ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের ছয়টি শহর ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।

পাকিস্তানের দাবি, এসব হামলায় ৩১ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে তিন বছর বয়সী এক কন্যাশিশুও রয়েছে।

তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারতীয় বাহিনী কোনো বেসামরিক নাগরিককে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, এ হামলায় ‘বড় ক্ষতি’ হয়নি এবং এটি ছিল ‘সুনির্দিষ্ট’।

নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনারা কি সাদা পতাকা তুলেছেন

পাকিস্তানের সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টে বলা হয়, ভারতীয় সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) একটি সামরিক পোস্টে সাদা পতাকা উড়িয়েছেন, যা সাধারণত আত্মসমর্পণের প্রতীক।

এক্সে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারারও একই রকম দাবি করে বলেন, ‘প্রথমে তারা তদন্ত (পেহেলগামে হামলার ঘটনায়) থেকে পালিয়েছে, এবার তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও পালিয়েছে।’

ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যেহেতু দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ চলছে না, তাই নয়াদিল্লি আত্মসমর্পণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে কেন, সেটা পরিষ্কার নয়।

যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে কয়টি, সেগুলো কার ছিল

পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভারতীয় ভূখণ্ডেই ভূপাতিত হয়েছে এবং কোনো পক্ষই অন্যের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি।

ভারত-পাকিস্তানের ৭৭ বছরের পুরোনো সংঘাতে তথ্যের নিয়ন্ত্রণ উভয় পক্ষের জন্য একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ হয়ে আছে।মাধিহা আফজাল, ওয়াশিংটন ডিসির ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক

ভারতীয় নিরাপত্তা সূত্র আল–জাজিরাকে জানায়, তিনটি যুদ্ধবিমান ভারত–নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভূপাতিত হয়েছে। তবে সেগুলো কোন দেশের ছিল, স্পষ্ট নয়।

যদিও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে চীনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার দাবিকে ‘মিথ্যা তথ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

পরস্পরবিরোধী দাবির ইতিহাস

আগেও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় একইভাবে ভিন্ন ভিন্ন দাবি ও পাল্টা অভিযোগ উঠে এসেছে, যা পর্যবেক্ষকদের বিভ্রান্ত করেছে। কারও দাবিই পুরোপুরি সত্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে।

পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান–শাসিত কাশ্মীরে ভারতের বিমান হামলা, পাল্টাপাল্টি দাবি এবং সামাজিক মাধ্যমে নানা বিবরণ—দুই দেশের এই সংঘাতে এবারও মূল অস্ত্র ‘তথ্য’।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত বলেছিল, পাকিস্তান–শাসিত কাশ্মীরের বালাকোটে জেইএম (জইশ-ই-মুহাম্মদ) এর ‘সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক, শীর্ষ নেতা ও সশস্ত্র দলের’ বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের ৪০ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন।

আরও পড়ুনভারতের হামলায় পাকিস্তানে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হলো২২ ঘণ্টা আগে

২০০০ সালে গঠিত জেইএম অনেকবারই ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে সংগঠনটির নেতা মাসুদ আজহার পাকিস্তানে অবাধে চলাফেরা করছিলেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থানের বিষয়ে জানা নেই।

ভারতের হামলার পর পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করছেন সেনাসদস্যরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ প ত ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আ.লীগ ও তাদের দোসররা

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের জামিন ও তদন্তাধীন মামলা প্রত্যাহারে আবেদন শুনানিকালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা আদালতে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনটি বলেছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা।

আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ‘বিচারকাজে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। প্রশ্নের জবাব ও সূচনা বক্তব্য দেন ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল। এ সময় ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল, ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কুদ্দুস ও সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, গ্রেপ্তারের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন ও তদন্তাধীন মামলা প্রত্যাহারে আবেদন শুনানিকালে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা আদালতে অপেশাদার আচরণ করেছেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হট্টগোল সৃষ্টি করে বিচারকার্যের পরিবেশ বিঘ্নিত করেছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা।

সংবাদ সম্মেলন ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ফ্যাসিস্ট রেজিমের যাঁরা তল্পীবাহক আছেন, তাঁরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনা। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইনজীবীরা ও দেশের মানুষ মনে করছে, সেই বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিহত করার একটা ট্রায়াল (মহড়া) ছিল গত ১১ আগস্ট। অর্থাৎ শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর যিনি গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন, খায়রুল হকের জামিন চাওয়ার নামে আইনজীবীরা যাঁরা ছিলেন, প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট রেজিমের দোসর। তাঁরা সেদিন আদালতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রমাণ করার অপপ্রায়স চালিয়েছিলেন যে আদালত সঠিকভাবে কাজ করছেন না।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘খায়রুল হকের কীর্তি বা কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ জানে। তিনি আজকে আইনের আওতায় এসেছেন।…তাঁর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করি। বিচার চাই যেন ভবিষ্যতে আর নতুন কোনো খায়রুল হক এই জুডিশিয়ারি থেকে সৃষ্টি না হয়। আর জামিনের বিষয়ে অবশ্যই সবাই চাইতে পারে। কিন্তু জামিন চাওয়ার আবেদন সামনে নিয়ে আদালতের পরিবেশ নষ্ট করা, আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা—তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’

লিখিত বক্তব্যে আদালতের ভেতরে বিশৃঙ্খলাকারী আওয়ামী লীগের দোসর আইনজীবী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি দাবি জানিয়েছে ফোরাম। একই সঙ্গে আদালতের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করে সংগঠনটি।

উন্মুক্ত আদালতে বিচারপতিদের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি আদালতের প্রতি অবহেলা এবং সহকর্মী আইনজীবীদের গায়ে হাত তোলা পেশাগত অসদাচরণের শামিল উল্লেখ করে আইনজীবীদের এই অপেশাদার আচরণের বিরুদ্ধে ‘পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালা’ অনুসারে ‘ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন’ গ্রহণ করে সনদ বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রতিও দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এই সংগঠনটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আ.লীগ ও তাদের দোসররা
  • জবির ছাত্রী হলে মেডিকেল সেবা চালুর উদ্যোগ